|
|
|
|
বাহিনী-জটেই পিছোল ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে বৃহস্পতিবারও কোনও আশ্বাস দিতে পারল না রাজ্য। তার জেরেই পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ তিন দিন পিছিয়ে দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তারা আগে জানিয়েছিল, আজ, শুক্রবারের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে কমিশন জানতে চায়, হাইকোর্টের নির্দেশমতো যে পুলিশ বাহিনী প্রয়োজন, তা কোথা থেকে জোগাড় করবে রাজ্য? আগামী সোমবারের মধ্যে রাজ্যকে সেই হিসেব পেশ করতে বলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। বিশেষ করে মনোনয়ন পর্বের সময়ে পুলিশি ব্যবস্থা কী থাকবে, তা আলাদা ভাবে তৈরি করে জমা দিতে বলেন তিনি।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের হিসেব হাতে পাওয়ার পরে সোমবার প্রথম দফার ভোটের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।
নির্ধারিত সময়ে ভোট করানো নিয়ে কমিশন পুরোদমে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মীরাদেবী। এ দিনও কমিশন জানিয়েছে, সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেলে বুধবার থেকে মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে। কমিশন সূত্রে যে সম্ভাব্য সূচি পাওয়া গিয়েছে (পাশের তালিকা দেখুন) সেই অনুযায়ী, তিন দফায় মনোনয়ন-পর্ব (অর্থাৎ মনোনয়ন পেশ, তা পরীক্ষা এবং প্রত্যাহার) চলবে যথাক্রমে ১০ জুন, ১৫ জুন এবং ১৭ জুন পর্যন্ত। কমিশনের আশঙ্কা, এই সময় ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ প্রার্থীকে হয় আটকানো হবে, নয়তো বাধ্য করা হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারে। সে জন্য এই পর্বের উপরে জোর দিয়ে আলাদা করে পুলিশি বন্দোবস্তের তালিকা চেয়েছেন মীরাদেবী। তা-ও দিতে হবে সোমবারের মধ্যে। তিনি স্পষ্ট করে দেন, এই পর্বে কোনও প্রার্থী যদি ভয় বা হুমকির জন্য ভোটে দাঁড়াতে না পারেন, তা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই প্রথম পর্বের ৯ জেলায় ২১০টি ব্লকে এবং আশপাশের এলাকায় যথেষ্ট পুলিশি ব্যবস্থা নিতে হবে।
কমিশনের বক্তব্য, ব্লকগুলির গড় আয়তন ১২০-১৫০ বর্গ কিলোমিটার। ব্লক পিছু এক কোম্পানি (১০০ জন) ফোর্স চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য এক প্লাটুন (৩০ জন) দেবে বলে জানিয়েছে। উল্টো দিকে প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, এত আগে থেকে (অর্থাৎ মনোনয়ন পর্বের জন্য) ব্যাটেলিয়নের পুলিশ পাঠানো সম্ভব নয়। তা খরচ সাপেক্ষ। অথচ কমিশন এখন থেকেই বড়সড় বাহিনী নামাতে চাইছে। তাই ব্লক পিছু এক প্লাটুন পুলিশ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তার জন্য থানা এলাকাগুলিতে যে সব ক্যাম্প রয়েছে তা আপাতত গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে। ভোটপর্ব মিটে গেলে ওই ক্যাম্প আবার বসানো হবে।
এ দিন নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বৈঠক হয় কমিশন এবং রাজ্যের মধ্যে। স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন বাণীব্রত বসু (এডিজি, আইন-শৃঙ্খলা)। বৈঠকে রাজ্যের তরফে মীরাদেবীকে বলা হয়, যদি স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা নতুন করা হিসেব করা যেত, তা হলে পুলিশের সংখ্যা কিছুটা কমত। কিন্তু রাজ্যের এই প্রস্তাব খারিজ করেন মীরাদেবী। তিনি বলেন, ডিএম-এসপি’রা যে হিসেব দিয়েছেন, তা আর এখন বদলানো সম্ভব নয়। সরকারকে এখন জানাতে হবে, তারা কোথা থেকে এই বাহিনী জোগাড় করবে।
পরে মীরা পাণ্ডে বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ভোট করানোর যাবতীর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি রাজ্যের দায়িত্ব। আমি লিখিত ভাবে রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছি কোথা থেকে এই ফোর্সের বন্দোবস্ত হবে। রাজ্য আমাকে দু’তিন দিনের মধ্যে নিশ্চয়ই লিখিত ভাবে জানাবে। তার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” কিন্তু রাজ্যের যা হিসেব, তাতে তো প্রায় ৭৫০ কোম্পানি বাহিনী পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই? মীরাদেবী বলেন, “রাজ্যের লিখিত উত্তর না পাওয়া গেলে এ নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।” রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র তথা এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) বাণীব্রত বসু বলেন, “বিভিন্ন রাজ্যের কাছে পুলিশ চেয়ে চিঠি লেখা হচ্ছে। দু’তিন দিনের মধ্যে কমিশনকে ফোর্সের ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হবে। মনোনয়ন পবের্র জন্যও পৃথক পুলিশি ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
মহাকরণ সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ এবং অসমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রতিটি রাজ্য থেকে গড়ে ৩০-৩৫ কোম্পানি করে বাহিনী চাওয়া হচ্ছে (প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারের কিছু সংস্করণে শিরোনামে ‘সেনা’ শব্দটি ‘বাহিনী’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে)। পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, অসম ছাড়া বাকি যে সব রাজ্য থেকে পুলিশ চাওয়া হয়েছে, তা মূলত বিজেপিশাসিত বা আঞ্চলিক দল শাসিত রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস বা সিপিএমশাসিত রাজ্য থেকে পুলিশ নিয়ে আগ্রহী নন।
ফলে যা অবস্থা, তাতে শেষ পর্যন্ত অসম থেকেও ফোর্স আনা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।
কমিশন সূত্রে খবর, প্রথম দফায় ৯ জেলায় ভোটের জন্য শুধু বুথ এবং ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে ৫০ হাজার সশস্ত্র পুলিশ ও ২৬ হাজারের মতো কনস্টেবল লাগবে। এর বাইরে এলাকাভিত্তিক তল্লাশি চালাতে আরও কয়েক হাজার পুলিশ কর্মী প্রয়োজন হবে। কারণ, কমিশন জেলাশাসক এবং এসপি-দের দেওয়া রিপোর্ট দেখে প্রথম দফার ভোটে ৭০ শতাংশ স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে বলে রাজ্যকে জানিয়েছে। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে যে নির্দেশ দিয়েছে তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী প্রসঙ্গে কমিশনের প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য রাজ্য সরকার। |
|
|
|
|
|