কোর্টের নির্দেশ ফিরে দেখার আর্জি রাজ্যের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও এখনই যাতে অটোয় মিটার বসানো না হয়, সে জন্য পরিবহণমন্ত্রীকে অনুরোধ করলেন সব অটো ইউনিয়নের নেতারা। একই সঙ্গে, অটো ইউনিয়নগুলিকে এ ব্যাপারে যথাসাধ্য সাহায্য করার আশ্বাসও দিল রাজ্য সরকার। যদিও প্রকাশ্যে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “হাইকোর্ট-নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৮ জুন। তার পরে অটোয় মিটার বসানোর বিষয়ে মানসিক ভাবে প্রস্তুত রাজ্য সরকার।”
ইতিমধ্যেই অবশ্য অটো ইউনিয়নগুলির মনোভাব বুঝে হাইকোর্টকে নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অটো ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, পরিবহণ দফতরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আশিস ঠাকুর-সহ পদস্থ কর্তারা। ছিলেন রাজ্য ও কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের পদস্থ কর্তারাও। বৈঠকের পরে পরিবহণমন্ত্রী হাইকোর্টে পুনর্বিবেচনার আর্জির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “আমরা আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছি। আদালত যে চূড়ান্ত নির্দেশ দেবে, সরকার তা মেনে চলবে।” |
রাজ্যের কোথাও মিটার ছাড়া অটো চালানো যাবে না বলে গত ৮ মার্চ নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ ছিল, মিটারে অটো কী ভাড়া নেবে, তা-ও বেঁধে দিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। এ দিন কমবেশি সব অটো ইউনিয়নের পক্ষ থেকেই পরিবহণমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অটো এখন কলকাতার অন্যতম যাতায়াতের মাধ্যম। এর মাধ্যমে অনেক কম খরচে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারেন। তড়িঘড়ি অটোয় মিটার বসাতে গেলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তা ছাড়া, অটোচালকেরাও এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই অটোয় মিটার বসানোর নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে গেলে, বিস্তারিত ভাবনা-চিন্তার পরেই তা করা উচিত বলে জানান অটো ইউনিয়নের নেতারা।
এখন প্রায় ৬৫ হাজার অটোয় মিটার বসানো এক কথায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন সিটু-নিয়ন্ত্রিত অটোচালক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাবুন ঘোষ। এ দিন তাঁদের তিন প্রতিনিধি পরিবহণ দফতরের বৈঠকে হাজির ছিলেন। বাবুনবাবু বলেন, “অপরিসর রাস্তা দিয়ে অটো যেতে পারে। এতে প্রান্তিক বাসিন্দারা উপকৃত হন। একটি অটোয় অন্তত চার জন যেতে পারেন। মিটার বসলে এগুলো সম্ভব হবে না।”
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের একাংশের মতে, দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো কলকাতাতেও অটো মিটারে চলা উচিত। কিন্তু বর্তমানে যে ভাবে এই শহরে অটো চলে, তারও বেশ কিছু সুবিধা আছে বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন তাঁরা। সেগুলি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে পরিবহণ দফতরের অন্দরে। দফতরের এক কর্তার কথায়, “মিটার চালু করলেই হল না। চটজলদি মিটার চালু করতে গিয়ে যাতে পরিবহণ ক্ষেত্রে নৈরাজ্য তৈরি না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।” পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, সেই নৈরাজ্য আটকাতে প্রাথমিক ভাবে অটোর এলাকা কয়েক ভাগে ভাগ করে দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি বাস্তবায়িত করা যে সময়সাপেক্ষ, তা মানছেন পরিবহণ দফতরের তাবড় কর্তারা।
এ দিনের বৈঠকে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনকে আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও তিনি বা তাঁর কোনও প্রতিনিধি আসেননি। অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে দোলাদেবী বলেন, “আমার সংগঠনের তিন প্রতিনিধির ওই বৈঠকে যাওয়ার কথা ছিল। বিশেষ কাজে আটকে পড়ায় ওঁরা যেতে পারেননি। কিন্তু আমরা চাই আইনি নির্দেশ রূপায়িত হোক। এ ব্যাপারে সরকারকে সব রকম সহযোগিতা করব।”
|