স্পিড পোস্টে আসা একটি বেনামি চিঠি। তাতেই প্রকাশ্যে এল দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বেনিয়মের অভিযোগ।
হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাচার হচ্ছে, এই অভিযোগ নিয়ে গত ১৭ মে একটি চিঠি পৌঁছয় কাটোয়া হাসপাতালের সুপারের অফিসে। প্রেরকের নামের জায়গায় লেখা ছিল ‘একজন সমাজ সচেতন নাগরিক’। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, কাটোয়া হাসপাতালের স্টোর থেকে ওষুধ পাচার করা হচ্ছে। অভিযোগকারীর দাবি, ওষুধ পাচারের সময়ে তিনি হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। এই দুষ্কর্মের পিছনে স্টোরকিপার ও হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহকারীদের মধ্যে যোগসাজশ আছে বলে তাঁর অভিযোগ। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার থেকে তদন্ত শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চিঠি পাওয়ার পরে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তাপস সরকার ও সহকারী সুপার (প্রশাসন) অনন্য ধর এ ব্যাপারে স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরেই সুপার চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিতে অনন্যবাবু ছাড়াও রয়েছেন হাসপাতালের চিকিসক সুব্রত গড়াই, মহম্মদ আমানাতুল্লা ও ডেপুটি নার্সিং সুপার প্রীতি ভট্টাচার্য। ভারপ্রাপ্ত সুপার বলেন, “ইতিমধ্যে সিসিটিভি-র ফুটেজ জোগাড় করা হয়েছে। তা তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই ফুটেজ নিয়ে তিনটি সিডি তৈরি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ছাড়াও বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, কাটোয়ার মহকুমাশাসককে ফুটেজের কপি পাঠানো হচ্ছে।
চিঠিতে করা অভিযোগ অনুযায়ী, ১০ মে বিকাল ৪টে থেকে সাড়ে ৪টের মধ্যে দু’টি সাদা রঙের বস্তায় ওষুধ পাচার করা হয়েছে। সেই সময়ে একটি ফাঁকা ভ্যান হাসপাতালের স্টোরের সামনে দাঁড়ায়। অভিযোগে বলা হয়েছে, এর পরে হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহকারী তাহেরবাবু ভ্যানে দু’টি বস্তা চাপিয়ে বেরিয়ে যান। তখন স্টোররুমে বসেছিলেন আর এক ওষুধ সরবরাহকারী অসীমবাবু ও হাসপাতালের কর্মী পার্থবাবু।
তদন্তকারী দলের এক সদস্যের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজে বস্তায় করে ওষুধ বা ওই জাতীয় কোনও জিনিস পাচার করা হচ্ছিল, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে ওই সদস্যের অভিযোগ, তদন্ত শুরু হতেই নার্সদের মুখ না খোলার জন্য ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে বলেও তাঁরা জেনেছেন।
হাসপাতালের স্টোরকিপার প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, “একটা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। ওই বস্তা দু’টিতে ভাঙাচোরা জিনিস ছিল। আমার হিসেব বা স্টকে কোনও গোলমাল নেই।” একই দাবি করেছেন হাসপাতালের কর্মী পার্থপ্রতিম দত্তও। স্টোর থেকে ভাঙাচোরা জিনিস যে বাইরে গিয়েছে, সে ব্যাপারে সুপার কিছু জানেন না বলে প্রদীপবাবু জানান।
অভিযোগকারীর দাবি, ওই সব ওষুধ শহরের নানা নার্সিংহোমে পাচার করা হচ্ছে বলে তাঁর ধারণা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েক জন ডাক্তার ও কর্মীরা অভিযোগ করেন, স্টোররুম নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আগেও শোনা গিয়েছে। কিন্তু কেউ কখনও লিখিত ভাবে তা না জানানোয় তদন্তও হয়নি। বিষয়টি অন্ধকারেই থেকে গিয়েছিল। মহকুমাশাসক আর অর্জুন হাসপাতাল সুপারের কাছে তদন্ত করে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন। কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “সরকার গরিবদের জন্য বিনা ব্যয়ে ওষুধের ব্যবস্থা করছে। সেই ওষুধ পাচার করা হচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্তেরা যাতে ছাড়া না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।” |