|
|
|
|
|
|
|
পণ্য পরিবহণে আয়কর |
পণ্য পরিবহণে আয়কর
ব্যবসা ছোট হলে করও বেশি দিতে হবে না এমন অনায়াসে ব্যবসার
স্টিয়ারিং সামলান। আর আয়করের চক্কর নিয়ে দুশ্চিন্তা? আপনার জন্য
আয় আন্দাজ করে কর হিসাবের ব্যবস্থা আছে তো!
বললেন নারায়ণ জৈন |
|
লরি বা ম্যাটাডোরের ঘেরাটোপে বন্দি হয়ে প্রতিনিয়ত ঠিকানা বদলায় নানা রকম পণ্য। যত বেশি পণ্য এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পৌঁছয়, তত বেশি আয় হয় ওই সব যানবাহনের মালিকের। আর আয় একটি নির্দিষ্ট সীমা পেরোলেই করের হকদার হয় সরকার। তখন আয়কর রিটার্ন জমা না-দেওয়া বেআইনি। তবে কারও হাতে যদি ১০টির বেশি মালপত্র পরিবহণের গাড়ি না-থাকে, তা হলে আয়কর আইন অনুযায়ী তাঁর ব্যবসা ছোটখাটো মাপের বলেই ধরা হয়। তখন ৪৪এ ই ধারায় আনুমানিক আয় ধরে নিয়ে তার উপর কর হিসাব করার সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে তুলনায় কম চাপ পড়ে পণ্য পরিবহণের এই ছোট ব্যবসায়ীদের উপর। এই পর্বে তুলে ধরব এই ধারারই খুঁটিনাটি।
যাঁদের জন্য আইন
আগেই বললাম, আয়কর আইনের ৪৪এ ই নম্বর ধারায় ‘প্রিজামটিভ ট্যাক্স স্কিম’-এর সুবিধা পাবেন সেই সমস্ত করদাতা, যাঁদের মালিকানায় ১০টির বেশি পণ্য পরিবহণের গাড়ি নেই। এ ছাড়া, এই ধরনের পণ্যবাহী যান চালানো, ভাড়া বা লিজ দেওয়ার ব্যবসা যাঁরা করেন, তাঁরাও এর আওতায় পড়বেন।
এখানে পণ্য পরিবহণের গাড়ি বলতে বোঝাচ্ছে লরি, ট্রেলর, ম্যাটাডোর এবং এই ধরনের ছোট-বড় পণ্যবাহী বিভিন্ন যান। আমাদের চারপাশে এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা এই ব্যবসা করেন, কিন্তু প্রিজামটিভ ট্যাক্স স্কিম সম্পর্কে অথৈ জলে। অথচ আমার ধারণা, আয়কর দেওয়ার এমন এক ঝক্কিহীন, সহজ-সরল ব্যবস্থা আছে জানলে তাঁরা বেশ খুশি মনেই রিটার্ন জমা দিতে উদ্যোগী হবেন।
আয়ের হিসাব
এ বার বলি, পণ্যবাহী গাড়ির এই যে আনুমানিক আয় ধরা হয়, সেটা কোন ক্ষেত্রে ঠিক কত হবে। অর্থাত্ ঠিক কতটা টাকা আয় ধরে গাড়ির মালিক বা ব্যবসায়ী কর দেবেন কেন্দ্রীয় আয়কর দফতরকে।
• প্রতিটি ভারী গাড়ির জন্য মাসে বা মাসের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৫,০০০ টাকা। একটি অর্থবর্ষের মধ্যে যত মাস ওই গাড়ি সংশ্লিষ্ট করদাতার মালিকানায় থাকবে, তত মাস পর্যন্তই। মনে রাখবেন, একটি ফাঁকা পণ্যবাহী যানের ওজন যদি ১২ হাজার কিলোগ্রাম পেরিয়ে যায়, তবে সেটিকে ভারী গাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। • অন্যান্য গাড়ির ক্ষেত্রেও একটি অর্থবর্ষের যত মাস মালিকানা থাকবে, তত মাস পর্যন্ত আনুমানিক আয় ধরা হবে। মাসে বা মাসের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার পরিমাণ ৪,৫০০ টাকা।
তবে...
