ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদনে দেখানো হয়েছিল ছ’হাজার বর্গফুট। কিন্তু আদতে তা দু’হাজার বর্গফুটেরও কম।
পুরসভার লাইসেন্স বিভাগ সূত্রে খবর, দক্ষিণ কলকাতার একটি ঠিকানায় ৪৩টি সংস্থার নামে লাইসেন্স বার করেছিল সারদা গোষ্ঠী। প্রতিটি আবেদনে এতটাই বেশি জায়গা দেখিয়ে একসঙ্গে এতগুলি লাইসেন্স পেয়েছিল তারা। সারদা-কাণ্ডে নথিপত্র পরীক্ষা হতে বেরিয়ে পড়ল এমনই তথ্য। আর তার জেরে প্রশ্ন উঠল পুরসভার ভূমিকা নিয়েও। এই ঘটনা জানাজানি হতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পুরকর্মীদের একাংশের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার পুরসভার অধিবেশনে সারদা গোষ্ঠীকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, “এতগুলি ট্রেড লাইসেন্স কি নিয়ম মেনে দেওয়া হয়েছিল সারদাকে?” পুরসভার এক পদস্থ আফিসারের মন্তব্য, “যাচাই না করেই সারদার মালিকের আবেদনের ভিত্তিতে প্রতিটি ক্ষেত্রে লাইসেন্স দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর।” তাঁর মতে, “এ ভাবে ঢালাও লাইসেন্স দেওয়া বেআইনি। কাজটা ঠিক হয়নি।” |
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন না এতে বেআইনি কিছু ঘটেছে। তাঁর বক্তব্য, “ওরা প্রথা মেনে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। তার ভিত্তিতে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ তো নিয়ম-বিরুদ্ধ নয়।” তবে তাঁরই সতীর্থ, কলকাতা পুরসভার ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, “একই জায়গায় একটি কোম্পানির নামে অতগুলি লাইসেন্স দেওয়া উচিত হয়নি।”
পুরসভা সূত্রের খবর, শহর জুড়ে বিভিন্ন ঠিকানায় মোট ৬৯টি কোম্পানির নামে ট্রেড লাইসেন্স করিয়েছে সারদা। এর মধ্যে ৪৫৫ নম্বর ডায়মন্ড হারবার রোডের ঠিকানায় রয়েছে ওই ৪৩টি লাইসেন্স। বাস্তবে ওই অঞ্চলে সারদার জায়গা মাত্র দু’হাজার বর্গফুট। পুরসভার লাইসেন্স দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “আবেদন করলেই তো হল না, ওই ঠিকানায় গিয়ে সব কিছু যাচাই করে দেখা উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স অফিসারের।”
পুরসভার লাইসেন্স বিভাগ সূত্রের খবর, শুধু জমি বেচা (ডেভেলপার) বা ট্যুর-ট্রাভেল প্যাকেজ নয়, মুরগির ব্যবসা থেকে কেকের দোকান, গাড়ির যন্ত্রাংশ বেচা, ফিজিওথেরাপি কেন্দ্র-সহ বেশ কিছু ব্যবসার নামে লাইসেন্স বার করেছিল সারদা। অধিকাংশ লাইসেন্স তৃণমূল বোর্ডের আমলেই দেওয়া হয় বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
বেহালা ট্রাম ডিপোর কাছে একটি বাজারের তিনতলায় সারদা গোষ্ঠীর ওই অফিস। এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, “বছর দশেক ধরে সারদার একটি অফিস ছিল সেখানে। তবে খাতায় কলমে ওই ঠিকানায় যে ৪৩টি কোম্পানি আছে, তা টের পাইনি।” জায়গাটি পুরসভার ১২০ নম্বর ওয়ার্ডে। যা আবার বেহালা (পূর্ব) বিধানসভার অধীনে। খোদ মেয়র ওই কেন্দ্রের বিধায়ক। ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল কাউন্সিলর তথা ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ জানেনই না সেখানে সারদার ব্যবসা আছে। তিনি বলেন, “লাইসেন্স বিভাগের কাছে জানতে চাইব, এমনটা হল কেন?”
ওই এলাকার ট্রেড লাইসেন্স দেয় বরোর লাইসেন্স বিভাগ। সেখানকার ডেপুটি লাইসেন্স অফিসার সুশীল কুজুর এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। শুধু বলেছেন, “যা বলার হেড অফিসকে বলেছি।” তাঁর দফতর সূত্রে জানা গেল, বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া হতেই দিন কয়েক আগে পুলিশ গিয়ে সিল করে দেয় সারদার ওই অফিস। মেয়র জানান, সেই কাজে গাফিলতি আছে কি না, তা দেখা হবে।
এ দিকে, সেখানে সারদার ৪৩টি সংস্থার ব্যবসার কথা শুনে অবাক হন স্থানীয় এক ব্যবসায়ীও। তিনি বলেন, “জমিজমা সংক্রান্ত কাজে টাকা জমা দেওয়া-নেওয়া হত, দেখেছি। আর কোনও ব্যবসা নজরেই পড়েনি।”
|