টোলগে ওজবের আজ অগ্নিপরীক্ষা!
কলকাতা লিগ ডার্বির গনগনে আগুনের মধ্যে অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারকে অন্য একটা পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। মোহনবাগানে পরের মরসুমে টিঁকে থাকার পরীক্ষা!
বুধবার অনুশীলনের পর গাড়িতে ওঠার মুখে টোলগে হয়তো সে জন্যই বলে দিলেন, “আমাকে এই ম্যাচে গোল করতেই হবে। যেভাবে হোক, যেমন করে হোক।”
সবুজ-মেরুন তাঁবুতে গুঞ্জন, মরসুমের শেষ ডার্বিতে ভাল পারফরম্যান্স না-করতে পারলে পরের মরসুমে ক্লাবের টাকার অভাব দেখিয়ে চুক্তি ভেঙে ছেঁটে ফেলা হবে টোলগেকে। সে কথা হয়তো কানে গিয়েছে দেড় কোটির অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারেরও। তাই মোহন-ইস্ট মহারণের আগের দিন অনুশীলনে টোলগেকে একটু যেন দিশাহারা দেখাচ্ছিল। ম্যান ম্যানেজমেন্টে দক্ষ মোহন-কোচের তা চোখ এড়ায়নি। সম্ভবত সে জন্য অনুশীলন শুরুর আগে দেখা গেল, স্বয়ং করিম বেঞ্চারিফা আলাদা করে উদ্দীপ্ত করছেন টোলগেকে। যেখানে কিনা আগের ডার্বিতেই করিম বনাম টোলগের ঝামেলা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বাগান ড্রেসিংরুম। সেই শিল্ড সেমিফাইনালে ওডাফাকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে গিয়ে টাইব্রেকারের প্রথম শট টোলগেকে মারতে দেননি বাগানের মরক্কান কোচ।
এহেন করিমের ‘পেপ-টকে’ও কি উদ্দীপ্ত হলেন টোলগে? |
লাল-হলুদ থেকে ঝকঝকে টোলগে বাগানে নাম লেখানোর পর মরসুমটা তাঁর একেবারেই ভাল যায়নি। এক দিকে পারফরম্যান্স-গ্রাফ নীচের দিকে নেমেছে। অন্য দিকে বারবার চোট তাঁকে ভুগিয়েছে। এ মরসুমে মোহনবাগান ৪৭টা ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে টোলগে ৩৩টি ম্যাচে নামলেও তার অনেকগুলোতেই পুরো সময় খেলেননি। গোটা মরসুমে গোল করেছেন মাত্র ১৭টি। গুরত্বপূর্ণ ম্যাচে তাঁর গোলের সংখ্যা তো আরওই কম। তা হলে টোলগেকে মোটা টাকা দিয়ে পরের মরসুমে রাখা হবে কেন, প্রশ্ন তুলছেন বাগানেরই একাধিক কর্তা। ওডাফার এ মরসুমে ৩৬টি ম্যাচে সাতটি হ্যাটট্রিক-সহ ৩৭টি গোল রয়েছে। ওডাফার পাশে টোলগের পরিসংখ্যান ফেলে তাই বাগান কর্তারা হতাশ।
স্বভাবতই বৃহস্পতিবারের বড় ম্যাচে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রবল চাপ ঘিরে ধরেছে টোলগেকে। অনুশীলনেও সেই ছবি বারবার ধরা পড়েছে। মুখে আগের সেই ঝকঝকে হাসিটা নেই। শুটিং অনুশীলনে অবশ্য তাঁকে একের পর এক বল জালে পাঠাতে দেখা গেল। এই ম্যাচ নিয়ে তিনি যে যথেষ্ট চাপে টোলগে স্বীকারও করছেন। “চাপ কাটাতে এ দিনের বাকি সময়টা বাড়িতে শুধু ডিভিডিতে সিনেমা দেখব। রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ব। অনেকক্ষণ ঘুমোতে হবে। চেষ্টা করব মনকে হালকা রাখতে,” অকপট বৃহস্পতিবারের সবুজ-মেরুন আত্রমণে ওডাফার সঙ্গী টোলগে। টোলগের এই ‘খারাপ’ সময়ে বান্ধবী শেরাপ-ও তাঁকে নানা ভাবে উদ্বুদ্ধ করছেন। যতটা পারছেন ফুটবলের বাইরের বিষয় টোলগের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। “শেরাপ চায় না আমার উপর কোনও চাপ তৈরি হোক। তাই আমরা দু’জনে ফুটবল নিয়েই খুব কম আলোচন করছি,” বলছিলেন টোলগে। বাগান-অনুশীলনে অবশ্য এ দিন ওডাফার মতো টোলগের পিছনেও দেখা গেল উপস্থিত সমর্থকদের দৌড়োদৌড়ি করতে। একমাত্র ওই সময়ই টোলগের মুখে যেন কিছুটা স্বস্তি ফুটল। বললেন, “সমর্থকদের ভালবাসাই তো ভাল পারফরম্যান্স করতে অনুপ্রেরণা দেয়। দেখা যাক কী হয়।” |