|
|
|
|
|
|
|
সোনার ভবিষ্যত্
সোনার দাম কমেছে। ভারতে, বিশ্বের বাজারেও। অনেকেই মনে করছেন
সোনা কেনার এটাই সুবর্ণ সুযোগ।
সত্যি? আসুন উত্তর খুঁজি। গয়না তো আছেই।
জেনে নিই, তা ছাড়াও সোনা কেনার অন্য রাস্তা।
পরামর্শ দিচ্ছেন অরিন্দম সাহা |
|
সোনার দাম এই কিছুদিন আগেও ঘোরাফেরা করছিল ৩২-৩৩ হাজারে। সেখান থেকে প্রায় হুড়মুড়িয়ে তা নেমে এসেছে ২৬ হাজারে। গয়নার সোনা আরও কম, ২৫ হাজারে। যা দেখে বোস গিন্নি আহ্লাদে আটখানা। পড়িমরি ছুটছেন মেয়ের বিয়ের গয়না গড়াতে। দাসবাবুর চক্ষু চড়কগাছ। কারণ, কোনও দিন সোনার দর এত দ্রুত এতখানি পড়তে দেখেননি তিনি। মুখুজ্জেবাবুর আবার রক্তচাপ বাড়ছে। হবে না-ই বা কেন? রোজগারের বাড়তি টাকাটা ব্যাঙ্কে না-রেখে যে সোনাতেই লগ্নি করেছিলেন তিনি। এই ভরসায় যে, আর যা-ই হোক না কেন, সোনার দর অন্তত তেমন নামবে না।
বাজারে তাই এখন তিনটে জিজ্ঞাসা
(১) দাম কি আরও নামবে? না কি সোনা কেনার এটাই সেরা মওকা?
(২) সকলেই বলেন, মাঝেমধ্যে দাম পড়তে পারে বটে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে টাকা রাখার জন্য সোনা অন্যতম নিরাপদ বাজি। কেন? এই যে এ বার দাম নামল, তার পরেও কি কথাটা একই রকম সত্যি?
(৩) সোনা বলতেই প্রথম যে জিনিসটা মাথায় আসে, তা অবশ্যই গয়না। তবে সোনা যখন সঞ্চয়ের হাতিয়ার, তখনও কি শুধু গয়নাই কিনব আমরা? না কি, আরও পথ আছে ওই দামি ধাতুতে লগ্নির?
কোষ্ঠী বিচার
গোড়াতেই স্বীকার করি, এক কথায় প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অসম্ভব। কারণ, এ বিষয়ে কোনও কিছু একেবারে নিশ্চিত ভাবে বলা শক্ত। তবে মনে রাখবেন, ভারতে যত সোনা বিক্রি হয়, তার সিংহভাগই কিন্তু আমদানি করা। তাই আগামী দিনে তার দর কোন পথে হাঁটবে, সেই আঁচ পেতে তিনটি বিষয়ে নজর রাখুন
• বিশ্ব বাজারের দাম।
• টাকার সাপেক্ষে ডলারের দর।
• দেশ তথা সারা বিশ্বে শেয়ার বাজারের উত্থান-পতন।
সম্প্রতি আবার সোনার আমদানি কমাতে কোমর বেঁধে নেমেছে কেন্দ্র আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। শীর্ষ ব্যাঙ্ক যেমন নির্দেশিকাই জারি করেছে যে, রফতানির গয়না তৈরি ছাড়া অন্য কোনও কারণে সোনা আমদানি করতে পারবে না বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। আগামী দিনে এর প্রভাবও কিন্তু পড়তে পারে এ দেশে সোনার দামের উপর।
সোনায় কেন?
