তিন বছর আগে বিশেষ কোনও ধারণা ছিল না কলকাতার ফুটবল সম্পর্কে। কিন্তু ফেলে আসা ৩৬ মাসে ট্রেভর জেমস মর্গ্যান ছুঁতে পেরেছেন শহরের ফুটবল জনতার হৃদয়। তাঁর শেষ ডার্বির আগের সকালে ক্লাব তাঁবুতে বসে ইস্টবেঙ্গল কোচ একান্তে কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।
প্রশ্ন: বুধবারই কি ইস্টবেঙ্গল দলকে শেষ অনুশীলন করালেন?
মর্গ্যান: এই মরসুমের মতো শেষ তো বটেই।
প্র: ধোঁয়াশা না বাড়িয়ে বলুন, ইস্টবেঙ্গলের আপনার কোচিং জীবন কি শেষ?
মর্গ্যান: ২৬ মে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। এর বেশি কিছু বলব না।
প্র: ২০০৯-এ মোহনবাগানের কাছে পাঁচ গোল খাওয়া। তার পর ২০১০ মরসুমেই ইস্টবেঙ্গলে আপনার প্রবেশ। ডামাডোলের সময়টা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
মর্গ্যান: চ্যালেঞ্জ ছিলই। কিন্তু কাজটা কখনই কঠিন মনে হয়নি।
প্র: পেন আপনার ‘ফ্রি ম্যান’। এই তত্ত্বটা একটু খোলসা করবেন?
মর্গ্যান: অস্ট্রেলিয়ায় সোরেন্তোতে অ্যাডাম হেটনকে দুই ফরোয়ার্ডের পিছন থেকে খেলাতাম। মজা করে ওকে বলতাম ‘ফ্রি ম্যান’। যে গোটা মাঠ জুড়ে খেলে। পেনকে ইস্টবেঙ্গলে ‘ফ্রি ম্যান’ বানিয়ে ভারতে আমার কোচিং জীবনের সেরা মুহূর্ত পেয়েছি। |
প্র: সেই মুহূর্তটা কী ?
মর্গ্যান: কটকে ২০১০-এ ফেডারেশন কাপ জেতা।
প্র: তারিখটা মনে আছে?
মর্গ্যান: অফকোর্স। ২ অক্টোবর।
প্র: দিনটা এ দেশের ক্যালেন্ডারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মর্গ্যান: ইয়েস, ইয়েস। মহাত্মা গাঁধির বার্থ ডে। তাঁর জন্মদিনেই ভারতে আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। ‘গাঁধি’ ছবিটাও দেখেছি। বেন কিংসলে অসাধারণ।
প্র: আপনি কি গাঁধিগিরিতে বিশ্বাসী?
মর্গ্যান: প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ওঁর লড়াইটা বিরাট অনুপ্রেরণা। তবে মাঠে নেমে জয় চাই যে কোনও মূল্যে।
প্র: ভারতে দুঃখজনক মুহূর্ত?
মর্গ্যান: সেটাও প্রথম বছরেই। সালগাওকরের কাছে ২-০ এগিয়ে থেকেও ২-৩ হার। হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল আই লিগ। না হলে সে বারই হয়ে যায়...।
প্র: এক বারও আই লিগ ছুতে না পারার যন্ত্রণাটা কতটা তাড়া করে?
মর্গ্যান: না। সে জন্য কখনই ভেঙে পড়িনি। তবে হতাশা বেড়েছে।
প্র: সালগাওকরের তখনকার কোচ করিম বৃহস্পতিবার ফের প্রতিপক্ষ। যদিও মোহন-ইস্ট ম্যাচে করিম-মর্গ্যান লড়াইয়ে আপনি অপরাজিত।
মর্গ্যান: ও ভাবে বলবেন না। ফুটবলে কখন কী হয় কে বলতে পারে?
প্র: আর ওডাফা? বাগানের ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’।
মর্গ্যান: ভাল ফুটবলার সন্দেহ নেই। কিন্তু ভারতে দেখা আমার সেরা দুই বিদেশি র্যান্টি আর বেটো। আর ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’? মোহনবাগান বৃহস্পতিবার একা ওডাফাকে নামাবে নাকি? ম্যাচটাই তো তা হলে ভেস্তে যেতে পারে (বলেই অট্টহাসি)।
প্র: ডার্বি ভেস্তে যাওয়ার কথা যখন এলই, তখন জানতে চাইছি, ভবিষ্যতে কখনও আত্মজীবনী লিখলে ৯ ডিসেম্বর, ২০১২-র ডার্বি নিয়ে কোনও পরিচ্ছদ রাখবেন নিশ্চয়ই?
মর্গ্যান: আমি কোনও দিনই আত্মজীবনী লিখব না।
প্র: ইস্টবেঙ্গলে আপনার সেরা মরসুম কোনটা?
মর্গ্যান: এ বারের মরসুমটাই। এএফসিতে ইস্টবেঙ্গল দুর্দান্ত খেলেছে। চাইব দলটা আরও উপরের দিকে যাক।
প্র: সঞ্জু প্রধানের মতো কেউ আপনার জন্যই ক্লাব ছাড়তে চেয়ে সংবাদমাধ্যমকে বিবৃতি দিলে কেমন লাগে?
মর্গ্যান: কোনও দিন বিশ্বাস করব না সঞ্জু এ রকম বলতে পারে। সংবাদমাধ্যম তো কত কিছুই লেখে।
প্র: আপনার সঙ্গে কয়েক জন ক্লাব কর্তার সম্পর্কের টানাপোড়েনও নাকি আপনার ‘বাড়ি ফিরে যাওয়া’র একটা কারণ?
মর্গ্যান: কোচ-কর্তার মধ্যে মতের অমিল বিশ্বের সর্বত্র হয়ে থাকে। পরে দু’পক্ষের আলোচনায় সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু নিজে হঠকারিতা করিনি।
প্র: তার মানে আপনি এত দিন আপোস করে ছিলেন?
মর্গ্যান: কখনই না। এক জন কোচকে সব কিছু সামলেই চলতে হয়।
প্র: ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ডেফিনেশন তা হলে কী?
মর্গ্যান: একটা ফুটবল পাগল লোক, যে সততা, দায়বদ্ধতায় বিশ্বাসী। আর মানুষের পাশে থাকতে ভালবাসে। |