লোকাল বাস বা অটো ধরার ঝামেলা ছাড়াই নিখরচায় বাসে চেপে অফিসটাইমের যাত্রীরা পৌঁছে যাবেন মেট্রো রেলের স্টেশন পর্যন্ত। আজ, বুধবার থেকে অভিনব এই পরিষেবা চালু হচ্ছে নাগেরবাজার ও দমদমের মধ্যে। এলাকার বিধায়ক ব্রাত্য বসুর দাবি, সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে এই ধরনের পরিষেবা রাজ্যে প্রথম। ঠিক হয়েছে, বাসটি চালানোর খরচ বহন করা হবে পুর-চেয়ারম্যান পারিষদের তহবিলের অংশ থেকে।
ব্রাত্যবাবু বলেন, “কোনও জায়গা থেকে মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত নিখরচায় যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়ার এমন ব্যবস্থা কলকাতা শহরে ও পশ্চিমবঙ্গে প্রথম। নাগেরবাজার এলাকায় অফিসটাইমে বাস ও অটোয় যাত্রীদের ভিড়ের কথা ভেবেই এই ধরনের উদ্যোগের কথা মাথায় আসে। বিষয়টি আমি পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে বলি। বাসটি দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদদের তত্ত্বাবধানে চলবে।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বিদেশে অনেক বড় বড় শহরে বিমানবন্দর বা স্টেশন থেকে এ রকম পরিষেবা আছে। দমদমে এমন পরিষেবা চালু হলে অফিসের ব্যস্ত সময়ে বহু যাত্রী উপকৃত হবেন।” |
বাতানুকূল এই বাস চালু হল সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে। |
সকাল ও সন্ধ্যার অফিসটাইমে দমদম মেট্রো স্টেশনের কাছে ও নাগেরবাজারে অটোর জন্য লম্বা লাইন রোজকার পরিচিত দৃশ্য। এমনকী, এই সময়ে দমদম রোডে বাদুড়ঝোলা বাসও প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়। অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই নানা কারণে অটোর সংখ্যা কম থাকায় যাত্রীদের হয়রানি চরমে ওঠে। এমনকী, দমদম রোডে যানজটের জন্য অনেক সময়ে অটোচালকরা অটো বন্ধ করে দেন। অনেক সময়ে নানা কারণে বাসের সংখ্যাও কমে যায়। বুধবার থেকে নিত্যযাত্রীদের এই অসুবিধা আর থাকবে না বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী।
মিনিবাসের মতো চেহারার সাদা রঙের এই বাসে বসার আসন ৩৫টি। এ ছাড়া, দাঁড়িয়েও যাত্রীরা যেতে পারবেন। সকাল আটটা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত এবং বিকেলে পাঁচটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত এই বাসটি নাগেরবাজার থেকে দমদম স্টেশনের মধ্যে চলাচল করবে। দক্ষিণ দমদম পুরসভা সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে বাসটির আট থেকে দশটি ট্রিপ দেবে বলে আপাতত ঠিক হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে সময় ও ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল প্রবীর পাল। প্রবীরবাবু বলেন, “বাসটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। আপাতত হিসেব করে দেখা গিয়েছে, তেল ও বাস-ভাড়া বাবদ মাসে কুড়ি হাজার টাকার মতো খরচ হবে। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদের তহবিলের এক অংশ থেকে এই খরচ বহন করা হবে।” |
নাগেরবাজার থেকে দমদম যাওয়ার সেই বাস। |
মেট্রোর সঙ্গে সহজ সংযোগের জন্য শহরে কি এ রকম আরও বাস রুট চালু করা হবে? পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “দমদমে নিখরচায় এই পরিষেবার উদ্যোগটা ব্রাত্যের। বিভিন্ন রুটের সঙ্গে মেট্রোর যোগাযাগ সহজ করার জন্য আমাদের এমন পরিকল্পনা আছে। তবে বিনামূল্যে নয়। টিকিট কেটে এই ধরনের বাস-পরিষেবা পাওয়া যাবে।”
এ দিকে, তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে যানবাহনের সমস্যা মেটাতে মঙ্গলবার শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত বাস-পরিষেবা চালু করল রাজ্য সরকার। এ দিন সকালে পাঁচ নম্বর সেক্টরের ওয়েবেল টেকনোপলিসের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই পরিষেবা চালু করে রাজ্য পরিবহণ দফতর।
সর্বক্ষণের বাস পরিষেবা চালু করতে রাজারহাট-নিউ টাউন এবং পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন। সেই চাহিদা বিবেচনায় রেখে ওই দু’টি তথ্যপ্রযুক্তি তালুক থেকে উল্টোডাঙা, শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন এবং জোকা পর্যন্ত একাধিক রুটে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ভলভো বাস পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পুরসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
সকাল ছ’টা থেকে ১২টা ও সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর নিউটাউন থানার কাছে ও পাঁচ নম্বর সেক্টরের এসডিএফ বিল্ডিং-এর কাছ থেকে এই বাস মিলবে বলে জানায় পরিবহণ দফতর। বাসভাড়াও সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেই থাকবে বলে সূত্রের খবর।
|