পরিবারের চার জনের মৃতদেহ যিনি প্রথম দেখেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন, সিংহ পরিবারের বড় ছেলে সেই সুমনকেই এখন খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ!
গত ১৬ মে সন্ধ্যায় বাবা, মা, ভাই এবং বড় মাসির পচাগলা দেহ উদ্ধারের সময়ে সুমন পুলিশের কাছে দাবি করেন, ওই দিনই তিনি তাঁর লখনউয়ের কর্মস্থল থেকে ফেরেন ও দরজা ভেঙে পরিবারের চার জনকে মৃত অবস্থায় ঘরের ভিতরে পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ওই যুবক ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের সন্দেহ বাড়ছে।
পুলিশ শনিবার জানিয়েছে, বাবা, মা, ভাই এবং বড় মাসিকে শিবপুর শ্মশানঘাটে দাহ করার পরে শুক্রবার রাত থেকে সুমনের খোঁজ নেই। শনিবার সকালে তাঁর ছোট মাসি শিবপুর থানায় গিয়ে জানান, শ্মশান থেকে ওই যুবক তাঁর বাড়িতে যান। রাত তিনটে নাগাদ ওই মহিলার ঘুম ভাঙলে তিনি দেখেন, সদর দরজা খোলা। সুমন বাড়িতে নেই। ছোট মাসি আলপনা সোমের আরও দাবি, সুমন কোথায়, তিনি জানেন না। তবে পুলিশ নিখোঁজের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে, বাজে শিবপুর সেকেন্ড বাইলেনে ছোট মাসির বাড়ি থেকে দু’টি গামছা, একটি লুঙ্গি এবং টাকার ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যান সুমন। তার পরনে ছিল ট্রাউজার্স ও শার্ট। হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ জানায়, সুমন লখনউয়ের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থায় কাজ করেন। লখনউয়ের পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুমনের ব্যাপারে বিশদ তথ্য জানতে চাইছে পুলিশ।
গত ১৬ মে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাঁকরাইল থানা এলাকার দুইল্যা বাদামতলার একটি বাড়ি থেকে বিশ্বনাথ সিংহ, তাঁর স্ত্রী কল্পনা, ছোট ছেলে সুমিত ও বিশ্বনাথবাবুর শ্যালিকা কৃষ্ণা বসুর পচাগলা রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। ওঁদের মধ্যেই কেউ তিন জনকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন, নাকি অন্য কেউ এই ঘটনায় যুক্ত, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। তবে মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকে সুমনের আচরণ পুলিশের কাছে অস্বাভাবিক ঠেকছিল। |
এ দিন দুইল্য বাদামতলায় সিংহ পরিবারের বাড়ি পরিদর্শনে যান রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সুমন লিখিত অভিযোগ করেছেন, তাঁর বাবা, মা, ভাই এবং বড় মাসিকে খুন করা হয়েছে। পুলিশও খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। তবে কী কারণে খুন করা হল, কে খুন করল তা পরিষ্কার নয়। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মৃতদেহগুলি দেখে এবং যে ঘর থেকে সেগুলি উদ্ধার হয়, সেই ঘর থেকে কয়েকটি নমুনা সংগ্রহের পরে পুলিশও অনুমান করেছিল, ১৪ মে রাত থেকে ১৬ মে-র মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ওই চার জনের।
সুমনের আচরণে কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখছে পুলিশ? স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, ১৬ মে সন্ধ্যায় সুমন চিৎকার করে বলেন, বাবা, মা, ভাই বেঁচে নেই। অনেক ডাকাডাকির পরেও কেউ দরজা না খোলায় তিনি দরজা ভাঙেন। তার পরে ভিতরে গিয়ে সকলের মৃতদেহ দেখতে পান। কিছু ক্ষণ পরে ফের সুমন বেরিয়ে এসে পড়শিদের জানান, তাঁর মাসির ঘরের দরজা ভেঙেছেন। মিলেছে মাসির দেহও।
পুলিশের দাবি, যে ঘরে বিশ্বনাথবাবুদের দেহগুলি পড়েছিল, সেই ঘরে চতুর্থ এক জনের একাধিক পায়ের ছাপ মিলেছে। সেগুলি ১৬ মে-র আগের। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, পুলিশ সুমনকে নিয়ে সে ঘরে ঢোকার পরে তিনি হঠাৎই আলমারি থেকে ব্যাঙ্কের পাসবই বার করে তা খুঁটিয়ে দেখতে থাকেন। পরিবারের সকলের দেহ ওই অবস্থায় দেখে এক বারও ভেঙে পড়েননি সুমন।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বাড়িটি তল্লাশির সময়ে দোতলার উপরে চিলেকোঠার সিঁড়িতে রক্ত মাখা পায়ের ছাপ দেখা যায়। সুমনকে বলা হয়েছিল, দাহকাজ সেরে শুক্রবার রাতে নিজের বাড়িতে ফিরতে। তাঁর কাছে গিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করবে পুলিশ। কিন্তু সুমন তা না-করে সোজা তাঁর ছোটমাসির বাড়ি চলে যান এবং সেখান থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান।
|