নিজস্ব সংবাদদাতা • অন্ডাল |
শৌচাগার থেকে পার্কিং জোন, কিছুই নেই। সংকীর্ণ বাজারে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকা দোকানপাটের মধ্যে দিয়ে দমকল যাওয়ারও কোনও ব্যবস্থা নেই। রাস্তার দু’পাশ আপাতত জবরদখলকারী হকারদের দখলে।
২ মে’র কথা। উখড়া গ্রামের কুলুপাড়ায় একটি খড়ের গাদায় আগুন লাগে। রানিগঞ্জ থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন উখড়া বাজারে ঢোকার প্রধান রাস্তা নেতাজি সুভাষ বসু রোডে ঢুকে পড়ে। তার পর আটকে পড়ে মিনিট ৪০ মতো। তার পরে ওই গ্রামে পৌঁছে আগুন নেভাতেই এক ঘণ্টা পার। সেদিন অবশ্য উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে তড়িঘড়ি জলের ট্যাঙ্কার পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছিল।
উখড়া বাজারের ব্যবসায়ী কুন্তল দাস, গ্রামের বাসিন্দা অমিত চুনারীরা জানান, ভিড়ে ঠাসা ওই বাজারের কারণে সহজেই গ্রামে ঢুকে যাওয়ার রাস্তা সুভাষ রোডটি ব্যবহার করা যায় না। মাধাইগঞ্জ রাস্তা ধরে বাজপেয়ী মোড় হয়ে ঘুরপথে গ্রামে ঢুকতে হয়।
উখড়া চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি সীতারাম বার্নোয়াল জানান, নেতাজী সুভাষ রাস্তা জবরদখলকারীদের জন্য অনেক সরু হয়ে গিয়েছে। নর্দমা নোংরায় ভর্তি। বৃষ্টি হলেই বাজারের আবর্জনা রাস্তায় এসে জমা হয়। নেতাজি সুভাষ বসু রোডটিও সংস্কারের অভাবে বেহাল। রাস্তার পাশে আলোর কোনও ব্যবস্থাও নেই সরকারি উদ্যোগে। সীতারামবাবুর দাবি, বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকারের আবেদন জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি। |
উখড়া চেম্বার অব কমার্স সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজার এলাকায় পাঁচটি আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চারটি আলোই দুষ্কৃতীরা খুলে নিয়ে চলে যায়। ভোর বেলায় প্রথম ট্রেনের যাত্রীদের সুবিধার জন্য চেম্বার অব কমার্স থেকে বাজার সংলগ্ন শংকরপুর মোড়ে একটি আলো লাগানো হয়েছিল। তারও কোনও হদিশ নেই। পার্কিং জোন না থাকায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে নাকাল অবস্থা ব্যবসায়ীদের। সঙ্গে রয়েছে যানজটের সমস্যা। শৌচালয় না থাকায় মহিলাদের চরম হেনস্থা হয়। উখড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মহাদেব দত্ত জানান, আগে আসানসোল মাইনস বোর্ড অব হেলথের কর্মীরা নর্দমা পরিস্কার করত। কিন্তু কর্মী কমে যাওয়ায় তা বহুদিন বন্ধ। জল সঙ্কটও তীব্র। এডিডিএ নেতাজী সুভাষ রোড সংস্কারের একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। ইসিএলও দশটি সৌর আলো লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু মহাদেববাবুর দাবি, বাজারের জবরদখল উচ্ছেদ না হলে অগ্নিকাণ্ডে ব্যপক ক্ষতি হবে। এ কথা পঞ্চায়েত থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সবাইকে জানানো হয়েছে। উখড়ার কংগ্রেসের প্রাক্তন গ্রাম প্রধান শোভনলাল সিংহ হান্ডা জানান, প্রয়াত সাংসদ আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের সাংসদ তহবিলের টাকায় বছর ২৭ আগে তাঁরাই প্রথম উখড়া বাজারে পাকা রাস্তা এবং পাকা নর্দমা তৈরি করেছিলেন। ২০০৩ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস পঞ্চায়েতে ছিল। সেই আমলে শাসনকালে হকার উচ্ছেদ নিয়ে চারবার সর্বদলীয় বৈঠক করা হয়েছে। প্রতিবারই সিপিএমের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা বাজার আবর্জনা মুক্ত রাখার জন্য ১৪ টি টিনের ডাস্টবিন বসিয়েছিলাম। আসানসোল মাইনস বোর্ড অব হেলথের কর্মীরা নিয়মিত ওই ডাস্টবিন থেকে আবর্জনা সরিয়ে নিয়ে যেত। অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্ত ডাস্টবিনগুলি দুষ্কৃতীরা খুলে নিয়ে চলে গিয়েছে। শেষ দশ বছর সিপিএম জবরদখলকারীদের আরও মজবুত ভাবে বসার জায়গা করে দিয়েছে।” তবে তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সাধারণ সম্পাদক তথা গ্রামবাসী রাজু মুখোপাধ্যায় বলেন, “কংগ্রেসের আমলেই হকারদের পথ চলা শুরু। সিপিএম সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। আমরা পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এলে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে হকারদের বাজার থেকে সরিয়ে দেব।”
উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম গ্রামপ্রধান প্রতিমা রুইদাসের অবশ্য অভিযোগ, বার বার টাকা অনুমোদন হলেও জমির অভাবে শৌচালয় হয়নি। বণিক সংগঠন জমির ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি। দু’বছর আগে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নর্দমা সাফাই হয়েছিল। সীতারামবাবুর বক্তব্য, বাজার লাগোয়া আসানসোল মাইন্স বোর্ড অফ হেল্থের অফিসের চত্বরেই অনেকটা জায়গা রয়েছে। গ্রামপ্রধান চাইলেই শৌচাগার তৈরি করা যেত। তাঁর কথায়, “গ্রামপ্রধানের উচিত, বণিক সংগঠন ও স্থানীয় ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা।” গ্রামপ্রধানের সদিচ্ছার অভাবেই শৌচাগার নির্মাণ হচ্ছে না বলে দাবি তাঁর।তিনি বলেন, “জবরদখলকারীদের জন্যই নর্দমা সাফাই করা যাচ্ছে না। এ ব্যপারে বণিক সংগঠন এবং ওই জবরদখলকারীদের সহায়তা চাই। ইসিএল দশটি সৌর আলো বসানোর জন্য তিন লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে। এডিডিএ রাস্তা সংস্কার করবে বলে জানিয়েছে। এই কাজগুলো যাতে তাড়াতাড়ি করা হয়, আমরা তার জন্য বারবার অনুরোধ করছি।” তবে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ওঁরা এখানে রয়েছেন। ওঁদেরকে সরানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না।” |