|
|
|
|
|
|
|
লগ্নির সাধারণ জ্ঞান |
সঞ্চয়ের বুক অফ নলেজ
চাকরির ইন্টারভিউয়ের আগে সাধারণ জ্ঞানের মোটা বই টেনে পড়তে বসেন।
তা হলে ঘাম ঝরিয়ে রোজগারের টাকা রাখার আগে অন্তত প্রাথমিক
বিষয়গুলো ঝালিয়ে নেবেন না কেন? বললেন অমিতাভ গুহ সরকার |
|
চাকরির
জন্য অনেক সময়েই সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা দিতে হয়। যাতে দেখা হয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রার্থীর চোখ-কান কতটা খোলা আছে। শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, যে-কোনও ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্যই সাধারণ জ্ঞান অত্যন্ত জরুরি। লগ্নিও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। তাই সফল সঞ্চয়-কৌশল তৈরির জন্য লগ্নি সংক্রান্ত সাধারণ জ্ঞান একান্ত জরুরি। তা কম থাকার কারণেই না সারদার মতো সংস্থা অত সহজে অসংখ্য মানুষকে ঠকাতে পেরেছে। তাই আজ আমাদের চেষ্টা হবে লগ্নির বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কী কী জানা উচিত, তা এক বার মনে করিয়ে দেওয়া।
ডাকঘর ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প
• কোনও প্রকল্প হয়তো করযোগ্য। অথচ উত্সমূলে কর কাটা (টিডিএস) হয় না। তার মানে এই নয় যে, তা করমুক্ত। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে একমাত্র পিপিএফের সুদই পুরোপুরি করমুক্ত।
• পিপিএফ অ্যাকাউন্টের প্রাথমিক মেয়াদ ১৫ বছর। মেয়াদ শেষে আবেদন করলে, ৫ বছর করে তা বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
• জাতীয় সঞ্চয়পত্রের (এনএসসি) উপর প্রাপ্য সুদ (শেষ বছর বাদে) ওই প্রকল্পে পুনর্বিনিয়োগ হিসাবে ধরা হয়। তার উপর পাওয়া যেতে পারে ৮০সি ধারায় কর ছাড়ের সুবিধা।
• ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে এখন আর আগের মতো বোনাস পাওয়া যায় না।
ব্যাঙ্ক
• সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপর বছরে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ (সব সেভিংস অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে) করমুক্ত। সুদ তার বেশি হলে রিটার্নে দেখাতে হয় এবং তার উপর কর দিতে হয়।
• সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ কষা হয় দৈনিক ব্যালান্সের উপর। এই কারণে হাতে কোনও চেক আসা মাত্র তা জমা করলে সুদ বাবদ লোকসান হয় না। লাভ হয় সুদ ও ডিভিডেন্ড ইসিএসের মাধ্যমে সংগ্রহ করলেও।
• সেভিংস অ্যাকাউন্টে একটি ন্যূনতম অঙ্ক সব সময় জমা রাখতে হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ন্যূনতম জমা কম হলেও বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাঙ্কগুলিতে এই জমার পরিমাণ ৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ত্রৈমাসিক জমার গড় পরিমাণ ন্যূনতম জমার থেকে কম হলে চড়া মাসুল দিতে হতে পারে।
• ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমা জামিন রেখে জমার ৭৫-৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যেতে পারে। ঋণের উপর সুদ সাধারণত জমার উপর প্রাপ্য সুদের তুলনায় ২% বেশি হয়। জমার মেয়াদ ফুরোতে যদি খুব বেশি সময় বাকি না-থাকে, তবে প্রয়োজনে জমা না ভাঙিয়ে ঋণ নিলে লাভ হতে পারে।
• সেভিংস অ্যাকাউন্ট একটি মেয়াদের মধ্যে (সাধারণত ২ বছর) ব্যবহার না-করলে তাকে চালু খাতা থেকে সরিয়ে ‘ইনঅপারেটিভ’ খাতায় পাঠনো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আবেদন করে তাকে আবার চালু খাতায় আনার ব্যবস্থা করতে হয়। এই ঝক্কি এড়াতে বছরে দু’একটি লেনদেন করলে ভাল হয়।
• সাধারণত এটিএম থেকে অ্যাকাউন্ট পিছু এক বারে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা যায়। অন্য ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে মাসে পাঁচ বার পর্যন্ত তুললে মাসুল দিতে হয় না।
• ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে কেওয়াইসি (নো ইওর কাস্টমার) দাখিল করতে হয়। মূলত দিতে হয় ছবি, প্যান কার্ডের কপি এবং ঠিকানার প্রমাণ (যেমন, ফোন অথবা ইলেকট্রিসিটি বিল অথবা ভোটার আইডি কার্ড কিংবা রেশন কার্ড)। |
|
মিউচুয়াল ফান্ড
• ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ বাড়লে বাজারে নথিবদ্ধ ঋণপত্র/সরকারি-বেসরকারি বন্ডের দাম কমে। উল্টোটা হয় ব্যাঙ্ক-সুদ কমলে। একই ভাবে ন্যাভ কমে অথবা বাড়ে ঋণপত্র নির্ভর মিউচুয়াল ইউনিটের।
• মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড প্রাপকের হাতে করমুক্ত থাকে। ডিভিডেন্ড দেওয়া হলে কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ন্যাভ কমে যায়।
• ইক্যুইটি ফান্ড এক বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করে লাভ হলে, তার উপর কোনও কর দিতে হয় না।
বন্ড
