এ বার মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সভার অনুমতি দিল না পুলিশ। আর তা নিয়ে বামেদের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের দ্বন্দ্ব ফের চরমে উঠল। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুলিশ অনুমতি না-দিলেও হাজরা মোড়ে বুদ্ধবাবুর সভা হবেই। যদি আইন অমান্যের জন্য বাম নেতাদের গ্রেফতার করা হয়, তার জন্যও তাঁরা প্রস্তুত। সিপিএম নেতা মানব মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বুদ্ধবাবুর সভার অনুমতি না দেওয়া ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’।
আগামী শনিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড়ে সভা করার জন্য কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের তরফে ভবানীপুর থানার কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে চিঠি দেওয়া হয়েছিল ডিসি (সাউথ) এবং যুগ্ম কমিশনারের কাছেও। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও ভাবেই সভার অনুমতি দেওয়া যাবে না। পুলিশের অনুমতি পেতে স্বয়ং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র কথা বলেন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের সঙ্গে। কিন্তু তাতেও কোনও ফল হয়নি। এর পরে কলকাতা জেলা ফ্রন্ট বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুলিশি অনুমতি না-পেলেও ম্যাটাডোর ভ্যানের উপরে অস্থায়ী মঞ্চে সভা হবে। আলিমুদ্দিনে রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকেও মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে।
এর আগে ৭ মে শ্যামবাজারে সিপিএম নেতা গৌতম দেবের সভার অনুমতি দিয়েও পুলিশ তা বাতিল করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও অস্থায়ী মঞ্চে সভা হয়েছিল। গত বছর ৯ অক্টোবর কলকাতা পুরসভার সামনে বামেদের সভারও অনুমতি দেয়নি পুলিশ। প্রধান বক্তা ছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু। সে বারও ম্যাটাডোর-মঞ্চে সভা হয়েছিল। শ্যামবাজার ও পুর-ভবনের সামনে দুই সভাতেই ভিড় হয়েছিল ভাল। সে সব দৃষ্টান্ত দিয়ে কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ সেন এ দিন বলেছেন, “পুলিশ অনুমতি দিলে ভাল। না দিলেও সভা হবে।” প্রশ্ন হচ্ছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ‘জেড’ ক্যাটিগরি নিরাপত্তা পান। তিনি শারীরিক ভাবেও পুরো সুস্থ নন। এই পরিস্থিতিতে অস্থায়ী মঞ্চে সভা করা কতটা নিরাপদ? তবে সিপিএম সূত্রের খবর, বুদ্ধবাবু নিজে দলকে জানিয়েছেন, তিনি ওই সভায় যাবেন।
লালবাজারের পুলিশ-কর্তারা অবশ্য হাজরার সভার অনুমতির বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, বুদ্ধবাবুর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হাজরার মতো জায়গায় সভা করলে ভিড়-জনিত যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা সামলানো অসুবিধা বলেই ভবানীপুর থানা অনুমতি দেয়নি। প্রসঙ্গত, আদালতের নজরদারিতে সারদা-কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের দাবিতে এবং শাসক দলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এ দিনই পুলিশের নির্দেশ উপেক্ষা করে কলকাতায় কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিল করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন সন্তোষ রানা-সহ ‘সংগ্রামী বাম সমন্বয় মঞ্চে’র ৫২ জন নেতা-সমর্থক।
সাম্প্রতিক কালের নানা উদাহরণ দিয়েই দিলীপবাবুর অভিযোগ, “সরকার মিছিল-মিটিং করার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে।” তাঁরা রাস্তা বন্ধ করে সভা করবেন না বলে জানিয়েই সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানববাবুর দাবি, “আমাদের সভা না করতে দেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওখানে অসংখ্য বার রাস্তা বন্ধ করে সভা করেছেন। ক’দিন আগে কংগ্রেসও ওখানে কর্মসূচি পালন করেছে।” রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কলকাতায় সভা করতে চাইলেই পুলিশ আপত্তি করছে জানিয়ে মানববাবু বলেন, “যেন অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে!” হাজরা মোড়ের কাছেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। সেখান থেকে আন্দোলন করেই তাঁর উত্থান। এ সব কারণেই কি অনুমতি মিলছে না? দিলীপবাবুর বক্তব্য, “তা হলে শ্যামবাজার বা পুর-ভবনের সামনে কেন অনুমতি দেওয়া হয়নি? আসলে আমাদের কোও সভা করতে দিতেই সরকারের আপত্তি!” বামেদের অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা অবশ্য বলেন, “আমরা আইনের শাসন মেনে চলি। পুলিশ যা উপযুক্ত মনে করেছে, তা-ই করেছে। অনর্থক আমাদের জড়ানো হচ্ছে।”
সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত, ছাত্র নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত-সহ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০-৩১ মে পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে আন্দোলন চলছে বলে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান। সেই কর্মসূচিরই অঙ্গ হাজরার সভা। নানা কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরের সামনে ২৮ মে বিক্ষোভ সমাবেশ, ২৯ মে সর্বত্র মিছিলের পরে ৩১ মে
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আইন অমান্য কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিমানবাবু-সহ রাজ্য বামফ্রন্টের নেতৃত্ব তাতে অংশ নেবেন। জেলাতেও বিক্ষোভ ও আইন অমান্য হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বিমানবাবু জানান, দার্জিলিং শহরেও বামেরা কর্মসূচি পালন করবে। |