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এই তো দামে প্রায় ধস নেমেছে। তা এর পরেও সোনায় লগ্নি করব কোন আক্কেলে? আমার উত্তর হল, ছুটকো-ছাটকা এর দর কমতে পারে ঠিকই। কিন্তু সঞ্চয়ের মাঠে সোনা সব সময়েই লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। দীর্ঘ মেয়াদে সোনার দাম কমেছে, এমন নজির অন্তত এখনও পর্যন্ত নেই। পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝবেন, শুধু গত ১০ বছরেই এর দাম বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ।
তবু সন্দেহ যখন জেগেইছে, তখন উত্তরটাও একটু খোলসা করে দেওয়া যাক। সাজিয়ে ফেলা যাক সোনায় লগ্নির পক্ষে যুক্তিগুলো
(১) লম্বা দৌড়ের ঘোড়া
রাতারাতি সোনার দামে তীব্র উথাল-পাথাল সাধারণত হয় না। স্বল্প মেয়াদে দর নামলেও, তা দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ঠকার সম্ভাবনা কম। সঙ্গের সারণি দেখুন। ১৯২৫ সালে প্রতি ১০ গ্রামের দাম ছিল ১৮.৭৫ টাকা। আর ২০১২-তে তা ৩২ হাজার। দৌড়টা দেখেছেন? তার মানে এক জন একটা লম্বা সময় ধরে সোনায় লগ্নি করে গেলে, যে-রিটার্ন ঘরে তুলবেন, তা অবিশ্বাস্য!
(২) লগ্নির নিরাপত্তা
কেউ যদি এমএমটিসি (সরকারের লাইসেন্স প্রাপ্ত আমদানিকারী), এমসিএক্স (মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ), ন্যাশনাল স্পট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (এনএসইএল), স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সোনায় লগ্নি করেন, তা হলে তা যথেষ্ট সুরক্ষিত। কারণ এদের জন্য স্পষ্ট আইন আছে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার। এই তালিকায় রয়েছে ফিউচার ও অপশন লেনদেনের নিয়ন্ত্রক এফএমসি (ফরওয়ার্ড মার্কেট কমিশন), শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এরা সকলেই লগ্নিকারীর স্বার্থরক্ষায় কড়া নজর রাখে।
|
|
(৩) নিরাপদ বিকল্প
যাঁরা ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের বাইরে দু’পয়সা বাড়তি রিটার্নের আশায় টাকা রাখেন, তাঁদের জায়গা মূলত তিনটি। সোনা, শেয়ার বাজার ও ডলার। তাই অর্থনীতির যখন টালমাটাল দশা, তখন সোনার কদর সাধারণত তুঙ্গে থাকে।
২০০৮ সালে লেম্যান ব্রাদার্সের পতনের পর বিশ্বজোড়া মন্দার সময়ে সোনার দাম কী হারে বেড়েছে, তা এক বার খেয়াল করুন। আসলে অর্থনীতি বেহাল হলে, শেয়ার কিংবা মুদ্রার (ডলার) বাজার থেকে কমতে থাকে লগ্নি। তা দ্রুত সরে আসে সোনার দিকে। তাই অর্থনীতির দুর্দিনে কিন্তু সোনার পরিচিতি লগ্নির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবেই। এমনকী সরকারি বন্ডের থেকেও তখন সোনার উপর বেশি আস্থা রাখে লগ্নিকারী সংস্থাগুলি।
তার মানে এই নয় যে, অর্থনীতির হাল ফেরা মানেই আপনার কপাল পুড়ল। তখন আগের উচ্চতা থেকে দর কিছুটা নামতে পারে ঠিকই। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা আপনাকে ডোবাবে না। অনেকেই মনে করেন, শেয়ার কিংবা ডলারের তুলনায় লগ্নির ঝুঁকিও সোনায় বেশ খানিকটা কম।
(৪) সোনালি সুযোগ
যাঁরা ইতিমধ্যেই সোনায় লগ্নি করেছেন, তাঁদের ঘাম ছুটছে দর নামায়। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, এমন কোনও কিছু কি আছে, যার দর কখনও কমবে না? লাগাতার বেড়েই চলবে? বোধহয় না।
তা ছাড়া, দর যদি কখনও না-কমে, তা হলে সেখানে টাকা ঢালার সুযোগ আপনি পাবেন কী করে?
