তদন্তের গতিতে ‘ফাঁসছেন’ নিখোঁজই |
সাঁকরাইল-কাণ্ডে চার দিন ধরে নিখোঁজ যুবকের সন্ধান না মিললেও তদন্ত যতই এগোচ্ছে ততই বেপাত্তা হওয়ার আগে ওই যুবকের বক্তব্যে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পাচ্ছে পুলিশ।
১৬ মে সাঁকরাইলের বাদামতলায় একই পরিবারের চার জনের মৃতদেহ উদ্ধারের পরে বাড়ির বড় ছেলে, সুমন সিংহ নামে ওই যুবক দাবি করেছিলেন, ১৫ তারিখ তিনি লখনউ থেকে রওনা হয়ে পরদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ‘দরজা ভেঙে’ বাবা, মা, ভাই ও এক মাসির রক্তাক্ত দেহ দেখেছিলেন।
পুলিশ জেনেছে, আসলে ওই যুবক লখনউ-এর গোমতিনগর থেকে রওনা হন ১২ তারিখ রাতে। ১৩ তারিখ তিনি ছিলেন পটনার কাছে এবং ১৪ তারিখ তাঁর অবস্থান ছিল সাঁকরাইলে। অর্থাৎ তাঁর বাবা, মা, ভাই এবং বড় মাসি যে দিন খুন হন, সে দিন তিনি সাঁকরাইলেই ছিলেন। পুলিশের দাবি, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট প্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে। তা হলে কেন ওই যুবক মিথ্যা বলছেন? কী আড়াল করতে চাইছেন তিনি? নিজেকে নাকি আরও কাউকে?
তদন্তকারীরা এখন এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজছেন। ১৬ তারিখ সন্ধ্যায় ফেরার প্রমাণ হিসাবে সুমন পুলিশকে ওই তারিখে বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠার জন্য টিকিট পরীক্ষকের জরিমানা করা স্লিপ দেখান। তদন্তকারীরা সেটি পরীক্ষা করে দেখেন, ট্রেনের ফাইন নেওয়া হয়েছে মোগলসরাই থেকে।
তদন্তকারীরা তাই এখন জানার চেষ্টা করছেন, ওই যুবক লখনউ থেকে না উঠে মোগলসরাই থেকে উঠলেন কেন? তবে কী তিনি ১৫ তারিখ সকালে সাঁকরাইল থেকে বেরিয়ে ট্রেনে সে দিনই মোগলসরাই পৌঁছন? এর পরে ফের সেখান থেকে বিনা টিকিটে রাতের ট্রেন ধরে ১৬ তারিখ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন এটা বোঝাতে যে তিনি সে দিনই পৌঁছলেন?
পুলিশ জানায়, গত ১৭ তারিখ রাতে পরিবারের চার জনের মৃতদেহ দাহ করার পরে শিবপুরে ছোট মাসি আল্পনা সিংহের বাড়ি থেকে বেপাত্তা হন সুমন। তার আগে সিআইডি-র একদল অফিসার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পুলিশের ধারণা, আরও জিজ্ঞাসাবাদের ভয়ে তিনি পালিয়ে যান। তাঁর সন্ধানে পুলিশের একটি দল পরদিনই লখনউ রওনা হয়। সুমনকে পাওয়া না গেলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ জেনেছে, যুবকটি লখনউয়ে চাকরি করতেন না। অত্যধিক মদ্যপানের পাশাপাশি অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল ও বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন বলে অভিযোগ। কয়েক জন মহিলার সঙ্গেও ওই যুবকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পুলিশ জেনেছে, সাঁকরাইল থেকে বাবা-মার পাঠানো টাকার উপরেই সুমন নির্ভর করতেন। এ জন্য পরিবারের সঙ্গে ওই যুবকের সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। প্রায়ই অশান্তি হত। তাই টাকা-পয়সা ও সম্পত্তির কারণেই এই খুন কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে।
পুলিশ জানায়, সিংহ বাড়িতে তল্লাশির সময়ে সুমনের মেজোমাসি কৃষ্ণা বসুর ঘর থেকে দু’পাটি রক্তমাখা চটি পাওয়া যায়। যার মধ্যে একটি সুমনের বাবা বিশ্বনাথ সিংহের এবং অন্যটি সুমনের ছোট ভাই সুমিতের। পুলিশের ধারণা, তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার ছক কষেই ওই দু’টি রক্তমাখা চটি ওই ঘরে এনে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া, সামনের ঘরের দরজার ছিটকিনি যে ভাবে দেওয়া ছিল যাতে এক লাথিতেই খুলে যায়। তদন্তকারীদের ধারণা, এ সবই আততায়ী ঠান্ডা মাথায় আগেই ঠিক করে রেখেছিল, যাতে মনে হয় চার জনের মধ্যে এক জন বাকি তিন জনকে খুন করে আত্মঘাতী হন।
|