সম্পাদকীয় ২...
অল্প লইয়া থাকি
বাঙালির প্রত্যাশা আজও ঈশ্বর পাটনীর অধিক নহে। বঙ্গভূমির নামে একটি সাগর মানচিত্রে আছে বটে, কিন্তু উহা মানচিত্রেই থাকুক, বাঙালির পুকুর ভাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির মুখ্যমন্ত্রী। তাঁহার মুখ্যমন্ত্রিত্বের দুই বৎসর পার করিয়া তিনি যে খসড়া শিল্পনীতিটি প্রকাশ করিলেন, তাহার ছত্রে-ছত্রে তালপুকুরবন্দনা। শিল্পায়নের প্রক্রিয়াটি বাঙালির অজানা। মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পনীতি সেই অজানা পথকে সযত্নে পরিহার করিয়াছে। তিনি জানাইয়াছেন, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্পই এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ হইবে। জমি দিতেও বাঙালির ভয়। মুখ্যমন্ত্রী যে কোনও অবস্থাতেই জমি লইবেন না, শিল্পনীতি সেই জানা কথার পুনরাবৃত্তি করিয়াছে। এই শিল্পনীতি বড় জোর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দুধ-ভাতটুকু জোগাইতে পারিবে, তাহার বেশি নহে। বাঙালি সন্তুষ্ট। ভূমায় সুখ নাই, ক্ষুদ্রই সুন্দর।
‘আমার যাহা নাই, তাহা আমি চাহি না বলিয়াই নাই’— এই সান্ত্বনার মার নাই। বাঙালি এই মোক্ষমে মন্ত্রে নিজেকে দীক্ষিত করিয়াছে। শিল্পনীতি ঘোষণা করিয়া মুখ্যমন্ত্রীও কার্যত তাহাই বলিলেন। কোটি কোটি টাকা ঢালিয়া যে শিল্প হয়, পশ্চিমবঙ্গ তাহাকে বাদ রাখিয়া গ্রামীণ হাট, গ্রামীণ শিল্পের মাধ্যমেই সমগ্র বিশ্বকে জয় করিয়া লইতে পারিবে বলিয়া তাঁহার দৃঢ়প্রত্যয়। মুখ্যমন্ত্রী চাহেন না বলিয়া এই রাজ্যে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ নাই, না কি তাহা নাই বলিয়াই মুখ্যমন্ত্রী চাহেন না— কোনও শিলাদিত্য চৌধুরী বা তানিয়া ভরদ্বাজ তাঁহাকে এই কূটপ্রশ্নটি করেন নাই। তবে রাজ্যবাসী জানেন, গত দশকের মাঝামাঝি দুইটি বৎসর ব্যতীত বিনিয়োগকারীরা কখনও পশ্চিমবঙ্গকে তাঁহাদের পছন্দের তালিকায় স্থান দেন নাই। ভবিষ্যতে দিবেন, মুখ্যমন্ত্রী তাহারও কোনও উপায় রাখিতেছেন না। অতএব জ্যাম জেলি আচারের অব্যর্থ মলম বাঙালির ওষ্ঠাগ্রে অক্ষয় হউক।
পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অর্থশাস্ত্রের পাঠ্যপুস্তক পড়িয়াছেন, তিনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে, বৃহৎ শিল্পের সহিত ক্ষুদ্র শিল্পের সম্পর্কটি ‘বনাম’ নহে, ‘এবং’। তবে অর্থশাস্ত্র জানিলেই যে তাহাকে রাজনীতির উপরে স্থান দিতে হইবে, এমন দিব্য কে কবে দিয়াছে? আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁহার পারিষদগণ যাহা বলিতেছেন, অসীম দাশগুপ্ত ক্ষুদ্রশিল্প-নির্ভর ‘বিকল্প অর্থনীতি’-র প্রশংসায় বছরের পর বছর বাজেট বক্তৃতায় কার্যত তাহাই বলিতেন— অর্থশাস্ত্রের কাণ্ডজ্ঞানকে শিকেয় তুলিয়া রাখিতে এম আই টি-ফেরত অর্থনীতিবিদের কিছুমাত্র বাধিত না। দুই রঙের বামপন্থীরাই স্বীকার করেন নাই যে, বৃহৎ শিল্পের সহিত যুক্ত না হইতে পারিলে ক্ষুদ্র শিল্পের ভবিষ্যৎও ক্ষুদ্র। সিঙ্গুরে মোটরগাড়ির কারখানা হইলে অনুসারী শিল্পগুলি যে ভাবে বাড়িত, এবং গোটা রাজ্যে তাহার যে প্রভাব পড়িত, তাহার সহিত বর্তমানের ছবিটির তুলনা করিলেই কথাটির সত্যতা বোঝা যাইবে। কিন্তু তাহা বৃহতের উপাখ্যান। বাঙালির এই ক্ষুদ্রনীতিই ভাল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.