আসন বাড়ার ইঙ্গিত সমীক্ষায়, তবু তৃতীয় ফ্রন্টে রুচি নেই কারাটের
ছে চব্বিশ। বেড়ে হতে পারে চৌত্রিশ। তবু সংসদে এই শক্তি নিয়ে আর নতুন করে তৃতীয় ফ্রন্টের স্বপ্ন দেখতে চাইছেন না সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব। ৫ বছর আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে লোকসভা ভোটের আগে প্রকাশ কারাটই আর ওই পথ মাড়াতে চান না।
পাঁচ বছর আগে অবশ্য এই রকম বাস্তববাদী অবস্থান নিতে দেখা যায়নি সিপিএম নেতাদের। পরমাণু চুক্তিতে ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পর ‘দলিত কি বেটি’ মায়াবতীকে সামনে রেখে কেন্দ্রে তৃতীয় বিকল্প সরকার গড়ার ডাক দিয়েছিলেন কারাট। কেন্দ্রে সেই বিকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছিল। পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোটের রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার জন্য কারাটের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। তৃতীয় বিকল্প সরকার তৈরির ডাক দেওয়া ভুল হয়েছিল বলে পরে স্বীকার করেন কারাট। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই সিপিএমের কাণ্ডারীর মুখে এ বার উল্টো সুর। তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কারাট বলছেন, “এই মুহূর্তে তৃতীয় ফ্রন্ট সম্পর্কে কারও ভাবনাই স্পষ্ট নয়। জাতীয় স্তরে এই রকম বিকল্প এখনই সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে।” একেবারেই যে কেউ তৃতীয় বিকল্পের কথা বলছেন না, তা-ও কিন্তু নয়। মুলায়ম সিংহ যাদব ইতিমধ্যেই তৃতীয় ফ্রন্টের কথা বলেছেন। তাঁর পুত্র অখিলেশ যাদবও এ নিয়ে জল্পনা উস্কে দিতে চেয়েছেন। বলা বাহুল্য, সেই তৃতীয় বিকল্পে নিজেকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রাখতে চান মুলায়ম। কিন্তু সিপিএম নেতারা সেই পথে পা বাড়াতে নারাজ।
এবিপি আনন্দ ও এ সি নিয়েলসেনের জনমত সমীক্ষা বলছে, এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে বামেরা গোটা দেশে ৩৪টি আসন পেতে। এখন রয়েছে ২৪টি। সিপিএম থেকে শুরু করে বামফ্রন্টের অন্য শরিকরা মনে করছেন, এই জনমত সমীক্ষা মোটের উপরে ঠিক। এক বছর পরে নির্ধারিত সময়ে লোকসভার ভোট হলেও ছবিটা মোটামুটি একই থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জনপ্রিয়তা যতই কমুক কিংবা কেরলে সিপিএম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সরিয়ে ঘুরে দাঁড়াক, বামেরা ৩৪ থেকে ৩৫টির বেশি আসন জিততে পারবে না। সিপিএম নেতাদের বিশ্লেষণ, মাত্র এই ক’জন সাংসদ নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন সহজ কাজ নয়। কারণ, সমাজবাদী পার্টি, এডিএমকে, বিজু জনতা দল বা জেডি(ইউ)-এর মতো আঞ্চলিক দলগুলি আসলে সুযোগসন্ধানী। তারা নিজের সুবিধে মতো হয় কংগ্রেসের দিকে বা বিজেপির দিকে চলে যাবে। এই পরিস্থিতিতে বাম দলগুলিকে কংগ্রেস ও বিজেপির থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের ঘাঁটি মজবুত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে বামেরা আবার তৃতীয় বিকল্পের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো নেতার বক্তব্য, “এ হল আদর্শগত অবস্থান। কিন্তু নিজেদের ঘাঁটি মজবুত করতে হলে কৌশলগত ভাবে আমাদের কংগ্রেস সম্পর্কে নরম মনোভাব নিতে হবে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের কথা ভাবতে গেলে কংগ্রেস সম্পর্কে সুর নরম রাখা ছাড়া উপায় নেই। এমনকী নির্বাচনের পরে বিজেপি যদি সত্যিই ক্ষমতায় আসার যাওয়ার জায়গায় চলে আসে, তবে তাদের ঠেকাতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে তৃতীয় ইউপিএ সরকারকে সমর্থনের দরজা খোলা রাখাই বাঞ্ছনীয়।” সিপিএম নেতাদের যুক্তি, কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট না হলেও এ বার বামেরা বিরাট লাভ কুড়োবে, তা নয়। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জনপ্রিয়তা কমে গেলেও প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট সবটাই বামেদের ঝুলিতে এসে পড়বে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। কেরলে স্বাভাবিক নিয়মেই এক বার কংগ্রেস, এক বার বামেদের ঝুলিতে এসে ভোট পড়বে। কিন্তু তা হলেও ৩৫টি আসনের বেশি জেতা সম্ভব নয়। আর মাত্র ৩৫টি আসন নিয়ে বিকল্প সরকার গঠনের স্বপ্ন না দেখাই ভাল।
দলের আর একটি সূত্র অবশ্য বলছে, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কারাটের এটাই শেষ ইনিংস। সম্পাদক পদের একই ব্যক্তির থাকার মেয়াদ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ২০১৫ সালের পরবর্তী পার্টি কংগ্রেসে সরে যাবেন কারাট। তার আগে ফের তৃতীয় ফ্রন্টের কারিগর হতে গিয়ে আর বাড়তি ঝুঁকি নিতে চান না কারাট। আরও এক বার সংগঠনকে বৃথা চেষ্টায় নামিয়ে দলের নেতাদের আক্রমণের মুখে পড়তে চান না। তার বদলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে কেরল পার্টি, সকলের দাবিদাওয়া মেনে, মন জুগিয়েই চলতে চাইছেন তিনি। তাই আলিমুদ্দিনের দাবি মেনে ইউপিএ-কে যথাসম্ভব ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছেন তিনি। গুজরাতের পুরনো দাঙ্গার ঘটনায় নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগের দাবি করছেন। কিন্তু দুর্নীতির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মনমোহন সিংহের পদত্যাগ দাবি করছেন না।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.