তৃণমূলের শ্রমিকদের তরজা ডিএসপি-তেও
তৃণমূল নেত্রী যতই বলুন এক কারখানায় দলের প্রভাবিত একটাই শ্রমিক সংগঠন থাকবে, নেতৃত্বের একাংশ অন্য পথে হাঁটছেন। তাতে প্রশ্রয় পাচ্ছে গোষ্ঠী কোন্দলই।
রাজ্য সরকারি সংস্থা দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেডের (ডিসিএল) পরে এ বার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি)। ঠিক এক মাসের ব্যবধানে আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত নতুন ইউনিয়নের সমর্থনে সভা করে গেলেন সংগঠনের চেয়ারম্যান তথা বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্যের এক মন্ত্রীর গোষ্ঠীর যে দ্বন্দ্ব তলায়-তলায় চলছে, তা ফের প্রকাশ্যে চলে এল।
২০১০ সালের ১৪ মে ডিএসপি-তে ঠিকা শ্রমিকদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট ঠিকা শ্রমিক কংগ্রেস’-এর অনুমোদন (নম্বর ৫৭৭) দিয়েছিলেন সংগঠনের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি পূর্ণেন্দু বসু। বর্ধমান জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ই তার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হন হিমাংশু আশ। গত বছর ১৭ অগস্ট আবার ‘দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট ঠিকা মজদুর ইউনিয়ন’ নামে একটি নতুন ইউনিয়নকে অনুমোদন (নম্বর ১০৩৬৬) দেন আইএনটিটিইউসি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটির সভাপতি সভাপতি শোভনদেব, সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া প্রাক্তন আইএনটিইউসি নেতা নীরদবরণ বিশ্বাস।
দুর্গাপুরে সভায় শোভনদেব। —নিজস্ব চিত্র।
নীরদবাবুদের ইউনিয়নের অভিযোগ, প্রথম ইউনিয়নের নেতারা শ্রমিকদের স্বার্থ দেখার বদলে নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। তাদের দলে নাম না লেখালে মারধর, এমনকী প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। এ দিন কারখানার সামনে সভার আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। শোভনদেববাবু ছাড়াও প্রদীপবাবু, দুর্গাপুরের বিধায়ক তথা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ সেই সভায় যোগ দেন। সভায় প্রদীপবাবু বলেন, “যিনি আইএনটিটিইউসি-র নাম করে ধান্দাবাজি চালাচ্ছেন, তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’বার ফোন করে বলেছেন আমার কথা শুনতে। তিনি তা করেন না। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং ঠিকা শ্রমিকদের কাছ থেকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার যে খেলা তিনি খেলছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য।”
শোভনদেব অভিযোগ করেন, ডিএসপিতে যেভাবে শ্রমিক সংগঠন পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে শ্রমিকদের ‘ক্রীতদাসে’ পরিণত করা হচ্ছে। নেতাদের কথা না শুনে চললেই মারধর করা হচ্ছে। কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “ওয়ার্কশপের ভিতরে মারপিট চলছে। বেশ কয়েক জনকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি পাওয়ার কথা ৪৩০ টাকা, অথচ তাঁরা পাচ্ছেন ১৩০ টাকা।” তিনি অভিযোগ করেন, সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে পিছনে টাকার খাম নিচ্ছেন বহু আইএনটিটিইউসি নেতা। তাঁর কথায়, “পরে দলে যোগ দিয়ে পদে বসে কেউ কেউ এ সব করছেন। হাঁস যে ভাবে জল থেকে দুধ আলাদা করে, আপনারাও বুঝে নিন আপনাদের ভাল কে করবে।”
আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, সংগঠনের ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তিনি কোনও কথা বলবেন না। তাঁর অনুমোদন দেওয়া ‘ডিসিএল পার্মানেন্ট কর্মচারী ইউনিয়ন’ গত ১৯ এপ্রিল শোভনদেবের সামনেই নিজেদের আইএনটিটিইউসি-র ‘আসল প্রতিনিধি’ দাবি করেছিল। বিভ্রান্ত শ্রমিকদের উদ্দেশে শোভনদেবের বক্তব্য, “এক শিল্পে এক ইউনিয়নের স্বপক্ষে আমিও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আট জনের কমিটি গড়ে দিয়েছেন। তারাই ঠিক করবে, কোন কারখানায় কোন সংগঠন থাকবে আর কোনটি বন্ধ করে দিতে হবে।” ‘দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট ঠিকা শ্রমিক কংগ্রেস’ সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
অর্থলগ্নি ও সারদা প্রসঙ্গে শোভনদেব বলেন, “সিপিএম নেতারা এখন বড়-বড় কথা বলছেন। কেন্দ্রীয় সরকার চিটফান্ডের বিরুদ্ধে বিল এনেছিল ১৯৮২ সালে। অথচ বাম সরকার বিল আনে ২০০৩ সালে, তা-ও ভুলে ভরা।” তাঁর দাবি, “পরিকল্পনা করেই ভুলে ভরা বিল আনা হয়েছিল, যাতে তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন না পায়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন দিনের মধ্যে সারদা কর্ণধারকে গ্রেফতার করেছেন। কমিশন বসিয়ে আমানতকারীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছেন। দ্রুত বিল এনে মন্ত্রীদের দিয়ে দিল্লিতে পাঠিয়ে রাজ্যপালের সই করিয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। রাষ্ট্রপতি রাজ্যে এলে দ্রুত সেই বিলে সই করার আর্জিও জানিয়েছেন। সিপিএমের অভিযোগের যে সারবত্তা নেই, মানুষ তা বুঝতে পারছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.