রাহুল দ্রাবিড়কে আমরা এত দিন ‘দ্য ওয়াল’ বলে জানতাম একটা কারণের জন্য। তিন নম্বরে নেমে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়-ঝাপটা সামলাত ওর চওড়া ব্যাটটাই। বিপক্ষের গোলাগুলি ‘দ্য ওয়াল’-এ এসে আটকে যেত।
এ বারের আইপিএলে আমরা অন্য এক ‘ওয়াল’-কে দেখছি। যে দেওয়াল মাঠের বাইরের যাবতীয় ঝড়-ঝাপটা সামলে দিয়ে রাজস্থান রয়্যালস দলটাকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে। |
বুধবার প্লে অফের ‘এলিমিনেটরে’ যখন দ্রাবিড়ের টিম কোটলায় ফিল্ডিং করতে নামছিল, ওদের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখেই মনে হচ্ছিল, গড়াপেটা কলঙ্ককে ওরা শুধু পিছনে ফেলে আসেনি, সেটাকে মুছে ফেলার জন্য যেন বাড়তি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি নিশ্চিত, টিমের মধ্যে এই স্পিরিটটা আমদানি করেছে অধিনায়ক দ্রাবিড়ই। ডারেন স্যামিকে মারা ব্র্যাড হজের পরপর দু’টো ছক্কায় যখন ম্যাচ শেষ হচ্ছে, টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল দ্রাবিড়ের মুখটা। মুষ্টিবদ্ধ একটা হাত, মুখে চাপা হুঙ্কার। এ দ্রাবিড় যেন আমার কাছেও অচেনা। এ দ্রাবিড় যেন গত কয়েক দিন ধরে চলা সব রকম কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে মূর্তিমান প্রতিবাদ।
গত দু’বছর ধরে খুব সামান্য একটা পুঁজি হাতে নিয়ে আইপিএলে লড়াই চালাচ্ছে দ্রাবিড়। কিন্তু সেই পুঁজি নিয়েই কী অসামান্য লড়াই। এই লড়াইয়ে দ্রাবিড়ের বিদেশি ট্রাম্প কার্ড কিন্তু দুটোই। ওয়াটসন আর হজ। ওয়াটসনকে মিডল অর্ডারে খেলাচ্ছে, হজকে ফিনিশার। এ দিন যেমন করল।
সানরাইজার্সকে ১৩২ রানে আটকে দেওয়ার পর একটা সময় আমার মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা রাজস্থান সহজে জিতে যাবে। ওপেন করতে এসে স্টেইনকে দুটো বাউন্ডারি মেরে দ্রাবিড় (১০ বলে ১২) শুরুটাও ভাল করেছিল। কিন্তু তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেল। একটা সময় তো ওদের চার ওভারে চার উইকেট পড়ে যায়। কিন্তু তখনও আমি রাজস্থানের উপরে আশা হারাইনি। |
আসলে এত অল্প রান তাড়া করতে নামলে একটা পার্টনারশিপই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। বা এক জন ব্যাটসম্যান। এ দিন যেমন সেই কাজটা করে গেল হজ (২৯ বলে ৫৪ ন.আ.)।
অনেকেই হয়তো ভুরু কুঁচকে ছিলেন, হজের মতো ব্যাটসম্যানকে সাত নম্বরে নামতে দেখে। আসলে এটাই ছিল দ্রাবিড়ের মাস্টারস্ট্রোক। হজকে ফিনিশার হিসাবে ব্যবহার করা। ঠিক যে কাজের দায়িত্বটা হজের উপর ছিল, সেটাই ও করে গেল। আস্কিং রেট যখন আটের উপর চলে গিয়েছে, সানরাইজার্সের দুই স্পিনারকে আক্রমণ করল। করণ শর্মার এক ওভারে দুটো ছয়, একটা চার মারল। পরের ওভারে অমিত মিশ্রকে আরও একটা ছয়। ম্যাচটা ওখানেই রাজস্থানের দিকে ঢলে পড়ে। শেষ ওভারে দশ রান বাকি থাকলেও বোলিংয়ে স্টেইন ছিল না। কিন্তু ব্যাট হাতে হজ ছিল। স্যামির প্রথম দু’টো ডেলিভারিকেই গ্যালারিতে উড়িয়ে দিয়ে রাজস্থানকে ইডেনে নিয়ে এল হজ।
একটু ভুল বললাম। হজ খেলল বাইশ গজে। কিন্তু বাইশ গজের বাইরে যে ‘ব্যাটিং’টা করে চলেছে দ্রাবিড়, এটা তারই ফসল। তাই ব্যাটে রান না পেলেও আমার কাছে নায়ক এক জনই।
রাহুল শরদ দ্রাবিড়।
|