পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তা
বাড়তি সেনা নিয়ে মীরাকে দিশা দেখাতে পারলেন না নারায়ণনও
ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে রাজ্য সরকার হাইকোর্ট নির্দেশিত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে না পারলে কী করণীয়, তা জানতে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজভবনে গিয়ে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন মীরাদেবী। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে এবং রাজ্যের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রথম দফার ৯ জেলায় ভোট করাতে প্রয়োজন ১ লক্ষ ২০ হাজার পুলিশ। রাজ্যের হাতে রয়েছে ৪৫ হাজার। অর্থাৎ ঘাটতি ৭৫ হাজার। বুধবার রাত পর্যন্ত যা খবর, তাতে সরকার ভিন রাজ্য থেকে পেতে পারে ১৫০০ থেকে ২০০০ পুলিশ। প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্যপালকে মীরাদেবী জানান, ভোট তো এখন করতেই হবে। কিন্তু রাজ্য এখনও জানাতে পারছে না, কোথা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হবে। সেই আশ্বাস না পেলে কমিশনই বা কী ভাবে এগোবে? জবাবে রাজ্যপালও কিন্তু তাঁকে কোনও পথ বাতলে দিতে পারেননি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। তবে নারায়ণন জানান, হাইকোর্টের নির্দেশের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, পথ কি রাজ্য প্রশাসনেরও জানা আছে?
রাজভবনে যাওয়ার আগে মহাকরণে চিঠি পাঠান মীরাদেবী। নিরাপত্তা বাহিনী কোথা থেকে আনা হবে, সে কথাই জানতে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “কমিশনের চিঠি এসেছে। কী ভাবে বাড়তি বাহিনী জোগাড় হবে, তার হিসেব চেয়েছেন নির্বাচন কমিশনার। বৃহস্পতিবার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা হবে। সরকার তার পরিকল্পনার কথা জানাবে। তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” আজ, বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে থাকবেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় এবং এডিজি(আইন-শৃঙ্খলা) বাণীব্রত বসু।
তবে কী সেই পদক্ষেপ, তা খোলসা করতে পারেননি কোনও সরকারি কর্তা। মহাকরণের কর্তারা জানাচ্ছেন, আদালত যে ভাবে সশস্ত্র পুলিশ দিতে বলেছে, তা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। তাঁদের বক্তব্য, আসলে বিভিন্ন জেলা থেকে স্পর্শকাতর এবং অতি-স্পর্শকাতর বুথের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, তা অনেকটাই বেশি। প্রায় ৭০ শতাংশ বুথে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিএম-এসপিরা। যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনা। জেলাশাসকের রিপোর্টে সেখানে ৫৭০১টি বুথের মধ্যে স্বাভাবিক বুথ মাত্র ৬১টি। পূর্ব মেদিনীপুরের ৩৩৩৮টি বুথের মধ্যে স্বাভাবিক বুথের সংখ্যা মাত্র ৭৪টি।
এ ভাবেই অধিকাংশ জেলার বেশির ভাগ বুথকে অতি-স্পর্শকাতর বা স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। সেই হিসেব মানতে হলে প্রথম দফাতেই ৭৫ হাজার পুলিশ বাইরে থেকে আনতে হবে। তার কোনও বন্দোবস্ত এখনও নেই। হওয়া সম্ভবও নয় বলে মনে করা হচ্ছে। তা হলে উপায়? সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, বিশেষ বুথের সংখ্যা কমিয়ে সাধারণ ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়াটাই একমাত্র উপায়। শুধু তা হলেই সশস্ত্র পুলিশের চাহিদা কমবে। নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে যে ঘাটতি এখন দেখা দিয়েছে, তা-ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে।
সরকারের অন্য একটি অংশ কিন্তু জানিয়েছে, এখন আর সেই পথও নেওয়া যাবে না। তাঁদের বক্তব্য, ডিএম-এসপিদের রিপোর্টই আদালতে জমা দিয়েছে কমিশন। আদালত তা দেখেই পুলিশ দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করেছে। ফলে বিশেষ বুথের সংখ্যা কমালে তা আদালত অবমাননার সামিল হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। একই ভাবে সিভিক পুলিশ, ভিলেজ পুলিশ, হোমগার্ড-সহ কোনও ধরনের আধা পুলিশ দিয়ে ভোট করাতেও আপত্তি জানিয়েছে কমিশন।
কারণ, আদালত শুধু সশস্ত্র পুলিশ দিয়েই ভোট পরিচালনা করতে বলেছে।
২ জুলাই প্রথম দফার ভোট করতে হলে আগামিকাল অর্থাৎ শুক্রবারের মধ্যে কমিশনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। এর পরবর্তী পর্যায়ে ২৯ মে জেলাশাসকরা নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন। তার পরেই শুরু হবে মনোনয়ন পেশের প্রক্রিয়া। কমিশন এর মধ্যেই বলে রেখেছে, মনোনয়ন পেশের সময় থেকেই কমপক্ষে ৩০ হাজার সশস্ত্র পুলিশ প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ ব্লকগুলিতে এক কোম্পানি (১০০ জন) করে বাহিনী নিয়োগ করতে চাইছে কমিশন।
কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্য কোথা থেকে কত বাহিনী আনতে চাইছে, এখনও পর্যন্ত কত ব্যবস্থা করতে পেরেছে তা আজকের বৈঠকে পরিষ্কার করে বুঝে নিতে চাইবেন মীরাদেবী। রাজ্য স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা কমিয়ে দেখাতে চাইছে কি না, তা-ও কমিশন খতিয়ে দেখবে। কারণ, স্পর্শকাতর বুথ ও তার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর বিষয়টি কমিশনার নিজে দেখছেন বলেই কমিশন সূত্রে খবর।
এ দিকে, জঙ্গলমহলের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটি কমিশনকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে, জঙ্গলমহল এলাকায় স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ঠিক কত হতে পারে, তা যেন ফের ভাল করে খতিয়ে দেখা হয়। কমিশন সূত্রে খবর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা নিয়ে ধোঁয়াশা না কাটলেও প্রস্তুতি কিন্তু থেমে নেই। শনিবার ২১০ জন পর্যবেক্ষকের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে কমিশন। বুধবার কমিশনের অফিসে গিয়ে দেখা গিয়েছে নতুন ব্যাগে পর্যবেক্ষকদের জন্য নির্বাচনের নির্দেশিকা ভরা হচ্ছে। কমিশনের সচিব তাপস রায় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্রে সই করে চলেছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.