|
|
|
|
বার্তা খ্যছিয়াঙের |
কাছের প্রতিবেশীই বেশি কাজের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ভারতীয় পণ্যের জন্য আরও বেশি করে চিনের বাজার খুলতে এ বার সক্রিয় ভূমিকা নেবে চিন সরকার। দিল্লি ছাড়ার আগে বণিকসভার কর্তাদের সামনে আজ এই আশ্বাস দিয়ে গেলেন চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং। সেই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একটি চিনা প্রবাদও উল্লেখ করেছেন তিনি, ‘দূরের আত্মীয়ের থেকে কাছের প্রতিবেশী অনেক বেশি কাজের’।
চিনা প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরেই বিদেশ মন্ত্রকে শুরু হয়েছে আলোচনা। কেন এমন কথা বললেন লি, তা নিয়ে নানা ব্যাখ্যা উঠছে। তবে বিদেশ মন্ত্রকের একটি অংশ মনে করছেন, নাম না-করে ভারত-জাপান-মার্কিন অক্ষ সম্পর্কে বার্তা দিতে চেয়েছেন চিন। জাপান বা আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে তাদের যে তীক্ষ্ন নজর রয়েছে, তা স্পষ্ট করে দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, ওই দেশগুলির তুলনায় চিন ভারতের অনেক বেশি কাছের। বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে বেজিঙের সক্রিয়তা তারই উদাহরণ।
অথচ গত কালই যৌথ বিবৃতিতে দু’দেশ জানিয়েছিল, কোনও তৃতীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে ছুতমার্গ রাখা হবে না। বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়নের প্রশ্নে ভারত এবং চিন যে কোনও প্রকল্পে তৃতীয় কোনও দেশের সঙ্গে কাজ করতে পারবে। কিন্তু আজ সকালে ফিকি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে চিনা প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, কাছের প্রতিবেশীকে যতটা কাজে লাগে, দূরের আত্মীয় সব সময় ততটা কাজের হয় না।”
কূটনীতিবিদদের বক্তব্য, আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই জাপান সফরে যাচ্ছেন মনমোহন সিংহ। শুধু যাচ্ছেন না, প্রথা ভেঙে জাপানে একটি বাড়তি দিন থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই দিনটিতে সে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। অনুপ্রবেশ নিয়ে চিনের সঙ্গে তপ্ত সম্পর্কের মধ্যেই দিল্লি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, সে সময় ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লি যে চাপ বেজিং-এর উপর তৈরি করেছিল, আজ তারই পাল্টা দিলেন লি। বছর শেষে বারাক ওবামার আমন্ত্রণে আমেরিকা যাওয়ার কথা মনমোহনের। কূটনীতিকদের বক্তব্য, বিষয়টির দিকে চিন যে নজর রাখছে, আজ তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন লি। এর আগে ভারতে এসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যখন ভারত-জাপান-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক আদানপ্রদান বাড়ানোর ডাক দিয়ে গোটা বিষয়টিকে ‘আর্ক অব ফ্রিডম’ অ্যাখ্যা দেয়, তখনও কড়া সমালোচনা করেছিল বেজিং।
চলতি সফরে অবশ্য ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভারসাম্য বাড়ানোর কথাই বারবার বলেছেন চিনের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “বাণিজ্য ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত হোক এটা আমরা কখনই পছন্দ করি না। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য যাতে সচল থাকে এবং ভারসাম্য বজায় থাকে, সেই সূত্রই খোঁজারই চেষ্টা করছি আমরা।” বণিকসভার কর্তাদের সামনে খ্যছিয়াং বলেন, “বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে। ভারতীয় পণ্য যাতে চিনের বাজারে ঢুকতে পারে, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বিশ্বাস করি, এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।” সাউথ ব্লকের বক্তব্য, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যে ভারসাম্য তৈরির দাবি নয়াদিল্লি বহু দিন ধরেই করছে। গত দশ বছরে দু’দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। তাই ভারত বারবার দাবি জানাচ্ছিল, অসাম্য কমানো হোক।
‘নমস্তে ইন্ডিয়া’ বলে আজকের বক্তৃতা শুরু করে বণিকসভার সামনে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করেছেন লি। সীমান্ত থেকে শুরু করে সব বকেয়া বিষয় সমাধানের মতো ‘প্রজ্ঞা’ দু’দেশের নেতৃত্বের রয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর কথায়, “ভারত এবং চিন পরস্পরের বিপদের কারণ নয়, বরং সহজাত ভাবেই সহযোগিতার অংশীদার। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্যের তুলনায় সাধারণ স্বার্থ বেশি।”
|
পুরনো খবর: তিক্ততা কাটিয়ে বন্ধুত্ব, হাত ধরল দিল্লি-বেজিং |
|
|
|
|
|