আপন মনে গান গাইছেন এক বাউল। চোখে কালো চশমা। নাহ্, দেহতত্ত্ব কিংবা সংসারচক্র নয়। গানের প্রতিটি কলিতে সাজানো সারদা কেলেঙ্কারির কথা।
ভিড়ে ঠাসা বনগাঁ-রানাঘাট কিংবা রানাঘাট-শিয়ালদহ লোকাল। ট্রেনের কু ঝিক ঝিক আওয়াজ ঢেকে দিয়েছে মেঠো সুর
“পঞ্চাশে একশো পাব
সেই ধান্দা ছাড় মানুষ
অবশেষে তুমি পড়িবে লোকসানে
মনে মনে সঠিক বিচার কর।”
গান শেষ হতেই অনেকেই দশ-বিশ টাকার নোট গুঁজে দিলেন তাঁর হাতে। চলন্ত ট্রেনে তখন ছোটখাট জটলা। সেই জটলার মধ্যে দেখা মিলল এক সারদার এজেন্টের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই এজেন্ট জানালেন, “বাড়ি থেকে পালিয়ে বেরাচ্ছি। প্রচুর মানুষের থেকে টাকা তুলেছি। শিল্পীর গানের কথাগুলো আমারও কথা।”
|
গানওয়ালার নাম রমনীকান্ত সরকার। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার কুচিয়ামোড়া গ্রামে। খেতমজুরি ও অন্যের জমি চাষ করে পেট চলত তাঁর। ছোটবেলা থেকেই গান বাঁধতেন তিনি। সুরও দিতেন। বছর দশেক আগে চোখে অস্ত্রপ্রচার হয়েছিল বছর পয়তাল্লিশের রমনীকান্তবাবুর। তারপর থেকে চোখে প্রায় দেখতে পান না বললেই চলে। দৃষ্টিশক্তি খোওয়াবার পর গানকেই বেছে নেন বাঁচার অবলম্বন হিসেবে। প্রথাগত সঙ্গীত শিক্ষা না থাকলেও প্রকৃতি, প্রেম, ব্যথা নিয়ে একের পর এক গান লিখেছেন তিনি।
হঠাৎ সারদা নিয়ে গান বাঁধলেন কেন?
নিজের বাড়িতে বসে তিনি বললেন, “কিছুদিন ধরে যেখানেই যাচ্ছি সারদা ও চিটফান্ড নিয়ে আলোচনা শুনছি। লোভে পড়ে মানুষ সর্বশান্ত হতে বসেছে। মনে হল সচেতন করা দরকার। তাই কয়েকটা গান লিখে ফেললাম। গান শোনার পর মানুষ বলছে ভাল।”
রমনীমোহনবাবু দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসারে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট। তাতে অবশ্য কোনও হতাশা নেই। গান গেয়ে যে টাকা পাচ্ছেন তাতে কোনওমতে চলে যাচ্ছে। সারদা কেলেঙ্কারী নিয়ে বাঁধা গান শোনানোর জন্য এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাক আসছে। মানুষকে সচেতন করতে শুধু ট্রেন নয়, তিনি গান গাইছেন বিভিন্ন স্টেশনেও। কথা বলতে বলতেই সঙ্গী খমকটি নিয়ে উঠে পড়লেন রমনীবাবু। মুচকি হেসে বললেন, “আমার কোনও প্রচার চাই না। গান শুনে মানুষ যদি সচেতন হয় সেটাই বড় পাওয়া।”
গুনগুন করতে করতে বেরিয়ে পড়লেন পথে। লক্ষ্য পৌঁছাতে যে এখনও যে অনেকটা পথ বাকি। |