|
|
|
|
৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্কই নেই পশ্চিমে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
জেলায় মোট গ্রাম পঞ্চায়েত ২৯০টি। তার মধ্যে ৮০টি পঞ্চায়েত এলাকাতেই কোনও ব্যাঙ্ক নেই। সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্ক তো বটেই, নেই কোনও সমবায় ব্যাঙ্কও।
রাজ্য জুড়ে অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে নানাবিধ অভাব-অভিযোগের মধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ব্যাঙ্ক পরিষেবার এই চাঞ্চল্যকর ছবি সামনে এসেছে। এর ফলে, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন যে সমস্যায় পড়ছে, সে কথা মানছেন কর্তৃপক্ষও। জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার (এলডিএম) সমরেন্দ্র সন্নিগ্রাহী বলেন, “এটা ঠিক যে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্ক না থাকায় স্থানীয় মানুষের সমস্যা হয়। পরিষেবা পেতে তাঁদের অন্যত্র যেতে হয়।” তবে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই ৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্ক খোলার চেষ্টা চলছে বলে সমরেন্দ্রবাবু জানিয়েছেন।
এক সময় জেলাস্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও না কোনও ব্যাঙ্কের শাখা থাকবে। সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক হতে পারে বা সমবায় ব্যাঙ্ক। তবে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। জানা গিয়েছে, স্টেট ব্যাঙ্ক, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। কোন ব্লকের কোন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্ক নেই, তার উল্লেখ রয়েছে তালিকা। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোথায় কোথায় শাখা খুলতে ইচ্ছুক, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা জানাতেও বলা হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলি আগ্রহ না দেখালে জেলা থেকেই নির্দেশ দেওয়া হবে। জানানো হবে, কোন ব্যাঙ্ক কোথায় শাখা খুলবে।
জেলায় সব থেকে বেশি শাখা রয়েছে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের, ৬৯টি। স্টেট ব্যাঙ্কের ৬৬টি। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ৪৮টি। এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের ৩৫টি। শহরাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি ব্যাঙ্কেরই শাখা রয়েছে। একটি ব্যাঙ্কের একাধিক এটিএমও রয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চলে শাখা খোলার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ব্যাঙ্ক তেমন আগ্রহ দেখায় না। জেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত এবং সমবায় ব্যাঙ্ক মিলিয়ে ৩১টি ব্যাঙ্কের মোট ৩৮৬টি শাখা রয়েছে। ৯৫টি এটিএম রয়েছে। জেলায় প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “জেলায় ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত। তার মধ্যে ৮০টিতেই কোনও ব্যাঙ্ক নেই। জেলায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মোট শাখা রয়েছে ৩৮৬টি। পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, গ্রামাঞ্চলে শাখা খোলার অধিকাংশ ব্যাঙ্ক তেমন আগ্রহ দেখায় না।”
পরিসংখ্যান বলছে, মেদিনীপুর সদর ব্লকেই ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এখনও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছয়নি। খড়্গপুর ১, ঘাটাল, দাসপুর ২ ও দাঁতন ১ ব্লকে ৫টি করে গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্ক নেই। জেলার অন্য ব্লকেও একাধিক পঞ্চায়েত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি-সমবায় কোনও ব্যাঙ্কই গড়ে ওঠেনি। অথচ গ্রামাঞ্চলেও বহু মানুষ ব্যাঙ্কের উপর নির্ভরশীল। এমনি গ্রাহক পরিষেবা তো আছেই। তাছাড়া, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা উপভোক্তারা ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই পান। একশো দিনের কাজ প্রকল্পের মজুরিও ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মেলে। মজুরির টাকা শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পরিস্থিতি দেখে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দিতে এই জেলাতেও ‘ফিনানশিয়াল ইনক্লুশেন প্রোগ্রাম’ কর্মসূচি চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের বক্তব্য, “বিষয়টির দিকে নজর রয়েছে। এ জন্য সব ব্যাঙ্ককেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |
|
|
|
|
|