কলকাতা হাইকোর্টের ধনেখালিতে নাসিরুদ্দিন মৃত্যু মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দায়ের করল রাজ্য সরকার। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ ধনেখালির তৃণমূল সমর্থক কাজি নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। তার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে গেল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের তরফে সিআইডি-র আইনজীবী সুমন মুখোপাধ্যায় মামলাটি দেখছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করবেন আইনজীবী উদয় ললিত।
মামলার খুঁটিনাটি নিয়ে ললিতের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার সকালে দিল্লি গিয়েছেন সিআইডি-র স্পেশ্যাল সুপার রাজেশ যাদব, ধনেখালি কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি সুপার তাজ মহম্মদ, তদন্তকারী অফিসার সুবিমল বিশ্বাস এবং আইনজীবী সুমন মুখোপাধ্যায়। পিটিশন করার কথা স্বীকার করেছেন স্পেশ্যাল সুপার রাজেশ যাদব।
গত ১৮ জানুয়ারি ধনেখালি থানায় মারা যান তৃণমূল সমর্থক কাজি নাসিরুদ্দিন। অভিযোগ ওঠে, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র এবং থানার তৎকালীন ওসি বরুণ ঘোষ ষড়যন্ত্র করে কাজি নাসিরুদ্দিনকে খুন করেছেন। হাইকোর্টের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। গত সোমবার হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, তদন্তের কাজে আদালত খুশি নয়। তাই সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের মতে, “তদন্তের কাজে ঠিকঠাক এগিয়েছিল সিআইডি। এক জন সাব ইন্সপেক্টর-সহ তিন পুলিশ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওসি বরুণ ঘোষ এবং অসীমা পাত্রকে জেরা করাও হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আদালতের এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
তবে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের এই দাবি মানতে রাজি নন নাসিরুদ্দিনের পরিবারের সদস্যেরা। তাঁদের বক্তব্য, মৃতের দেহে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। নাসিরুদ্দিনকে গ্রেফতারের পরে বিধায়ক অসীমা পাত্র বেশ কয়েক বার থানার ওসিকে ফোন করেছিলেন। প্রশ্ন উঠেছিল, কেন তিনি এত বার ফোন করেছিলেন? বিধায়ক-ওসির সম্পর্ক নিয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ছিল। তদন্তের স্বার্থে কেন সিআইডি বিধায়ক-ওসি ফোনালাপের প্রতিলিপি নেয়নি? থানার ওসিকে ভাল করে কেন জেরা করা হয়নি? ওসি দাবি করেছিলেন, একটা মাত্র চড় মারা হয়েছে। অথচ ময়না-তদন্তের রিপোর্টে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের প্রমাণ রয়েছে। শুধুমাত্র এক জন সাব ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবলকে গ্রেফতার করে দায় সেরেছে সিআইডি। সিআইডি-র তদন্তকারী আধিকারিকেরা অবশ্য বলেছেন, “ধনেখালি থানার সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের হাতে রয়েছে। তাতে কোথাও মারধরের প্রমাণ নেই। সেই তথ্য উচ্চ আদালতে জানানো হবে।”
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “ধনেখালি কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে রাজ্য যে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে তা আমাদের মনে হয়েছিল। তাই আমরা ক্যাভিয়েট করে রেখেছিলাম।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কাছে এই মামলায় সাহায্য চেয়েছেন। সিঙ্ঘভি রাজি হয়েছেন বলে মান্নানের দাবি। |