কলকাতার রিজেন্ট পার্ক, চারু মার্কেট ও বেহালার পরে হাওড়ার সাঁকরাইল। বাবা-মা-ছেলে এবং এক আত্মীয়ার রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া গেল পাশাপাশি দু’টি বাড়িতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে সাঁকরাইলের দুইল্যা বাদামতলায়। চারটি দেহেই পচন ধরে গিয়েছিল। দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। পুলিশের অনুমান, এটা অন্যদের খুন করে আত্মহত্যার ঘটনা এবং সেটা ঘটেছে মঙ্গলবার। কেন খুন, সেই ব্যাপারে পুলিশ অন্ধকারে।
পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন বিশ্বনাথ সিংহ (৫৪), তাঁর স্ত্রী কল্পনা সিংহ (৪৬), তাঁদের ছেলে সুমিত সিংহ (২২)
|
স্বজন হারিয়ে।
বাড়ির বড় ছেলে
সুমন সিংহ। |
এবং কল্পনাদেবীর বোন কৃষ্ণা বসু (৪২)। সুমিত আন্দুল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্বনাথবাবুর দোতলা বাড়ির পাশের বাড়িতেই থাকতেন কৃষ্ণাদেবী এবং সেখানেই তাঁর রক্তাক্ত দেহ পাওয়া যায়। তিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন। বিশ্বনাথবাবু ছিলেন রাজ্যের খাদ্য-সরবরাহ বিভাগের কর্মী। তাঁর বড় ছেলে সুমন সিংহ কর্মসূত্রে লখনউয়ে থাকেন। এ দিন সন্ধ্যায় লখনউ থেকে এসে তিনি দেখেন, বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অনেক ডেকেও সাড়া না-পেয়ে তিনি পড়শিদের জানান। রাজা দত্ত নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। একটা জানলা খুলে দেখা যায়, ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বিশ্বনাথবাবু। তাঁর গায়ে জামাকাপড় নেই।” দরজা ভেঙে দেখা যায়, পড়ে আছেন নিথর কল্পনাদেবী এবং সুমিত। কল্পনাদেবীর বুকে আঘাতের চিহ্ন। বাবা-মা ও ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে পাশের বাড়িতে ছুটে যান সুমনবাবু। সেখানেও ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ মেলেনি। দরজা ভেঙে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন কৃষ্ণাদেবী। তাঁর বুকেও ধারালো অস্ত্রের ক্ষত।
পুলিশ তিনটি মৃতদেহের পাশে একটি কাঁচি এবং কৃষ্ণাদেবীর ঘরে রক্তমাখা এক পাটি চটি পেয়েছে। পুলিশের অনুমান, সেটি বিশ্বনাথবাবুর। দু’টি ঘরেই জিনিসপত্র লন্ডভন্ড এবং ধস্তাধস্তির চিহ্ন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, খুনি বাইরে থেকে আসেনি। ওই চার জনের মধ্যেই কেউ অন্যদের খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু কৃষ্ণাদেবীর ঘরের দরজাও ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। সেটা কী ভাবে সম্ভব, ধন্দ রয়েই গিয়েছে।
হাওড়ার পুলিশ সুপার ভরতলাল মীনা রাতে বলেন, “কী ভাবে চার জনের মৃত্যু হল, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়েছে। তাঁদের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
পুলিশি সূত্রের খবর, ২০১২-য় রিজেন্ট পার্কের মুর অ্যাভিনিউয়ে একই বাড়ির তিন জনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। তার আগে চারু মার্কেটেও এক পরিবারের চার জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল একটি বাড়ি থেকে। বেহালায় পাওয়া গিয়েছিল এক বাড়ির পাঁচ জনের দেহ। |