মনে করে দেখুন, শেয়ার বাজার যখন বেশ কিছুটা পড়ে, তখন দাম কমে অনেক ব্লু-চিপ শেয়ারেরও। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু তখন বলেন, ওই সব শেয়ার কেনার ওটাই সুযোগ।
একই যুক্তি খাটে সোনার ক্ষেত্রেও। দাম যখন একটু কমবে, তখন কিনতে পারলে তবেই না লাভের মুখ দেখবেন আপনি। তাই এই যে সোনার দর পড়ছে, তা কিন্তু আপনার জন্য আশীর্বাদও হতে পারে।
আমেরিকা বা ইউরোপ নিয়ে এই দু’দিন আগেও যতটা গেল গেল রব ছিল, এখন আর ততটা নেই। বিশ্ব জুড়ে সামান্য হলেও হাল ফিরেছে শেয়ার বাজারের। তাই এখনকার মতো হয়তো পছন্দসই লগ্নির মাধ্যম হিসেবে একটু পিছিয়ে পড়েছে সোনা। সে কারণেই দাম কমেছে। ইউরোপের কিছু দেশ ধার মেটাতে সোনা বিক্রি করতে পারে বলে জানানোয় ওই দর কমেছে আরও দ্রুত। কিন্তু তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বরং বুদ্ধি করে এই সুযোগকে কাজে লাগানোর কথা ভাবুন।
(৫) সুদের ভরসা কোথায়?
সাধারণত ব্যাঙ্কে সুদের হার কম থাকলে সোনার চাহিদা বাড়ে। আবার সুদ বাড়লে হয় তার উল্টোটা। আসলে এই চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে ব্যাঙ্ক যদি আবার আমানতে সুদের হার কমায়, তা হলে সেখানে টাকা রেখে আর লাভ কী? অথচ দেখবেন, ব্যাঙ্কে এখন সুদ কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে!
তাই এমনিতে তো বটেই। অনেকে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েও দীর্ঘ মেয়াদে সোনায় লগ্নি করেন।
(৬) লড়াই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে
হালে মূল্যবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে নেমেছে বটে। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন, বছরের অধিকাংশ সময়েই বাজার যেন আগুন। তা এমন প্রবল প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুঝতে হাতিয়ারও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। আমার মনে হয়, এ জন্য সোনার মতো ভাল অস্ত্র আর খুঁজে পাওয়া শক্ত। কারণ
• মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব অন্যান্য লগ্নিতে যে-ভাবে পড়ে, সোনার দামে তেমন পড়ে না। কারণ সোনার নিজস্ব একটি মূল্য আছে। শেয়ারের মতো যা সংস্থা ভিত্তিক নয়। সেই নিজস্ব দামটুকু অন্তত সোনা সব সময়েই ধরে রাখে।
• মূল্যবৃদ্ধির জেরে আপনার বিভিন্ন লগ্নি থেকে কত টাকা যে আসলে মুছে যাচ্ছে, তা হয়তো খেয়ালও করছেন না। কিন্তু লোকসানের অঙ্কটা হাত-পা ঠান্ডা করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। সোনায় সঞ্চয় সেই ক্ষতি ভবিষ্যতে অনেকটাই পুষিয়ে দিতে পারে।
(৭) নিশ্চিন্ত আশ্রয়
বাজারের চালু প্রবাদ হল, হাতে সোনা থাকলেই যে আপনি বড়লোক, এমনটা না-ও হতে পারে। কিন্তু তা থাকলে আপনি অন্তত রাতারাতি গরিব হয়ে যাবেন না। সোনা সম্পর্কে এমন ‘মিথ’ গড়ে ওঠার মূল কারণ তার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা। মনে রাখবেন, সারা বিশ্বেই সোনা একই রকম স্বীকৃত।
তাই সর্বত্র তা চট করে নগদে বদলে নেওয়া যায়।
