ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার। যে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে সেখানে বসতে পারেন ৩ হাজার। বাকিরা কোথায় বসবে! কেউ জানেন না। বরাত ভাল প্রত্যেকে আসে না। তেমনটা হলে কী করবেন সেটা ভাবতে বসলে কুমারগ্রাম ব্লকের কামাখ্যগুড়ি শহিদ ক্ষুদিরাম কলেজ কর্তৃপক্ষের কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট হয়ে যায়। শুধু শ্রেণিকক্ষের সমস্যা? নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক। মাত্র ১০ জন স্থায়ী শিক্ষক। ১৪ আংশিক সময়ের শিক্ষক এবং ৭ জন অতিথি শিক্ষক পাঠনপাঠনের দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন। সংস্কৃত, মনোবিজ্ঞান ও শরীর শিক্ষায় স্থায়ী শিক্ষক নেই। গ্রন্থাগারিক, হিসাব রক্ষক এবং বেশ কয়েক জন করণিকের পদ খালি পড়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরেই। এক জন করণিককে পাঁচ জনের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে।
তবে সমস্ত সমস্যাকে ছাপিয়ে গিয়েছে শ্রেণিকক্ষের সমস্যা। পরীক্ষার সময় বাইরে মণ্ডপ করে বসার ব্যবস্থা করতে হয় ওই কলেজে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে সাড়ে তিন হাজার পড়ুয়ার জন্য রয়েছে ২১টি শ্রেণি কক্ষ। সেখানে গাদাগাদি করে বসতে পারেন ৩ হাজার পড়ুয়া। পাঁচশো ছাত্রছাত্রীর বসার ব্যবস্থা নেই। ওই পরিস্থিতিতে পঠনপাঠনের যে সমস্যা হচ্ছে তা অস্বীকার করেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল কাদের সাফেলি বলেন, “এ সব সমস্যার কথা অস্বীকার করি কেমন করে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়িটি জানানো হয়েছে।” কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি অশ্বিণীকুমার রায় বলেন, “কোনও মতে ক্লাস করানো গেলেও পরীক্ষার সময় সমস্যা জটিল আকার নেয়। গত বছর অস্থায়ী শেড বানাতে হয়েছে। এ বছর দু’টি ক্লাস ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার পরেও প্রত্যেকের বসার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।” অভিযোগ উঠেছে, ঘরের সমস্যা মেটাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু তা আজও মেলেনি। যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ণ মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “কলেজের সমস্যা মেটাতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বরাদ্দ টাকা কেন কলেজ পায়নি খোঁজ নিয়ে দেখব।”
কেন ওই কলেজে চাপ বাড়ছে? কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, কুমারগ্রাম ব্লকে একটি মাত্র কলেজ। ওই ব্লকের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও কোচবিহার জেলার বক্সিরহাট এলাকার কিছু অংশ এবং আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকে কিছু এলাকার ছাত্রছাত্রী কলেজের উপরে নির্ভরশীল। তাই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু চাপ বেড়ে চললেও বাড়েনি ক্লাস ঘর এবং শিক্ষকের সংখ্যা। কেবলমাত্র এক জন করণিক অফিসের সমস্ত কাজ সামাল দিচ্ছেন। কলেজ পরিচালন সমিতির এক সদস্য জানান, শিক্ষক শিক্ষিকা এবং করণিকের পদ খালি পড়ে থাকলেও তা পূরণ করা হচ্ছে না। উচ্চ শিক্ষা দফতরকে সমস্যার কথা জানিয়ে লাভ হয়নি। ঘরের সমস্যার জন্য প্রতি বেঞ্চে তিন জন ছাত্রছাত্রী বসতে বাধ্য হচ্ছে। এ ভাবেই পরীক্ষা নিতে হয়। এ ছাড়া সে সময় কলেজের মাঠে মণ্ডপ তৈরি করে পরীক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করতে হয়। |