ঝিলের ওপার থেকেই হৈ-চৈ শুনেছিলেন এপারের লোকজন। ঝিলের পাড়ে এসে দেখেন, ওপারে কারা যেন চিত্কার করে কিছু বলছেন। এর পরেই অন্ধকারের মধ্যে ঝিল থেকে দুই ছায়ামূর্তিকে উঠতে দেখে ‘চোর চোর’ বলে দু’জনকে কলার ধরে তুলে উত্তম-মধ্যম দিতে শুরু করেন তাঁরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ততক্ষণে প্রায় অচৈতন্য দুই যুবকের নাক-মুখ ফেটে রক্ত ঝরছে। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার জগাছা থানার কোনা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে জানাগেট মোড়ে।
গুরুতর আহত ওই দুই যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করার পরে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, তাঁরা চোর নন। ইভটিজার। দুই তরুণীকে উত্যক্ত করায় তাঁরাই লোকজন জড়ো করে যুবক দু’টিকে তাড়া করেছিলেন। প্রাণ বাঁচাতেই ঝিলে ঝাঁপ দেন ওই দুই ইভটিজার। ঝিলের ওপারের লোকজন তাঁদের ‘চোর’ ভেবে ঝিল থেকে তুলে বেধড়ক পিটিয়েছিলেন। শেষে পুলিশ এসে চোর সন্দেহে গ্রেফতার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় তাঁদের। পরে অবশ্য দুই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইভটিজিং-এর মামলা দায়ের হয় ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে। ধৃতদের নাম নাজিব দেওয়ান ও আনোয়ার মিদ্দে। তাঁরা বাঁকড়ার বাসিন্দা। |
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার রাত ৯টা নাগাদ দুই তরুণী বাস থেকে নেমে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের জানাগেট মোড়ের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন রিকশা ধরার জন্য। তখন দুই যুবক তাঁদের কাছে আসেন। অভিযোগ, তাঁরা তরুণীদের উত্যক্ত করতে শুরু করেন এবং তাঁদের পোশাক নিয়েও নানা অশ্লীল মন্তব্য করেন। তখনই ওই দুই তরুণী চিত্কার করে লোকজন ডাকতে শুরু করেন। ভয় পেয়ে গিয়ে ইভটিজাররা দৌড়াতে শুরু করেন।
জানাগেটের কাছে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “দুই মহিলার চিত্কার শুনে গিয়ে দেখি তাঁরা ছুটছেন। সামনে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে দু’টো ছেলে। আমিও ছুটতে থাকি।”
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যেখান দিয়ে দুই যুবক ছুটছিলেন তার পাশেই ছিল একটা বড় ঝিল। তার ওপারে ঘরবাড়ি ও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র আবাসন। এলাকার লোকজন বেরিয়ে এসেছেন দেখে দুই যুবক ঝিলে ঝাঁপ দেন। সাঁতার কেটে ওপারে গিয়ে ওঠেন।
ওপারের বাসিন্দারা জানান, তাঁরা চিত্কার শুনে ভেবেছিলেন চোরকে ওপারের লোকজন তাড়া করায় ঝিলে ঝাঁপ দিয়েছে। তাই দু’জন জল থেকে উঠতেই শুরু হয় মারধর। বাসিন্দারাই জগাছা থানায় খবর দেন। পুলিশ দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি সদর নিশাত পারভেজ বলেন, “আমরাও প্রথমে চোরের খবর পাই। পরে শুনি ইভটিজার।” |