তা ছাড়া, যে কোনও আর্থিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক সঙ্কটের কোপ প্রথমেই পড়ে শেয়ার বাজারে, বন্ডে ও মুদ্রার বিনিময় মূল্যে। তখন ঘুরে দাঁড়াতে ঢাল হতে পারে সোনা।
(৮) প্রতিপত্তি আর লৌকিকতা
সোনা তো নিছক গয়না কিংবা সঞ্চয়ের হাতিয়ার নয়। একই সঙ্গে তা সৌভাগ্যের প্রতীক। সামাজিক প্রতিপত্তির অন্যতম শর্তও। তাই সোনা থাকলে, ‘সম্মান’ তো রইলই। আবার হঠাত্ কোনও নিকটাত্মীয়ের বিয়ে-থাতেও উপহার খুঁজতে হল না।
|
দাম আরও কমবে না কি? |
বিশ্ব বাজারে আরও কমতে পারে সোনার দাম। নেমে যেতে পারে এখনকার তুলনায় আরও ২০ শতাংশ।
ক্রেডিট স্যুইস, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক
দর ইতিমধ্যেই অনেকটা কমেছে। তবে আগামী দিনে আরও কমলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এইচএসবিসি, বহুজাতিক ব্যাঙ্ক
এ দেশে সোনার দর নির্ভর করে মূলত দুটো জিনিসের উপর। বিশ্ব বাজারের দাম আর ডলারের বিনিময় মূল্য। দুটোতেই এখন চরম ওঠা-নামা। তাই ঠিক কী হবে, এই মুহূর্তে হলফ করে বলা শক্ত। তার উপর আবার সোনা আমদানিতে রাশ টানতে পদক্ষেপ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাই আগামী দিনে ধাতুটির দর নির্ভর করবে এই সব কিছুর উপরেই।
সুবীর সেন, বি সি সেন জুয়েলার্সের কর্ণধার |
|
সোনায় লগ্নি কেন লোভনীয়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম আমরা। কিন্তু শুধু তা জানলেই তো হবে না। জানতে হবে, কোন কোন পথে সোনা কিনতে পারেন আপনি। আসুন, এ বার তা নিয়ে আলোচনায় বসি।
কোথায়, কী ভাবে?
অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কাছে সোনা আর গয়না কেনা প্রায় সমার্থক। ছেলে-মেয়ের বিয়ে, অজানা বিপদ বা চরম প্রয়োজনের মুহূর্তে সেই গয়না যে বড় ভরসা হতে পারে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে তার মানে এই নয় যে, গয়নাই সোনায় লগ্নির একমাত্র পন্থা।
সময় এগিয়েছে। সেই সঙ্গে খুলেছে সোনায় টাকা ঢালার নিত্য-নতুন পথ। চলুন এ বার সেই সব রাস্তা চিনি
(ক) বার/কয়েন
• গয়না না-কিনেও সোনা কেনার অন্যতম উপায় বার কিংবা মুদ্রা (কয়েন) ঘরে আনা।
• এগুলি বিক্রি করে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, স্বর্ণঋণ সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ছেলে-মেয়ের বিয়ের জন্য দরকার পড়লে, সহজেই এই সোনা ভাঙিয়ে গয়না গড়াতে পারেন। তাতে খাদ বাদ যাবে না। বাদ পড়বে না মজুরিও। অর্থাত্ প্রায় ১৫% বাঁচবে।
• তবে মনে রাখবেন, ব্যাঙ্ক কয়েন বিক্রি করলেও, তা কিন্তু আপনার কাছ থেকে আর ফিরে কিনবে না।
(খ) ই-গোল্ড
• সোনাপ্রেমীদের নতুন ঠিকানা এখন ন্যাশনাল স্পট এক্সচেঞ্জ-ও।
• এখানে সুবিধা হল, হাতে করে সোনা আপনাকে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে না। কাগজে কেনা সোনা রাখতে পারবেন ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টেই। ফলে লকারের খোঁজে ছোটাছুটি করার প্রয়োজন নেই। মাথাব্যথা নেই একগুচ্ছ কাগজপত্র সামলানোরও।
