কারবার চলছেই
গুটখা ভেঙে মশলা-জর্দা, গোপনে পুরনো প্যাকেটও
জামা পাল্টে ফের বাজার ছেয়ে ফেলেছে গুটখা।
আইনি সংজ্ঞা বলছে, রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জর্দা মেশানো সুপুরি বা পানমশলা জাতীয় জিনিসকে বলে ‘গুটখা’। রাজ্য সরকার তা নিষিদ্ধ করতেই পানমশলা আর জর্দা আলাদা করে ফেলা হয়েছে।
এই ‘আলাদা’ মানে কিন্তু পাকাপাকি বিচ্ছেদ নয়। বরং পান-সিগারেটের দোকানে পানমশলার প্যাকেটের কাছেই সাজানো থাকছে একই ব্র্যান্ডের জর্দার প্যাকেট। দু’টি কিনে এক সঙ্গে মুখে ঢাললেই হল। দুইয়ের দাম যোগ করলেও আগের গুটখার প্যাকেটের সমান। মৌতাতও সেই এক! কোথাও-কোথাও এখনও পুরনো গুটখার প্যাকেটও পাওয়া যাচ্ছে।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছবিটা একই। অর্থাৎ কাগজে-কলমে ১ মে থেকে রাজ্যে গুটখা বা তামাক দেওয়া পানমশলা নিষিদ্ধ হলেও কাজের কাজ আসলে কিছুই হয়নি। সমীক্ষা অনুযায়ী, এ দেশে যত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন তার ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে দায়ী তামাক। পূর্বাঞ্চলে ক্যানসার আক্রান্তদের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশেরই ক্ষতি হয়েছে মুখের। দেশের বহু অঞ্চলেই কিন্তু আগেই গুটখা বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
গোয়ায় ২০০৫ সালেই গুটখা ও পানমশলা বিক্রি নিষিদ্ধ হয়েছিল। গত বছরের মধ্যে বিহার, ছত্তীসগঢ়, দিল্লি, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মিজোরাম, পঞ্জাব, রাজস্থান, সিকিম এবং কেন্দ্রশাসিত আন্দামানে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
বুধবারও আসানসোলে দেখা গেল এই দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র।
গত ১ জানুয়ারি উত্তরাখণ্ড ও ওড়িশায়, মার্চে অসমে এবং এপ্রিলের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশে গুটখা বিক্রি নিষিদ্ধ হয়েছে। রাজ্যেও সেই চেষ্টাই চলছে।
কিন্তু বুধবারও উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ, সর্বত্র শহরে-গ্রামে অবাধে বিক্রি হয়েছে নিষিদ্ধ গুটখা বা পানমশলা-জর্দার প্যাকেট। কলকাতায় হাসপাতাল ঘেঁষা দোকানে মিলছে, হাওড়া স্টেশনের বাইরেও তা-ই। বর্ধমান স্টেশন লাগোয়া পানের দোকান থেকে রানিগঞ্জের কয়লাখনি, জলপাইগুড়ির চা বাগানে কুলি লাইন থেকে ব্যারাকপুরের জুটমিল, রেলশহর খড়্গপুর থেকে পুরুলিয়ার আদ্রা— কোথাও কোনও ব্যতিক্রম নেই।
আদ্রা বাজারের বেশির ভাগ দোকানির দাবি, গুটখা বেচাকেনা যে নিষিদ্ধ, তা তাঁরা জানেনই না! পুলিশ-প্রশাসনের তরফেও এ ব্যাপারে প্রচার চালানো হয়নি। তাঁদের এক জনের কথায়, “আমাদের দিনের রোজগারের একটা বড় অংশ গুটখা বিক্রি থেকেই আসে।” দিনভর ঘন-ঘন গুটখা না খেলে যাঁদের চলে না, আদ্রার সেই রামু মুখী, হপন বাউরিরা বলেন, “গুটখা বিক্রি বন্ধ হওয়ার কথা আমরাও জানি না। তবে গুটখা না খেলে আমাদের চলবে না। চাপ এলেও লুকিয়ে চুরিয়ে বিক্রি হবেই।”
মেদিনীপুর শহরের এক পান গুমটির মালিকের কথায়, “এখন আর দোকানের সামনে গুটখার প্যাকেট ঝুলিয়ে রাখতে পারি না। ক’দিন আগে রাতে পুলিশ তল্লাশি করেছিল। একটা ব্যাগে ভরে রাখি। চেনা খদ্দের এলে দিই।” খড়্গপুরের এক যুবকের কথায়, “আগে দিনে ১৮টা মতো গুটখার প্যাকেট কিনতাম। এখন এক ডজনে নেমেছি। একেবারে বন্ধ করতে পারব না। তাই দু’টাকার প্যাকেট ৪-৫ টাকায় কিনে খাচ্ছি।”
ঠিক যে ভাবে প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধের আইন করেও তা প্রয়োগ করতে পারেনি রাজ্য সরকার, সে ভাবেই গুটখা সংক্রান্ত আইনও স্রেফ সরকারি নথিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে চিকিৎসক মহলের আশঙ্কা। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “রাস্তাঘাটে, মহাকরণ সহ অন্যান্য সরাকরি দফতরে অবাধে ধূমপান চলছে। কেউ মানে না। এই স্বাস্থ্য ভবনেই বহু কর্মীর গুটখা খাওয়ার অভ্যাস। তাঁরা পর্যন্ত স্বভাব বদলাননি, তা হলে আর অন্যত্র কী আশা করব?”
ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ইদানীং ধূমপানের চেয়েও গুটখার নেশা বেড়েছে। কারণ খরচ কম এবং যে কোনও জায়গাতেই খাওয়া যায়। যদি সরকার তা নিষিদ্ধ করতে পারে, পাঁচ-সাত বছর পরে রাজ্যে মুখের ক্যানসার অন্তত ২০ শতাংশ কমার আশা রয়েছে।” একটি ক্যানসার প্রতিষ্ঠানের তরফে শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আমাদের অনুরোধ, এর প্রয়োগের দিকটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন।” ক্যানসার গবেষক উৎপল সান্যালের কথায়, “রাজ্য যদি কড়াকড়ি করে, তা হলে ক্যানসার মানচিত্রটাই বদলে যেতে পারে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.