বাজার থেকে বন্ড এবং ডিবেঞ্চার প্রিমিয়াম অথবা ডিসকাউন্টে কেনা হলেও মেয়াদ শেষে কিন্তু ফেরত পাওয়া যায় ফেস ভ্যালু অনুযায়ী মূল্য। যেমন ১০০ টাকার কোনও বন্ড যদি ১০৫ টাকায় বাজার থেকে কেনা হয়, তবে ভাঙানোর সময়ে ফেরত পাওয়া যাবে কিন্তু ১০০ টাকা। মেয়াদ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাবে ১০০ টাকার উপর, ১০৫ টাকার উপর নয়।
শেয়ার
বাজারে নথিবদ্ধ কোনও শেয়ার কেনার পর এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে রেখে বিক্রি করে কোনও লাভ হলে, তা দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভের মর্যাদা পায়। তার উপর কোনও কর দিতে হয় না।
• শেয়ার বিক্রি করে স্বল্পকালীন মূলধনী লাভ হলে, তার উপর কর ধার্য হয় ১৫ শতাংশ হারে।
• শেয়ারের উপর প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড প্রাপকের হাতে পুরোপুরি করমুক্ত।
• নথিবদ্ধ শেয়ার ডিম্যাট করা না-হলে, বাজারে বিক্রি করা যায় না।
• বাজার থেকে যে-কোনও সংস্থার মাত্র একটি থেকে শুরু করে যে-কোনও সংখ্যায় শেয়ার কেনা যেতে পারে।
• ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে নমিনেশন বাধ্যতামূলক।
সোনা
• বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়লে সোনার দাম বাড়ে। অর্থনীতির ভাল অবস্থায় সাধারণত তা কমে। তখন বাড়ে শেয়ারের দাম।
|
|
আয়কর
• উত্সমূলে কোনও আয় থেকে কর না-কাটার মানে এই নয় যে, সেই আয় করমুক্ত। মাত্র কয়েকটি সূত্র থেকে আয় এখন করমুক্ত।
• পেনশন বেতনের মতোই করযোগ্য। নিয়ম সাপেক্ষে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটির উপর কোনও কর দিতে হয় না।
• বয়স ৬০ পেরোলে এক জন প্রবীণ নাগরিকের মর্যাদা পান এবং করের ব্যাপারে কিছু অতিরিক্ত ছাড় পান। বয়স ৮০ পেরোলে, তিনি হন ‘সুপার সিনিয়র সিটিজেন’। এঁরা পান আরও কিছু সুবিধা।
• আয় থেকে উত্সমূলে যদি ১০% কর কেটে নেওয়া হয়, তবে আপনার করের দায় মিটে গেল এমনটি নাও হতে পারে। আপনি যদি ২০ বা ৩০ শতাংশ করের আওতায় পড়েন, তবে বাকি কর আলাদা করে দিতে হবে।
• ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে করের রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন হল সাধারণত ৩১ জুলাই। ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষ থেকে যাঁদের আয় ৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়েছে, তাঁদের বাধ্যতামূলক ভাবে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
• ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমায় বাত্সরিক সুদ ১০,০০০ টাকা ছাড়ালে উত্সমূলে তা থেকে ১০ শতাংশ কর বাবদ কেটে সরকারের ঘরে জমা করা হয়। কোম্পানি জমার ক্ষেত্রে কর কাটা হয় বাত্সরিক সুদ ৫০০০ টাকা ছাড়ালে।
• আপনার আয় থেকে কে কত কর কেটে নিল, তা দেখা যেতে পারে আয়কর দফতরের ওয়েবসাইটে দেখানো ফর্ম ২৬ এ এস থেকে। কোনও কর কেটে নেওয়া হয়েছে অথচ দেখানো না-হয়ে থাকলে, যোগাযোগ করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক বা কর কেটে নেওয়া সংস্থার সঙ্গে।
• করযোগ্য আয় থাকলে ফর্ম ১৫জি অথবা ১৫এইচ আইনত দাখিল করা যায় না।
• আগাম কর জমা দেওয়ার শেষ দিনগুলি হল ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৫ ডিসেম্বর এবং ১৫ মার্চ। স্বনির্ভর মানুষ এবং যে-সব চাকরিজীবীর বেতন ছাড়াও বিভিন্ন সূত্র থেকে করযোগ্য আয় আছে, তাঁদের আগাম কর দিতে হতে পারে।
বিবিধ
• ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার পর মাসিক স্টেটমেন্টে দেখানো ন্যূনতম অঙ্ক সময়ের মধ্যে পরিশোধ না-করলে চড়া হারে সুদ ছাড়াও দিতে হতে হয় লেট ফি অর্থাত্ জরিমানা।
• ক্রেডিট রেটিং কোনও লগ্নিপত্র সম্পর্কে গ্যারান্টি নয়, সুরক্ষার মান সম্পর্কে ইঙ্গিত মাত্র।
• কোম্পানি জমা প্রকল্প সাধারণত জামিনবিহীন হয়। অর্থাত্ খাতায়-কলমে সুরক্ষিত নয়।
• একটি সংস্থা সৃষ্টি হয় রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ-এর (আর ও সি) দফতরে নথিবদ্ধ হয়ে। কোনও কোম্পানি নথিবদ্ধ হতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং শেয়ার বাজারে। এই সব নথিভুক্তির মানে এই নয় যে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলির জনসাধারণের প্রতি দায় সরকার, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অথবা স্টক এক্সচেঞ্জ কিংবা সেবি নিচ্ছে।
• স্বাস্থ্যবিমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রিনিউ করা অবশ্যই প্রয়োজন। সময়মতো রিনিউ করা না- হলে নতুন করে পলিসি নিতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে করাতে হতে পারে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা।
|
লেখক: ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|