রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্ক |
সঞ্চিত অর্থ ফেরতের আশায় ভিড় গ্রাহকদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কেউ নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছিলেন, কেউ আবার অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন তিন তলা বাড়িটির দিকে। তিন বছর পর যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পুরনো বাড়িটি। ওই বাড়িতেই আটকে রয়েছে কারো জীবনের শেষ সঞ্চয়টুকু, কারো বা ভিটে-মাটি।
মঙ্গলবার সকাল হতেই দলে দলে মানুষ এসে জড়ো হয়েছিলেন রামকৃষ্ণপুর মোড়ে তিন তলা বাড়িটির সামনে। যে বাড়ির নাম রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্ক। ২০১০ সালের ১৭ জুন অস্থায়ী লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে ব্যাঙ্কটি। শেষ পর্যন্ত সেটি ২০১০ সালের ৩ অগস্ট পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। মাথায় হাত পড়ে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক এবং ৬০ জনের বেশি কর্মচারী ও অফিসারের। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সোমবারই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই সমবায় ব্যাঙ্কটি খোলেন হাইকোর্ট নিযুক্ত স্পেশাল অফিসার প্রাক্তন জেলা জজ ও লিগ্যাল রিমেমব্রান্সার সুভাষ রায়। এর পরে সকাল থেকেই ব্যাঙ্কের সামনে একে একে এসে ভিড় করেন গ্রাহকেরা।
কর্মজীবনের সমস্ত সঞ্চিত টাকা ব্যাঙ্কে রেখেছিলেন চ্যাটার্জিহাট বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ সেন। বললেন, “সকাল ১০টায় ব্যাঙ্কের সামনে চলে যাই। দেখি, আমার মতো বহু গ্রাহক জড়ো হয়েছেন ব্যাঙ্কের সামনে। সকলেই আশায় বুক বাঁধছেন।”
জমানো ৫০ হাজার টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় দিনের পর দিন ব্যাঙ্কের সামনে ঘুরেছেন সাথী দাস। ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “গ্রাহকেরা সকলে মিলে লড়ছিলেন বলে আজ ব্যাঙ্ক খুলেছে। আশা করি জমা রাখা সব টাকাও গ্রাহকেরা ফিরে পাবেন।”
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ ব্যাঙ্কে আসেন স্পেশাল অফিসার-সহ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার, চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট। চাবি দিয়ে ব্যাঙ্কের দরজা খুলে কাজ শুরু করেন তাঁরা। রামকৃষ্ণ সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, এ দিন মূলত তিন বছর ধরে ব্যাঙ্কের ভিতর জমে থাকা ধুলো,ময়লা, আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়। দুপুর ২টো পর্যন্ত কাজ চলার পরে ব্যাঙ্ক বন্ধ করে চলে যান সুভাষবাবু এবং অন্য আধিকারিকেরা। আদালত সূত্রে খবর, গত ১৪ তারিখ চাবি দিয়ে ব্যাঙ্ক খুলে কাজ শুরু করার জন্য স্পেশাল অফিসার, রির্জাভ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি এবং সমবায় ব্যাঙ্কটির চিফ ক্যাশিয়ার, ম্যানেজার ও চিফ আ্যাকাউন্ট্যান্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী ১১ জুন কাজের অগ্রগতির বিষয়ে আদালতের কাছে বিস্তারিত রির্পোট জমা দিতে বলা হয়। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১০ জুন পর্যন্ত ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত ব্যাঙ্ক খোলা থাকলেও এখনই প্রবেশ করতে পারবেন না গ্রাহকেরা।
|