উত্তরবঙ্গের প্রায় আড়াই লক্ষ চা-শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে পাঠাল রাজ্য সরকার। অর্থ বরাদ্দের আর্জি জানিয়ে ২০০ কোটি টাকার ওই পরিকল্পনা বুধবার মহাকরণ থেকে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের তরফে অর্থ বরাদ্দ হলে তা সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হবে চা বাগান সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের কাছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, প্রকল্পের মেয়াদ হবে তিন বছর। যে উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কংগ্রেস প্রভাবিত ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাসের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অলোক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এটা তাড়াতাড়ি হওয়া দরকার। চা শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব কেন্দ্রও নিতে হবে। কেন্দ্র দায় এড়াতে পারে না।”
প্রস্তাবে কী কী প্রকল্প রূপায়ণের কথা বলা হয়েছে? একজন সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, চা শ্রমিকদের মহল্লাগুলিতে যেখানে যেখানে আবাসনের সমস্যা জটিল, সেখানে থাকার ঘর করে দেওয়া হবে। যেখানে পানীয় জলের সমস্যা, সেই সব শ্রমিক-মহল্লায় বিশেষ ধরনের নলকূপ (রিগ বোর) বানিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিটি নলকূপ তৈরির খরচ ধরা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। শ্রমিক-মহল্লাগুলি থেকে ময়লা জল নিষ্কাশন ও আবর্জনা সাফাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। চা বাগানগুলির মধ্যে যে-সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র (মা ও শিশুদের পুষ্টি প্রকল্প) অস্থায়ী জায়গায় চলে, সেইগুলির জন্য আলাদা পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। দার্জিলিঙের পাহাড়ি এলাকায় চা বাগানগুলি থেকে মূল রাস্তায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য তৈরি করে দেওয়া হবে ছোট ছোট কংক্রিটের রাস্তা। জলপাইগুড়িতে চা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দেওয়া হবে সাইকেল।
সরকারি সূত্রের খবর, চা শ্রমিক সংগঠনের মজুরি ও অন্যান্য দৈনন্দিন চাহিদার ব্যাপারে আইন মেনে চলতে হয় মালিক পক্ষকে। কিন্তু, শ্রমিকদের কোয়ার্টার, পানীয় জল, সাফাই, নিকাশি, রাস্তাঘাটের সমস্যার সমাধানে অনেক ক্ষেত্রেই চা বাগান কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। চা বাগান এলাকায় রাস্তাঘাট তৈরি সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনেরও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দার্জিলিঙ ও জলপাইগুড়ির ২৭৮ টি চা-বাগানের শ্রমিক আবাসনগুলির অধিকাংশেই পানীয় জল, রাস্তাঘাট, বাসস্থান, ময়লা জল নিষ্কাশনের মতো নানা সমস্যা নিত্যসঙ্গী। ওই সব অসুবিধার মধ্যেই চা-বাগানগুলির শ্রমিকদের অনেকে পুরুষানুক্রমে সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন।
অথচ পশ্চিমবঙ্গের উৎপাদিত চা এখনও দেশের রফতানি বাণিজ্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সে কথা মাথায় রেখেই রাজ্যের চা-বাগিচা শ্রমিকদের কল্যাণে যে সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করতে উদ্যোগী হন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। চা-শ্রমিকদের কল্যাণে একটি সার্বিক পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে মুখ্যসচিব স্বয়ং কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের সঙ্গে কথাবার্তা চালান। এর পরেই ওই প্রকল্প তৈরি করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বস্তুত, প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে দুটি জেলার চা-শ্রমিকদের বহুদিনের ওই সব সমস্যার সমাধানের কাজে হাত দেওয়া হবে। এ জন্য টাকা দেবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত মেলার পর মুখ্যসচিব গত ২৭ এপ্রিল মহাকরণে শ্রম দফতরের শীর্ষ আধিকারিক এবং দার্জিলিঙ ও জলপাইগুড়ির জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠক করেন। দ্রুত যাতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রকল্প-রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানো যায়, সে-জন্য মুখ্যসচিবের নির্দেশে শ্রম সচিব অমল রায়চৌধুরী ১০ মে শিলিগুড়িতে দার্জিলিঙ ও জলপাইগুড়ির চা বাগানগুলির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মত নিয়ে সেদিনের বৈঠকেই দুই জেলার দুই জেলাশাসকের উপস্থিতিতে চা-শ্রমিকদের জন্য আশু কী কী উন্নয়ন প্রকল্প দেওয়া দরকার, তার খসড়া চূড়ান্ত করেন শ্রমসচিব। |