• যে কোনও ধরনের গাড়ির ক্ষেত্রেই করদাতারা যদি রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়ে উপরে উল্লেখ করা আয়ের থেকে বেশি দেখান, তা হলে সেই বর্ধিত আয়ই ধরা হবে কর হিসাবের জন্য।
• চাইলে করদাতা অবশ্য উপরে উল্লিখিত আয়ের থেকে কমও দেখাতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে কিন্তু কতকগুলি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এ বার সেটাই বলছি।
|
|
খরচের হিসাব ধরা হবে না
অনুমানের ভিত্তিতে যখন পণ্যবাহী গাড়ির আয় হিসাব করা হবে, তখন তা থেকে বিমা, ডিজেল, চালকের বেতন, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও ওই ধরনের কোনও খরচই আলাদা করে বাদ দেওয়া হবে না। তবে...
আয়কর আইনের ৪০(বি) ধারা অনুযায়ী, অংশীদারি সংস্থা (পার্টনারশিপ ফার্ম) হলে অংশীদারের বেতন বা পারিশ্রমিক এবং মূলধনের যে-অংশের উপর তাঁকে সুদ দিতে হয় (কিছু শর্ত ও ঊর্ধ্বসীমা অবশ্য রয়েছে), সেই অঙ্ক ওই আনুমানিক আয় থেকে বাদ দেওয়া যাবে।
যোগ হবে না যন্ত্রাংশ বেচে আয়
পুরনো টায়ার বা গাড়ির অন্যান্য যন্ত্রাংশ বিক্রি করে করদাতা যে-টাকা পাবেন, আনুমানিক আয়ের সঙ্গে সেটি যোগ হবে না। কারণ ধরে নেওয়া হয়, যে-কোনও সূত্র থেকে পণ্যবাহী গাড়ির আয় তার মধ্যে ধরাই আছে। এমনকী খরচও আগেই তার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আনুমানিক আয় ব্যবস্থায় যেহেতু সত্যি যে-টাকা হাতে আসছে ও খরচ হচ্ছে, তার যোগ-বিয়োগ করে মুনাফা বার করা যায় না, তাই গাড়ির যন্ত্রাংশ বেচে পাওয়া টাকাও তার মধ্যে ধরার প্রশ্ন ওঠে না।
হিসাব খতিয়ে দেখা হবে না
পণ্য পরিবহণের ছোট ব্যবসায়ী, যাঁরা আনুমানিক আয়ের ভিত্তিতে কর দিতে চান, তাঁদের হিসাবপত্র ৪৪এবি ধারায় আয়কর অডিট করাতে হবে না। এমনকী ৪৪এএ ধারা অনুযায়ী তাঁদের বুক অফ অ্যাকাউন্ট বা হিসাবের খাতা না রাখলেও চলবে।
তবে...
যদি কেউ ৪৪এ ই অনুযায়ী ধরা আনুমানিক আয় বা মুনাফার থেকে রোজগার কম বলে দাবি করেন, তাঁকে ৪৪এএ ধারায় বুক অফ অ্যাকাউন্ট রাখতে হবে। ওই অ্যাকাউন্ট আয়কর অডিট করাতে হবে। এবং নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে অডিট রিপোর্ট জমাও দিতে হবে।
শর্ত না-মানলে যা হবে
যদি কোনও করদাতা নিজের আয় কম দেখান অথচ বুক অফ অ্যাকাউন্ট না-রাখেন কিংবা আয়কর অডিট না- করান, তবে আয়কর আধিকারিক তাঁকে ৪৪ এ ই অনুযায়ী নির্দিষ্ট আয়ের ভিত্তিতে কর দিতে নির্দেশ দিতে পারেন। তবে এর জন্য ২৭১বি ধারা মাফিক জরিমানা ধার্য করতে পারেন না আয়কর আধিকারিক।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি, মাল পরিবহণের ক্ষেত্রে আয়কর হিসাবের এই ব্যবস্থার আওতায় আনা হোক বাস-সহ যাত্রী পরিবহণের অন্যান্য যানবাহনকেও। তা হলে করদাতার সংখ্যা বাড়বে। আখেরে লাভ হবে সরকারেরই।
|
লেখক আইনজীবী ও কর সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ |
|
|
|
|
|