দিনের বেলায় বিদ্যাদান করেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের বেতনে মন ভরে না। আয় বাড়তে তাই ‘মহাবিদ্যা’-র কারবারে ঢুকে পড়েছেন মাস্টারমশাই।
মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গী তিন ছিঁচকে চোর ও এক চোর-গিন্নি। গাঁটের কড়ি খরচ করে তাদের কিনে দিয়েছেন দরজা-জানলা ভাঙার যন্ত্রপাতি। নিজের ভাড়া বাড়ির একটি ঘরকে বানিয়েছেন চোরাই মালের স্টোররুম।
সোনারপুর এলাকার বিদ্যাধরপুরের ওই পার্শ্ব-শিক্ষকের স্টোররুমে ঢুকে চোখ কপালে উঠছে পুলিশের। কী নেই সেখানে? ঘর বোঝাই হয়ে রয়েছে নামীদামি কোম্পানির ল্যাপটপ, টিভি, মোবাইল, মাইক্রোওভেন, ডিজিটাল ক্যামেরা, ডিভিডি রাইটার, সাউন্ড সিস্টেমে। রাখা আছে সেট-টপ বক্স, প্রেশার কুকার, বিছানার চাদর, এমনকী স্লেট-পেনসিলও। শাগরেদরা বিভিন্ন অঞ্চলের ঘর ঝেঁটিয়ে চুরি করে আনা জিনিসপত্রে এ ভাবেই ভরিয়ে ফেলেছে মাস্টারমশাইয়ের স্টোররুম।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত মাস্টারমশাইয়ের নাম সৌমিত্র মণ্ডল। বিদ্যাধরপুরের একটি উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলে পার্শ্ব-শিক্ষক তিনি। অবিবাহিত সুদর্শন ওই মাস্টারমশাই ছাত্রদের দিনে বিদ্যাপতির পদাবলী পড়ান। রাতে তাঁর কারবার ছিঁচকে চোরদের নিয়ে। জেরায় মাস্টারমশাই জানিয়েছেন, বখরার টাকা আধাআধি ভাগ হয়। মাস্টারমশাই অর্ধেক। চার চোর বাকি অর্ধেক। |
কী করে ধরা পড়লেন মাস্টারমশাই? পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে সোনারপুরের পূর্ব-শীতলা এলাকায় এক তরুণী-সহ তিন যুবককে ঘুরঘুর করতে দেখে ‘আরজি পার্টি’-র সদস্যদের সন্দেহ হয়। চার জনকে আটক করে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। ধৃতদের চটের থলি টানাটানি করতেই বেরিয়ে পড়ে তালা ভাঙার যন্ত্র, দেওয়াল কাটার ড্রিল মেশিন। দু’চারটে চড়-থাপ্পড় পড়তেই চুরির কথা বেরিয়ে পড়ে ধৃতদের কাছ থেকে। এর পরে চার জনকে সোনারপুর থানায় আনা হয়। তাদের কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে মাস্টারমশাইয়ের কথা। রাতেই তাদের নিয়ে মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। চোরেদের কথা মতো মাস্টারমশাইয়ের ঘরেই পাওয়া যায় চোরাই জিনিসপত্র।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মাস্টারমশাই গোসাবার কুমিরমারি এলাকার বাসিন্দা। মাস ছয়েক আগে তিনি ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ির পাশে থাকে অরূপ শেঠ ও শমিতা নামের চোর-দম্পতি। পুলিশি জেরায় সৌমিত্র জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যেই অরূপ তাঁর কাছে দামি মোবাইল বা ক্যামেরা নিয়ে আসত। কম দামে কেনার জন্য তাকে অনুরোধও করত। সৌমিত্র জানতে পারেন, তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে বেড়ায়। তাদের আরও দুই সঙ্গী আছে। সৌমিত্র পুলিশকে জানান, অরূপ তাঁকে বলে, কারবার দিব্যি চলছে। কিন্তু চোরাই মাল রাখার জায়গা নেই বলে তাদের মুশকিল হচ্ছে। নিরাপদ একটি স্টোররুম পেলে এই কারবার আরও জমিয়ে দিতে পারবে তারা।
পুলিশের দাবি, জেরায় মাস্টারমশাই জানান, সব কথা শুনে বাড়তি কিছু রোজগারের আশায় তিনিও ওই কারবারে নেমে পড়েন। জেরায় সৌমিত্র বলেন, “ভাড়া বাড়িতে আমার দু’টি ঘরের একটি ওদের ছেড়ে দিই। শর্ত ছিল, চুরির মালের বিক্রির টাকার অর্ধেক বখরা মিলবে।” চোরেদের কারবারে টাকা বিনিয়োগও করে ফেলেন মাস্টারমশাই। সেই টাকায় দরজা-জানলা ভাঙার নানা যন্ত্রপাতি কেনা হয় বলে জানিয়েছে অরূপরা। সৌমিত্র জানান, চুরির মাল বিক্রি করে তা শোধ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে চার ছিঁচকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “ধৃতদের জেরা করলে আরও চুরির ঘটনার কিনারা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।”
বুধবার মাস্টারমশাই-সহ চার ছিঁচকেকে হাজির করানো হয় বারুইপুর মহকুমা আদালতে। বিচারক তাদের পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। |