• সব থেকে কম এক গ্রাম সোনা কেনা যায়। প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে ডি-ম্যাট থেকে কাগজ ভাঙিয়ে প্রকৃত সোনা হাতে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
(গ) গোল্ড-ইটিএফ
• কাগুজে সোনায় লগ্নির জবরদস্ত পন্থা। গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (গোল্ড-ইটিএফ) বিনিয়োগ করা টাকা খাটানো হয় সোনায়। তাই সোনার দামের ওঠা-পড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এর ইউনিটের বাড়ে-কমে।
• প্রায় এক ডজন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গোল্ড-ইটিএফ রয়েছে। এনএসই, বিএসই-র মতো শেয়ার বাজারে তার লেনদেন চলে। তাই এতেও ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট লাগে। একটি গোল্ড ইটিএফ-এ যে-তহবিল সংগৃহীত হয়, তাই দিয়ে সংশ্লিষ্ট ফান্ড সোনা কেনে।
• আপনার টাকায় যতটা সোনা কেনা হবে, তার ভিত্তিতেই ইটিএফ ইউনিট পাবেন আপনি। প্রতিটি ইউনিট সাধারণত ১ গ্রাম সোনার হয়।
• বাজারে এসবিআই, কোটাক, আইসিআইসিআই, রিলায়্যান্সের মতো বিভিন্ন সংস্থার গোল্ড-ইটিএফ আছে।
(ঘ) মিউচুয়াল ফান্ড
• এমন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের কথা ভাবতে পারেন, যারা সোনা ভিত্তিক ব্যবসা করা বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে টাকা খাটায়।
• সাধারণত ফান্ডের টাকা লাগানো হয় সোনা উত্পাদনকারী সংস্থার শেয়ারে।
(ঙ) গোল্ড-ফিউচার্স
সোনার ফিউচার্স বা আগাম লেনদেনও লগ্নিকারীদের সামনে সুবিধাজনক রাস্তা খুলে দিয়েছে। কারণ
• লেনদেন চালানো বেশ সোজা আর সুবিধাজনক।
• মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স) থেকে সোনা কেনা যায়। বস্তুত সোনার আগাম লেনদেনের ৯৫ শতাংশই হয় এখানে।
• যতটা সোনা কিনবেন, লেনদেনের শুরুতে তার প্রায় ১০ শতাংশের দাম দিতে হবে।
• কাগজের মাধ্যমেই কেনা-বেচা চলে। প্রকৃত সোনা দেওয়া নেওয়া করতে হয় না।
• তবে লগ্নিকারীর যদি সত্যিই সোনা হাতে পাওয়ার প্রয়োজন থাকে, তা-ও সম্ভব হতে পারে।
• বিনিয়োগ বা গয়না যে কোনও প্রয়োজনেই লগ্নি করা যায়।
• অনেক সোনার ব্যবসায়ীও দামের ওঠা-পড়ার ঝুঁকি এড়াতে আগাম লেনদেনের পথে হাঁটেন।
• দাম যখন নিম্নমুখী তখন হাতে সোনা না থাকলেও, শুধুমাত্র কাগজে (আগাম চুক্তিপত্র) সোনার দামে বাজি ধরে মুনাফা করা যায়।
(চ) গয়না
• প্রথমেই বলেছি, সোনায় লগ্নির সব থেকে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত পথ হল গয়না কেনা। আগে শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এখন ক্রেতারা হলমার্ক দেখে সোনা কিনতে পারেন।
• এক লপ্তে সোনা কেনার টাকা দিতে না-পারলে, বিভিন্ন স্বর্ণসঞ্চয় প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারেন। এই ধরনের প্রকল্পে ১২ বা ১৮ মাস কিস্তি দিয়ে যেতে হবে। মেয়াদ শেষে গড় দামে সোনা কেনার সুযোগ পাবেন। ভবিষ্যতে যাঁদের গয়না প্রয়োজন, তাঁরা এই পথে সোনা কিনতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই গয়না কেনার জন্য মোটা মজুরি দিতে হয়। যা পরে ওই গয়না বিক্রির সময়ে আর ফেরত পাওয়া যাবে না।
|
সোনার শুদ্ধতা |
