|
|
|
|
কার জয়ে কার লাভ, সিপিএম দ্বিধা-সঙ্কটে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হারলে বিড়ম্বনা। জিতলেও বিপদ! হাওড়ার লোকসভা উপনির্বাচনে এ বার উভয় সঙ্কটে সিপিএম!
উপনির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, সিপিএমের অন্দরে বিভ্রান্তি তত বাড়ছে! যাতে নতুন ইন্ধন যোগ করেছে এবিপি আনন্দ-এ সি নিয়েলসেনের জনমত সমীক্ষা। সিপিএমের একাংশের অভিমত, ওই সমীক্ষা লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রয়োজনীয়তাকেই ঘুর পথে প্রমাণ করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় সিপিএমের একাংশের আশঙ্কা, হাওড়া উপনির্বাচনের ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল এবং কংগ্রেস পাছে আসন্ন লোকসভা ভোটে আবার জোটের দিকে এগোয়, সেই যাত্রা ভঙ্গ করতে দলের কর্মী-সমর্থকেরা নিজের নাকই কেটে না বসেন! দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “হারলে না হয় কথা উঠবে, এখনও মানুষের মধ্যে বামেদের প্রতি আস্থা ফেরেনি। কিন্তু এটা তো কয়েক মাসের জন্য একটা উপনির্বাচন। তার পরে পুরোদস্তুর লোকসভা ভোট। এখানে এ দিক-ও দিক হলে কংগ্রেস এবং তৃণমূল যদি ফের সমঝোতার পথে ফিরে যায়, তা হলে কয়েক মাস পরে তো আরও বড় বিপদ!” |
|
কেরামতি। নির্বাচনী প্রচারে ফুটবল তারকা তথা তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার |
চার বছর আগে লোকসভা এবং দু’বছর আগে বিধানসভা ভোটে হাওড়ায় দলের সব কর্মী নিজেদের প্রার্থীদের জেতাতে সক্রিয় ছিলেন না, এই বিশ্লেষণ দলেরই ময়না তদন্তে ধরা পড়েছিল। সিপিএমের একাংশের আশঙ্কা, এ বারের উপনির্বাচনেও একই প্রবণতার পুনরাবৃ্ত্তি না হয়ে যায়। এই অংশের আশঙ্কার ভিত্তি এই রকম: হাওড়ায় সিপিএম-ই ত্রিমুখী লড়াইয়ে জিতবে, এমন আত্মবিশ্বাস দলের সর্ব স্তরে একই রকম ভাবে নেই। নিজেরা জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত নই যখন, তখন কংগ্রেস জিতে গেলে একসঙ্গে জোড়া লাভ হয়। শাসক দল তৃণমূল ধাক্কা খায়, আবার ভবিষ্যতে জোটের রাস্তায় কাঁটাও পড়ে! এমন ভাবনাই শেষ পর্যন্ত দলের কর্মী-সমর্থকদের মাথায় চেপে না বসে, উদ্বেগ কাজ করছে দলের অন্দরে।
এমনিতে প্রার্থী হিসাবে প্রাক্তন হাওড়া জেলা সম্পাদক শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নিয়ে দলে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু বিজ্ঞান আন্দোলন থেকে উঠে-আসা, দলের তাত্ত্বিক মুখপত্রে নিয়মিত লেখক ভোটের ময়দানে কতটা উপযুক্ত, তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে দলের ভিতরে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে জেলা সিপিএমের তলে তলে কিছু ক্ষোভও আছে। এই সংশয় থেকেই দলের সব ভোট কাস্তে-হাতুড়ির বোতামেই পড়বে কি না, আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। জেলা সিপিএমের এক নেতা বলছেন, “উত্তর হাওড়া এবং বালি এলাকায় সাংগঠনিক ভাবে কত দূর কী করা যাবে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিধানসভা ভোটের পরে ওই দু’টো এলাকাতেই (যা আগে সিপিএমের নির্ভরযোগ্য ভোটব্যাঙ্ক ছিল) সংগঠন অনেকটা বসে গিয়েছিল।”
হাওড়ায় প্রচারে দলের কাদের কী ভাবে কাজে লাগানো উচিত, তা নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যেই ঈষৎ মতের ফারাক আছে। সিপিএম এবং বাম নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে দাবি করছেন, নিচু তারে বাঁধা প্রচারে ভালই সাড়া মিলছে। জেলার এক বাম নেতার কথায়, “শ্রীদীপবাবুর সঙ্গে বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রচারে গিয়ে দেখেছি, মানুষ রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল সম্পর্কে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। সারদা-কাণ্ডের প্রভাব সহজে কাটবে না!” বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুর মতো শীর্ষ সিপিএম নেতারা এর আগে হাওড়ায় দলের অন্দরে সাধারণ সভা করে পরামর্শ দিয়ে এসেছেন, আত্মসমালোচনাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রচারে গিয়ে মানুষের কথা বেশি করে শুনতে হবে। ভোটের আগে শেষ সপ্তাহে প্রচারে জোর আনতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রেরা অবশ্য হাওড়ায় যাচ্ছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সিপিএমের পরবর্তী রাজ্য কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে ৪ জুন। হাওড়ার ফল ঘোষণার ঠিক আগের দিন! হাওড়ার ফল যা-ই হোক, তা নিয়ে বেশি মাথা না-ঘামিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে ঝাঁপিয়ে পড়ার বার্তাই সেই বৈঠক থেকে দেওয়া হবে। তার আগে বুধবারই সব জেলার কিছু বাছাই নেতাকে আলিমুদ্দিনে ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে, পঞ্চায়েতের আগে যেখানে যা-ই ঘটবে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নিয়মিত তথ্য জানিয়ে তাদের উপরে চাপ রেখে যেতে হবে। রাজ্য কমিটির এক সদস্য বলছেন, “হাওড়ায় তৃণমূল ধাক্কা খেলে পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের কর্মীদের তাণ্ডব কিছুটা কমবে বলে আশা করছি।” ধাক্কা দিতে ইভিএমে বাছা হবে কাকে সিপিএমের মধ্যে ঘুরছে সেই প্রশ্নই! |
|
|
|
|
|