তিনি বক্তৃতা দিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যও শুনলেন। কিন্তু, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় মঞ্চে উঠে যখন মাইক্রোফোন ধরলেন, ঠিক সেই সময়ই মঞ্চ ছাড়লেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। আর শুভেন্দু চলে যেতেই সভা শুনতে আসা জনতার একটা বড় অংশকেও মাঠ ছাড়তে দেখা গেল।
ছবিটা বুধবার বিকেলের। বাঁকুড়া শহরের সতীঘাট এলাকায় গন্ধেশ্বরী নদীর চরায় তৃণমূলের দলীয় সভার। তৃণমূলের অন্দরে মুকুল-শুভেন্দুর ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে এমনিতেই বিস্তর জল্পনা। সম্প্রতি জঙ্গলমহলের আর এক জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরেও দুই শীর্ষ নেতার অনুগামীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। বাঁকুড়ার সভায় শুভেন্দুর আগে চলে যাওয়া সেই জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছে। শুভেন্দু অবশ্য বলেন, “এ দিনই গড়বেতায় একটি দলীয় বৈঠক থাকায় আমাকে সভা ছেড়ে চলে আসতে হয়। তবে, মুকুলবাবুর বক্তৃতা অনেকটা শোনার পরেই বেরিয়েছি।” ঘটনা হল, মুকুলবাবু মাইক্রোফোন ধরে যখন সবে মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের নাম নিচ্ছেন, তখনই মঞ্চ ছাড়েন শুভেন্দু। |
অথচ তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার বার্তা দিতেই সম্প্রতি এক মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সভা করছেন মুকুল-শুভেন্দু। বাঁকুড়াতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বক্তৃতায় শুভেন্দু দলীয় ঐক্যের বার্তাই দিয়েছেন। বলেছেন, “আমাদের দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা তাঁর দলের শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক।” ঐক্যের ডাক দিয়ে অভিষেক বলেন, “তৃণমূলের যত শাখা সংগঠন আছে, সকলকে এক হয়ে কাজ করার শপথ নিতে হবে।” মুকুলবাবু দু’বছরে বর্তমান সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
কিন্তু মুকুলবাবু বক্তৃতা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই শুভেন্দুর মঞ্চ ছাড়াকে ঘিরে যেমন দলে ফিসফিসানি শুরু হয়েছে, তেমনই শুভেন্দুর চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সভাস্থলে ভিড় কমে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের দাবি, সভায় ভিড় হয়েছিল প্রায় ৮০ হাজার লোকের। কিন্তু, দিনের আলো পড়ার আগেই মুকুলবাবুর বক্তৃতা চলাকালীনই ভিড় প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরীর কটাক্ষ, “সারদা-কাণ্ডের পরে মানুষ তৃণমূলের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছেন। তাই মুকুলবাবুর মিথ্যাবুলি না শুনে সভা শেষের আগেই মানুষ গাড়িমুখো হয়েছেন।” যদিও জেলা তৃণমূলের কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “সভাস্থল মোটেও ফাঁকা হয়নি। তীব্র গরমের জন্য কিছু মানুষ ভিড় থেকে সরে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুনছিলেন।” |