২৪ ক্যারাট: নিরেট সোনা। শুদ্ধতা ৯৯.৯ শতাংশ।
২২ ক্যারাট: গয়নার সোনা, যাতে ২২ ভাগ থাকে বিশুদ্ধ সোনা। অর্থাত্ শুদ্ধতা ৯১.৬ শতাংশ।
১৮ ক্যারাট: হিরের গয়না তৈরিতে সাধারণত ব্যবহৃত হয়। সোনা থাকে ১৮ ভাগ, ৬ ভাগ অন্য ধাতু। শুদ্ধতা ৭৫ শতাংশ।
১৪ ক্যারাট: ২২ ক্যারাট সোনার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় সম্প্রতি ১৪ ক্যারাট সোনাতেও গয়না তৈরি শুরু হয়েছে। |
ফিরে দেখা |
(প্রতি ১০ গ্রাম) |
বছর |
দাম (টাকা) |
১৯২৫
১৯৩০
১৯৪০
১৯৫০
১৯৬০
১৯৭০
১৯৮০
১৯৯০
২০০০
২০০৫
২০০৬
২০০৭
২০০৮
২০০৯
২০১০
২০১১
২০১২
২০১৩ |
১৮.৭৫
১৮.০৫
৩৬.০৪
৯৯.১৮
১১১.৮৭
১৮৪.০৫
১৩৩০
৩২০০
৪৪০০
৭০০০
৮৪০০
১০৮০০
১২৫০০
১৪৫০০
১৮৫০০
২৬৪০০
৩২০০০
২৬৪৫৫* |
*২০ মে তারিখের দাম |
|
ইতিহাস সাক্ষী
সোনা নিয়ে আলোচনায় বসে সেখানে লগ্নির সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা করলাম আমরা। কিন্তু আমরা মনে হয়, মুদ্রার উল্টো পিঠটাও জেনে রাখা জরুরি।
এমনিতে সোনাকে প্রায় অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করি আমরা। কিন্তু আমার মনে হয়, আর পাঁচটা লগ্নির হাতিয়ারের মতো সোনায় টাকা ঢালার আগেও চোখ-কান খোলা রাখা জরুরি।
মনে রাখবেন, সোনা লগ্নির অন্যতম নিরাপদ গন্তব্য হলেও, তার দাম কমার নজির কিন্তু ইতিহাসে কম নেই। যেমন, ১৯৮০-র দশক শুরুর সময় বিশ্ব বাজারে প্রতি ট্রয় আউন্স সোনার দাম ছিল প্রায় ৬০০ ডলার। কিন্তু দশক শেষে তা দাঁড়ায় ৪০০ ডলারে। একই রকম খারাপ সময় কেটেছে ১৯৯১ থেকে ২০০০ পর্যন্ত। তবে হ্যাঁ, প্রতি বারই দুঃসময় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সোনা। সুতরাং...
লগ্নির মাধ্যম হিসেবে সোনার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সত্যিই তেমন প্রশ্ন নেই। তাই তার দাম কমায় ঘাবড়ে না-গিয়ে একে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন না। |
দামের চড়াই-উতরাই |
কেন বাড়ে, কখন বাড়ে?
• বিশ্ব জুড়ে চাহিদা বৃদ্ধি, জোগান কম
• উত্সব এবং বিয়ের মরসুম
• টাকার তুলনায় ডলারের দাম বাড়লে
• অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং শেয়ার বাজারের দুর্দিনে
কেন কমে, কখন কমে
• দেশ থেকে পণ্য এবং পরিষেবা রফতানি বাড়লে
• দেশে বিদেশি লগ্নি বাড়লে
• শেয়ার বাজার চাঙ্গা হলে
• মলমাস কিংবা বিয়ে-থা নেই এমন মাসে
• অতিবৃষ্টি অথবা অনাবৃষ্টির কারণে
• লগ্নিকারীদের লাভ ঘরে তোলার তাগিদে |
|
|
|
|
এক নজরে ভারত |
• সোনার গয়নার বৃহত্তম বাজার।
• এ দেশের গৃহস্থ বাড়িতে সোনার যা সঞ্চয় আছে, পৃথিবীর আর কোথাও তা নেই।
• বিভিন্ন মন্দিরে আছে হিসাব বহির্ভূত বিপুল সোনার ভাণ্ডার।
• ২০১১ সালে এখানে গয়না ও লগ্নি মিলে মোট চাহিদা পৌঁছেছিল ৯৩৩.৪ টনে। বার ও কয়েনের মোট চাহিদার ২৫ শতাংশই তৈরি হয়েছিল এ দেশের মাটিতে।
• ওই বছর আমদানি করতে হয়েছিল ৯৬৯ টন সোনা |
|
লেখক: এমসিএক্স স্টক এক্সচেঞ্জ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট (মতামত ব্যক্তিগত)
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
|
|
|
|
|