প্রশ্ন: আপনার কি দেখে হতাশ লাগছে? দশ বছর আগে আপনার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া রিপোর্ট আজকের দিনে যে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলল। অপরাধীরা যে জাঁকিয়ে আবার ফেরত এল, সেটা নিশ্চয়ই সে দিনকার তদন্তকারী অফিসারের কাছে চূড়ান্ত নিরাশার?
মাধবন: আমি তিরিশ বছর পুলিশ অফিসার ছিলাম। কখনও দেখিনি বা শুনিনি যে, কোনও অপরাধ মানবজীবন থেকে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে বলে। আজ থেকে দু’হাজার-তিন হাজার বছর আগেও অপরাধ করলে তার শাস্তি হত। তাতে কি অপরাধ সর্ম্পূণ উবে গিয়েছে? পৃথিবীর নিয়মই তাই। খুন-খারাপি যেমন থাকবে, সাইকেল চুরিও তেমন থাকবে। কেউ যদি বলে, অমুক কেসটা আমি এমন সমাধান করে ফেলেছি যে, অপরাধটাই বাকি জীবনের জন্য সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে, তা হলে সে সত্যিকারের পুলিশ অফিসারই নয়। অপরাধের ধর্মই হল তা ফেরত আসে। ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংও তাই। একে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় নামিয়ে আনা যেতে পারে। কিন্তু চিরতরে অদৃশ্য করে দেওয়া সম্ভব নয়।
প্র: অর্থাৎ মাত্রা কমানো যেতে পারে, কিন্তু একেবারে উচ্ছেদ সম্ভব নয়?
মাধবন: নয়। নানান ব্যবস্থা নিয়ে স্বল্পকালীন ভিত্তিতে কমিয়ে রাখা যায়, এই পর্যন্ত।
প্র: দিল্লির বাড়িতে বসে টিভি দেখার সময় কোনও ম্যাচ নিয়ে কি আপনার সন্দেহ হয়েছে?
মাধবন: সন্দেহ হয়নি। তবে কথাবার্তা তো কানেই আসে। সন্দেহ যেমন হয়নি, তেমনই কোনও কিছু হলে আশ্চর্য হব না, সে ট্রেনিংটাও আমার রয়েছে। পুলিশ অফিসারের ট্রেনিং বোধহয় এ রকমই।
প্র: হতাশ না হলেও ক্রিকেটের এই অবস্থা দেখে দুঃখ পেয়েছেন নিশ্চয়ই। যেখানে আইপিএল-কে এফএম শো-র অ্যাঙ্কর বলছেন, ‘চোর বাজার লিগ’।
মাধবন: দুঃখ তো হচ্ছেই। কিন্তু কী করা যাবে, এগুলো সবই আধুনিক সমাজের অংশ। খোদ রাজধানীতে একটা মেয়েকে ছ’জন ধর্ষণ করছে। এটা যেমন সত্যি মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই, তেমনই আইপিএল ফিক্সিংটাও সত্যি মেনে নিতে হবে।
প্র: আপনার রিপোর্টে প্লেয়ারদের নজরদারি সম্পর্কে কিছু সুপারিশ ছিল। সেগুলো মানা হলে কি আজকের অবস্থা হত বলে মনে হয়?
মাধবন: এখন ঠিক কী কী নিষেধাজ্ঞা আছে, জানি না। তবে এটা মনেই হচ্ছে যে, বোর্ড কর্তাদের ভবিষ্যতে আরও স্মার্ট হতে হবে। কারণ, অপরাধীরাও নিত্য নতুন ভাবে তাদের পদ্ধতি বদলাচ্ছে।
প্র: ক্রিকেটের এই হাল দেখে যেমন গেল গেল রব উঠেছে, তেমনই আর একটা তত্ত্বও রয়েছে। তা হল, আধুনিক সমাজে চার দিকে যখন এত দুর্নীতি, তখন নিছক সাদা পোশাক পরে ক্রিকেটাররা খেলে বলে তাদের দুর্নীতিতে এত গেল গেল রব উঠবে কেন?
মাধবন: এই থিওরিটার সঙ্গে আমি একমত। আমার চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতায় সাধু থেকে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত দুর্নীতিপরায়ণ হতে দেখেছি। কাজেই ক্রিকেটার হলে সে দুর্নীতিপরায়ণ হবে না, ভাবাটাই ভুল।
প্র: সব মিলিয়ে তা হলে আপনি বিস্মিত নন?
মাধবন: বললাম তো, আমি হয়তো ভাবিনি এতগুলো কঙ্কাল বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু একই সঙ্গে এই মনোভাবটাকেও ত্যাগ করিনি যে, কিছু ঘটলেও ঘটতে পারে। বললাম না, পুলিশ অফিসার সব সময় তার ভাবার ধরনটা অন্য রকম।
প্র: ক্রিকেট বোর্ড যদি আপনাকে ফের ডাকে? ফের তদন্তের ভার হাতে তুলে দেয়, রাজি হবেন?
মাধবন: ওরা আমায় ডাকলে ভেবে দেখতেই পারি।
|