নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
তছরুপে অভিযুক্ত পুরসভার পরিবেশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হল আসানসোলে। বুধবার তাঁকে পুরসভায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন কয়েক জন মেয়র পারিষদ ও বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, জেরায় অভিযোগ মেনে নিয়েছেন পরিবেশ বিভাগের আধিকারিক তাপস ঘোষ। দিন দুয়েকের মধ্যে তাঁর নামে থানায় অভিযোগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি।
আসানসোল পুরসভার পরিবেশ আধিকারিক তাপসবাবু গত কয়েক বছর ধরে জালিয়াতি করছেন বলে অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায়ের নেতৃত্বে বাম কাউন্সিলররা মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগও করেন। তখন মেয়র জানান, এমন অভিযোগ অন্য সূত্রেও পেয়েছেন তিনি। বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস দেন তিনি। |
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ ওঠার পরেই গা-ঢাকা দেন অভিযুক্ত আধিকারিক। পুর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা শুরু করেন। বুধবার অভিযুক্ত আসানসোল পুরসভায় আসেন। দুপুর ২টো নাগাদ পুরসভার গাড়িতেই তাঁকে আনা হয়। দফায় দফায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মেয়র পারিষদ ও বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা। প্রাথমিক জেরার শেষে ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “তাপসবাবু দোষ স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” চেয়ারম্যান জিতেন্দ্রবাবু বলেন, “তাপস ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত শেষ হতে আরও দু’দিন লাগবে। তার পরেই আমরা পুলিশে অভিযোগ করব।”
তছরুপের পরিমাণ কত, পুরসভার তরফে তা জানানো হয়নি। তবে এক মেয়র পারিষদ জানান, প্রাথমিক হিসেবে প্রায় আড়াই কোটি টাকার জালিয়াতি ধরা পড়েছে। পুরসভার একটি সূত্রে জানা যায়, জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছেন, প্রায় চার বছর ধরে তিনি অস্থায়ী সাফাইকর্মীদের ভুয়ো বিল, গাড়ির তেলের ভুয়ো বিল বানিয়ে তছরুপ করেছেন। সাফাই বিভাগের এক আধিকারিকের সই জাল করে ভুয়ো বিল বানিয়ে টাকা হাতিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার বাসিন্দা তাপস ঘোষ আদতে পুরসভার স্থায়ী কর্মীই নন। পুরসভা বামফ্রন্টের দখলে থাকাকালীন তিনি ঠিকায় নিযুক্ত হন। বছর দুয়েক আগে ঠিকার মেয়াদ ফুরনোর পরে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পরিচালিত বর্তমান পুরবোর্ড তাঁর নিয়োগের পুনর্নবীকরণ করায়। অভিযুক্ত আধিকারিক মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যালয়ের পাশের চেম্বারেই নিয়মিত বসেন। অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েও পুরসভার সাফাই বিভাগ, পরিবহণ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ বিল তিনিই বানাতেন। সাফাই দফতরের অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, অস্থায়ী সাফাইকর্মীদের ভুয়ো নামের তালিকা বানিয়ে প্রতি মাসে তিনি কয়েক লক্ষ টাকার বিল তুলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মাসের পর মাস পুর কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে এত টাকার জালিয়াতি তিনি কী ভাবে করলেন। জিতেন্দ্রবাবু বলেন, “কোন ফাঁকফোকর গলে এ সমস্ত হয়েছে, আমরা সে সবও তদন্ত করে দেখছি।” |