ক্রমেই সমর্থন হারাচ্ছে কংগ্রেস, মোদী-প্রশ্নে উভয়সঙ্কটে বিজেপি
জই যদি লোকসভা নির্বাচন হয়, তা হলে গত কয়েক বছর ধরে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ, আর্থিক মন্দা, নীতিপঙ্গুত্বের খেসারত দিতে হতে পারে কংগ্রেসকে।
এবিপি আনন্দ-এ সি নিয়েলসেন ১৫২টি লোকসভা কেন্দ্রে যে জনমত সমীক্ষা করেছে, তার ফল বলছে, দেশ জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া প্রবল। ন’বছর ক্ষমতায় থাকার পর ইউপিএ সরকার ধীরে ধীরে পায়ের তলার মাটি খোয়াতে শুরু করেছে। সমীক্ষার মতে, এখনই ভোট হলে ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ইউপিএর ঝুলিতে যাবে মাত্র ১৩৬টি। যেখানে গত লোকসভা নির্বাচনে একা কংগ্রেসই পেয়েছিল ২০৬টি আসন। ইউপিএ-র এই ক্ষয়ের ফায়দা তুলবে এনডিএ। তাদের আসন সংখ্যা ২০০৯-এর ১১৬ থেকে বেড়ে হবে ২০৬।
অতীত অভিজ্ঞতা অবশ্য বলছে যে, জনমত সমীক্ষার ফলাফল সব সময় মেলে না। কিন্তু ভোটাররা কী ভাবছেন, তার একটা আঁচ পেতে এই ধরনের সমীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও স্বীকার করেন অনেকে। সেই দিক থেকে জনমত সমীক্ষার একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছেই।
এবিপি আনন্দ-এ সি নিয়েলসেনের সমীক্ষা যদি কংগ্রেসের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে থাকে, তা হলে বিজেপি-কেও চূড়ান্ত স্বস্তিতে রাখেনি। কারণ, সমীক্ষার হিসেব অনুযায়ী সরকার গড়তে গেলে আরও ৬৬ জন সাংসদের সমর্থন জোগাড় করতে হবে এনডিএ-কে। কাজটা সহজ নয়। বস্তুত, বিজেপি-র পক্ষে সেটা উভয়সঙ্কট। সমীক্ষাই বলছে, প্রধানমন্ত্রীর পদে নরেন্দ্র মোদীই ভোটারদের সব চেয়ে বেশি পছন্দ। ৩৬ শতাংশ মতদাতা তাঁকে চাইছেন। মোদীর থেকে অনেক পিছিয়ে থেকে ১৩ শতাংশ মানুষের সমর্থন পেয়েছে রাহুল গাঁধী।

বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন
কিন্তু, মোদীকে যদি প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হয়, তা হলে নতুন শরিক মেলার সম্ভাবনা তো কমই, এমনকী নীতীশ কুমারের মতো বহু পুরনো শরিক এনডিএ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। যদিও আজ বিজেপি-কে কিঞ্চিৎ স্বস্তি দিয়ে নীতীশ বলেছেন, “এনডিএ অটুট রয়েছে। আমাদের জোটে শরিকদের যে কোনও বিষয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। আর তাতে কোনও ক্ষতি হয় না।”
তবু, মোদীকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটে গেলে লাভ না ক্ষতি, এই অঙ্ক এখন কষতেই হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। দলের নিচু ও মাঝের তলার নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে অনেক শীর্ষ স্থানীয় নেতাও চান মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী পদে ঘোষণা করা হোক। এই অবস্থায় জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে গোয়াতে লোকসভার কৌশল রচনার জন্য বিজেপি কর্মসমিতির বৈঠকে বসছে। তার আগে আগামিকাল দিল্লিতে বসছে দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক। সেখানে মোদীও হাজির হচ্ছেন।
সমীক্ষা অনুযায়ী সরকার গড়ার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আঞ্চলিক দলগুলিই। ছোটখাটো দলগুলি এবং নির্দল মিলিয়ে পেতে পারে ১৬৭টি আসন। গত বারের তুলনায় ১০টি আসন বেশি (মোট ৩৪টি) পেয়ে বামেরাও নির্ণায়ক শক্তি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সমীক্ষা।
প্রশ্ন হল, আঞ্চলিক দল এবং বামেরা কী ভূমিকা নেবে? মুলায়ম সিংহ যাদবের মতো নেতা ইতিমধ্যেই তৃতীয় মোর্চার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন। এ নিয়ে জয়ললিতার সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তিনি। বামেরা অবশ্য এক বার তৃতীয় মোর্চা গড়ার চেষ্টায় ধাক্কা খেয়ে অনেকটাই সতর্ক। তাঁরা ভোটের পরে পরিস্থিতি বুঝে তবেই অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি জোটের কথা ভাবতে চান।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ইউপিএ ছাড়া তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একটি আঞ্চলিক জোট গড়ার কথা বলছেন। তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ আজও মমতাকে সামনে রেখে এই ধরনের জোট গড়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। অনেকেই বলছেন, মমতা, জয়ললিতা, জগন্মোহনের মতো আঞ্চলিক নেতাদের নিয়ে এবং বামেদের বাদ দিয়ে একটা চতুর্থ বিকল্প হতেই পারে। তৃণমূল মমতাকে সামনে রাখার কথা বললেও দেবগৌড়া বা নীতীশের মতো কাউকে নেতা করার সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে।
কিন্তু যাঁদের নিয়ে এই তৃতীয় বা চতুর্থ বিকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে, তাঁদের অনেককেই ভবিষ্যতে শরিক হিসেবে পেতে চায় বিজেপি। সে ক্ষেত্রে মোদীকে নিয়ে কী করা হবে, সেটাই প্রশ্ন। বিজেপি-র একাংশ চাইছেন, মোদীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার পরে জনপ্রিয় কোনও নেতাকে প্রধানমন্ত্রী পদে তুলে ধরে শরিক সংগ্রহ করা হোক। কিন্তু মোদী এই কৌশল খাটতে দেবেন কেন, তা নিয়ে দলেই বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে।
ফলে আজ, সমীক্ষার ফল দেখে উজ্জীবিত হওয়ার দিনেও প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নে সাবধানী বিজেপি। দলীয় মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “এই সমীক্ষায় একটি বিষয় স্পষ্ট, গোটা দেশে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া রয়েছে। এ বার বিজেপি কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে, সেটি উপযুক্ত সময়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অন্য দিকে, কংগ্রেস নেতারা স্বাভাবিক ভাবেই সমীক্ষার ফলকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে বলছেন, সমীক্ষার ফল সব সময় ঠিক হয় না। লোকসভা ভোট হতে এখনও এক বছর বাকি। তার মধ্যে পরিস্থিতির আরও পরিবর্তন হবে। কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপমের বক্তব্য, “সমীক্ষায় যদি কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখা হতো, তা হলেও আমরা চুপ করে বসে থাকতাম না। পিছিয়ে আছি দেখালেও জনতার মাঝে কাজ করে যাব।”

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম পছন্দ

নরেন্দ্র মোদী ৩৬%

রাহুল গাঁধী ১৩%

মনমোহন সিংহ ১২%

মায়াবতী ৯%

সনিয়া ৮%

আডবাণী ৬%

মুলায়ম ৫%

নীতীশ ৩%

সুষমা ২%


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.