ইন্টারনেট নেই ব্লক অফিসে, পঞ্চায়েতে
দেড় মাস বন্ধ একশো দিনের কাজ
রাজনৈতিক গোলমালও নয়, টাকার অভাবও নয়। শুধু মাত্র ইন্টারনেট পরিষেবার বেহাল অবস্থার জেরে বন্ধ ১০০ দিন প্রকল্পের কাজ। কাজের তথ্য দফতরের ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত অফিসগুলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা না থাকায় হিড়বাঁধ ব্লকজুড়ে এপ্রিল মাসের গোড়া থেকে ওই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন শ্রমিকরা। তেমনি থমকে গিয়েছে ওই প্রকল্পে এলাকার সম্পদ গঠনের কাজও। অবিলম্বে কাজ চালুর দাবিতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা নিজেরাই ব্লক অফিসে গিয়ে বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। প্রশাসন অবশ্য বিকল্প প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে তাজ চালুর আশ্বাস দিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এপ্রিল মাস থেকে ই-মাস্টাররোল শুরু হয়েছে। অথাৎ, আগে ১০০ দিনের প্রকল্পে শ্রমিকরা কাজ করার পরে সুপারভাইজরের কাছে তাঁরা হাজিরা দিতেন। সেই তথ্য পঞ্চায়েতের হাত ঘুরে বেশ কিছুদিন পরে ব্লক অফিসে পৌঁছত। সেখান থেকে ওই তথ্য ওয়েবসাইটে তোলা হত। এ ক্ষেত্রে কারচুপি করার সম্ভাবনা ছিল। তাই চালু করা হয় ই-মাস্টাররোল ব্যবস্থা। এখন থেকে কোথাও কাজ হলেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে শ্রমিকদের হাজির-সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে তুলে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু হিড়বাঁধ ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েতেই ভৌগোলিক অবস্থানের জেরে ইন্টারনেট ব্যবস্থা উন্নত নয়। ওই পঞ্চায়েতগুলিতে ইন্টারনেট ব্যবস্থা নেই। ব্লক অফিসেও যে ইন্টারনেট ব্যবস্থা ছিল, তার পরিষেবাও মসৃন নয়। বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে এখন ই-মাস্টাররোল চালু হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে পঞ্চায়েতগুলি তো বটেই ব্লক অফিসেও ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। তাই ই-মাস্টাররোল চালু করতে না পারায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প কিছু দিন বন্ধ রয়েছে।” তিনি জানান, সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বিকল্প উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ই-মাস্টাররোলের কাজ চালু করার চেষ্টা চলছে।
হিড়বাঁধ, মশিয়াড়া, মলিয়ান, গোপালপুর ও বহড়ামুড়ি এই পাঁচটি পঞ্চায়েতে ১০ হাজারের বেশি দিনমজুরের জবকার্ড রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে গত বছরে প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক গড়ে ৬৮ দিন কাজ করেছিলেন। যা এই ব্লকের গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। এলাকায় হাপা, পুকুর সংস্কার থেকে রাস্তা নির্মাণ হয়েছে ওই প্রকল্পে। কিন্তু গত মাস দেড়েক ধরে সব বন্ধ রয়েছে। হিড়বাঁধের শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর ধীরেন প্রামানিক, মলিয়ান গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর অমল লোহারদের আক্ষেপ, “সারা বছর ওই প্রকল্পে কাজ মেলে না। এখন চাষের কাজও প্রায় নেই। এই পরিস্থিতিতে যে ক’দিন কাজ মিলত, তার মজুরিতে কোনওরকমে সংসার চলে যেত। কিন্তু কাজ না হওয়ায় সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।”
মলিয়ান গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর মাঝি লোহার, দোমোহানি গ্রামের দশরথ হেমব্রমদের প্রশ্ন, “সরকার তো ওই নিয়ম রাতারাতি চালু করেনি। অনেক আগেই প্রশাসন পঞ্চায়েতগুলিতে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিলে আমাদের কাজ বন্ধ হত না। এর দায় কি আমাদের, নাকি প্রশাসনের?” একই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দা তথা জেলা কংগ্রেস সম্পাদক মাধব সেনগুপ্ত। তাঁর বক্তব্য, “ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের গড়িমসির জন্যই ভুগতে হচ্ছে এলাকার গরিব মানুষদের।”
স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রমেরও অভিযোগ, “জেলা প্রশাসনের গাফিলতিতেই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে হিড়বাঁধের গরিব মানুষেরা কাজ পাচ্ছেন না।” তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সরকার বলেন, “এমনটা হওয়া উচিত নয়। খোঁজ নিয়ে দেখব।” তবে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার সুদীপ সরকার অবশ্য গড়িমসির অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “হিড়বাঁধে আমরা ভি-স্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করছি। ই-মাস্টাররোল চালুর নির্দেশ পেয়েই আমরা হিড়বাঁধে প্রযুক্তিগত সহায়তা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। সেখান থেকে অনুমতি পাওয়ার পরে টেন্ডার করতে হয়েছে। এ সব কাজেই সময় লেগেছে।” তাঁর আশ্বাস, শীঘ্রই হিড়বাঁধ ব্লক এলাকায় ১০০ দিনের কাজ শুরু করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.