প্রত্যাহারে ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা নির্দলেরই পাশে
তৃণমূলের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে রাজ্য রাজনীতিতে সাম্প্রতিক কালে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছিল বিজেপি। দল আন্দোলনমুখী হওয়ায় সদস্যসংখ্যা বাড়ছিল বলেও বিজেপি নেতৃত্ব উৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন। কয়েক মাস আগে জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচনে ১০%-এর বেশি ভোট তাঁদের পালে আরও হাওয়া এনে দিয়েছিল। হাওড়া লোকসভা উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে সে সবই এখন উধাও! বাইরে বিস্তর প্রশ্ন এবং ঘরে বেজায় ক্ষোভ সামাল দিতে জেরবার হতে হচ্ছে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে!
হাওড়ায় প্রার্থী ঘোষণা করেও লড়াই থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় জেলা বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা এতটাই ক্ষুব্ধ যে, তাঁদের একাংশ রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। তাঁদের বক্তব্য, হাওড়ায় দলের লক্ষাধিক ভোট আছে। প্রার্থী দিলে ভোট কেটে তৃণমূলকে হারননো যেত এবং তাতে দলেরই ভাল হত। হাওড়ার এক বিজেপি নেতার কথায়, “দুর্নীতি, দাম্ভিকতা এবং দলতন্ত্রের প্রশ্নে সিপিএম এবং তৃণমূলে কোনও পার্থক্য নেই। বরং, সিপিএমে অনেক বছর পর ওই বিচ্যুতিগুলি এসেছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় এসেই ওই পথে হেঁটেছে। তাই তাদের শিক্ষা দেওয়া জরুরি ছিল!”
হাওড়া জেলা নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, ২০০৬ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে বিজেপি-র ক্ষতিই হয়েছিল। তৃণমূলের কাছ থেকে যে ব্যবহার দলীয় কর্মীরা সেই সময় পেয়েছেন, তার পরে তাঁদের পক্ষে এখন আর তৃণমূলকে ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। আর কংগ্রেস বা সিপিএম-কে ভোট দিতে বলার প্রশ্নই নেই। এই অবস্থায় হাওড়া কেন্দ্রের এক নির্দল প্রার্থী রঞ্জন পালই ভরসা জেলা বিজেপি-র কর্মীদের। এখন নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিলেও রঞ্জনবাবু জেলা বিজেপি-রই সদস্য এবং ওই জেলা থেকেই বিধানসভা ভোটে অতীতে বিজেপি-র টিকিটে লড়েছিলেন। জেলা বিজেপি-র কর্মীরা এখন তলায় তলায় রঞ্জনবাবুর হয়েই সক্রিয় হয়েছেন। রঞ্জনবাবুর কথায়, “আমি ১৯৯১ এবং ’৯৬ সালে পাঁচলা বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী ছিলাম। এখন দলের সদস্য মাত্র। কোনও পদে নেই। নির্দল হিসাবে লড়ছি।” তাঁর দাবি, তৃণমূলের ‘বিক্ষুব্ধ’ অংশ এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টিরও কিছু ভোট তিনি পাবেন।
দলের নিচু তলায় এই ক্ষোভের আঁচ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বও পাচ্ছেন। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বুধবার বলেছিলেন, “হাওড়ায় কংগ্রেস এবং সিপিএম-কে ভোট দিতে বলার প্রশ্নই নেই। বিজেপি কর্মীদের বলব, কোনও রাজনৈতিক দলকেই ভোট দেওয়ার প্রয়োজন নেই।” তার ২৪ ঘণ্টা পরে দলের হাওড়া জেলা সভাপতি শ্যামল হাতিও বলেছেন, “হাওড়ায় আমরা অরাজনৈতিক জাতীয়তাবাদী প্রার্থীকে ভোট দিতে বলছি।” বিজেপি-র একাংশের ব্যাখ্যা, রাহুলবাবু ও শ্যামলবাবুর ওই বক্তব্যের অর্থ রঞ্জনবাবুকেই ভোট দিতে বলা। তাদের মতে, বিজেপি প্রার্থী না-দেওয়ায় কর্মীদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা প্রশমনেই কৌশলী অবস্থান নিতে হচ্ছে নেতৃত্বকে।
রাহুলবাবুরা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহকে উদ্ধৃত করে বলছেন, দ্রুত লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। এই সময়ে এবং রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে উপনির্বাচনে লোক ও অর্থবল ব্যয়ের প্রয়োজন নেই। এর কোনওটাকেই বিজেপি-র নিচু তলার কর্মীরা বিশেষ গ্রহণযোগ্য কারণ বলে মনে করছেন না। হাওড়া জেলারই এক নেতার বক্তব্য, “লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য দরজা খোলা রাখার বার্তা দিতেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
হাওড়া জেলা বিজেপি প্রার্থী হিসাবে সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম সুপারিশ করে পাঠালেও কেন অসীম ঘোষের নাম ঘোষণা হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে দলে। শ্যামলবাবুর কথায়, “সোমনাথবাবুর নাম কেন বাদ গেল, তা আমাদের কাছে রহস্য!” খোদ সোমনাথবাবুও বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন রাজনাথকে। বিজেপি-র কিষাণ মোর্চার সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারও রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে ই-মেল করেছেন রাজনাথকে। বিজেপি-র এ রাজ্যের নতুন পর্যবেক্ষক বরুণ গাঁধীর কাছেও ফেসবুকে অভিযোগ জানিয়েছেন সুভাষবাবু।

পুরনো খবর:


বিধিভঙ্গের নালিশ

হাওড়ার উপনির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তের কাছে নির্বাচনী বিধি ভাঙার অভিযোগ জানাল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার সুনীলবাবুর সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া, মায়া ঘোষ, দেবব্রত বসু, অজয় ঘোষ প্রমুখ। তাঁরা চিঠিতে লিখেছেন, রাজ্য সরকারের নব ঘোষিত প্রকল্পগুলির প্রশংসা করে তৃণমূল প্রচারপত্র বিলি করছে। ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর যা করা যায় না। এই প্রেক্ষিতে সুনীলবাবুর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ওই নেতারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.