নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল |
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য খয়রাশোল থেকে বাবুইজোড় পর্যন্ত ১৯.২ কিলোমিটার চওড়া রাস্তা তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই একটি বড় অংশের কাজ শেষ। সেই রাস্তায় বড়রা গ্রাম থেকে সাহাপুর পর্যন্ত মাত্র ৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে তৈরি হয়েছে অন্তত ৩০-৩৫টি বিশাল বিশাল বাম্পার। ছোট চাকা গাড়ি বা মোটরবাইক তো বটেই, বাম্পার ডিঙিয়ে চলাচল করতে আসুবিধে হচ্ছে ওই রুটের বাসগুলিরও। প্রশাসন শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রাখার কথা ভাবছেন বাস মালিকেরা।
বাস মালিক সংগঠনের জেলা সভাপতি শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ওই রাস্তায় ১০টি বাস চলাচল করে। এ ভাবে উঁচু উঁচু বাম্পার দেওয়ায় বাস চালাতে চাইছেন না চালক ও কর্মীরাই। সঙ্গে গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি পথ দুর্ঘটনা হলে আইনি জটিলতায় ফেঁসে যাওয়া ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঝক্কি বাড়বে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়ে লাভ হয়নি। দু-একদিন দেখে আরটিওকে জানিয়ে বাস বন্ধ করেদেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সঙ্কীর্ণ ওই রাস্তাটি চওড়া ও উন্নত করার দাবি ছিল। কারণ, গোটা খয়রাশোল ব্লকের অন্যতম প্রধান রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় ৫০-৭০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর সিউড়িতে অসতে এলাকার বাসিন্দাদের সময় লাগত আড়াই থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা। রাজ্য সড়ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবোধানে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয় গত বছর সেপ্টেম্বরে। বর্তমানে রাস্তাটির কাজ বাবুইজোড় থেকে হজরতপুর পর্যন্ত সম্পূর্ণ। বহু দিন পরে চওড়া ও উন্নতমানের রাস্তা পাওয়ার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ভেবেছিলেন সমস্যা ঘুচলো। কিন্তু রাস্তা তৈরি হওয়ার সময় নিয়োজিত ঠিকাদারকে দিয়ে ওই রাস্তার পাশে অবস্থিত বড়রা, কৈথি, কাঁকরতলা, রসা এবং সাহাপুর গ্রামের কিছু মানুষ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বহু বাম্পার তৈরি করিয়ে নিয়েছেন।
বাম্পার নিয়ে শুধু বাস মালিক কর্মীরাই ক্ষুব্ধ তেমনটা নয়। যে উদ্দেশ্য নিয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছিল এত বাম্পার থাকলে সেটা বিঘ্নিত হবে বলেই মত এলাকার একটি বড় অংশের মানুষের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের দাবি, “এই বাম্পার তৈরির পিছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। এমনিতেই কাঁকরতলা থানা এলাকার ওই অঞ্চলে অপরাধমূলক ঘটনা যেমন বোমাবাজি, অশান্তি নিত্য দিনের সঙ্গী। বাম্পারে বাব বার গতি কমাতে হলে সেই সুযোগে রাতের অন্ধকারে চুরি-ছিনতাইও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।” এ ছাড়াও রোগী নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে যেতে চূড়ান্ত সমস্যা হবে। এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বাম বিধায়ক বিজয় বাগদিও তাই মনে করছেন। তিনি বলেন, “অপরাধ সংগঠিত করার উদ্দেশ্যেই এত সংখ্যক বাম্পার দেওয়া হয়েছে বলে আমার মনে হয়। বিশেষ প্রয়োজনে দু-একটি বাম্পার রাখা যেতে পারে। তবে আমি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করব যাতে বাম্পারগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়।”
খরাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার বলেন, “এত সংখ্যায় বাম্পার থাকার কথা নয় ওই রস্তায়। এই বিষয়ে কেউ আমার কাছে কোনও অভিযোগ জানাননি। প্রসাসনের অন্য স্তরে অভিযোগ জানালে আলাদা কথা। তবে এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ পেলে সেই মতো ব্যাবস্থা নেওয়া যাবে।” রাজ্য সড়কের (স্টেট হাইওয়ে অথরিটি) মহকুমার দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়র কৃষ্ণকান্তি নন্দীর সঙ্গে অবশ্য এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
|