শুধু ‘সুবর্ণরেখা’ই নয়, বিশ্বভারতীর মালিকানাধীন আরও কয়েকটি বাড়িতে উচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর দাবি, গত এপ্রিল মাস থেকেই ওই সব সম্পত্তির দখলদারদের আইনি নোটিস পাঠানো শুরু হয়েছে। ওই সব সম্পত্তিতে নজর রাখতে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীও মোতায়েন করেছে বিশ্বভারতী। যদিও ওই সমস্ত বাড়ি বা সম্পত্তির বর্তমান উত্তরাধিকারীদের একাংশের অভিযোগ, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বভারতী ওই সম্পত্তিগুলি জোর করে দখল করে নিতে চাইছে।
বিশ্বভারতী ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ জনকে নোটিস ধরিয়েছে বিশ্বভারতী। পূর্বপল্লি এলাকায় থাকা বাড়িগুলি ছাড়াও নোটিস পাঠানো হয়েছে গুরুপল্লি এলাকার কিছু বাড়িতেও। নোটিসে বলা হয়েছে, ‘পাবলিক প্রেমিসেস অ্যাক্ট ১৯৭১’-এর ধারা ১২ অনুযায়ী (বেআইনি দখল উচ্ছেদ) এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল। বিশ্বভারতীর জনসংযোগ কমিটির চেয়ারপার্সন অধ্যাপিকা সবুজকলি সেন বলেন, “দখল হয়ে যাওয়া বিশ্বভারতীর সম্পত্তি উদ্ধার করতেই এই উদ্যোগ।” বিশ্বভারতীর এই ‘উচ্ছেদ অভিযানে’ আশ্রমিকদের অনেকেই অবশ্য ক্ষুব্ধ। |
গত ১৬ এপ্রিল মারা গিয়েছিলেন পূর্বপল্লির বাসিন্দা জয়ন্তী রায়চৌধুরী। তার ঠিক ৪৮ ঘণ্টার মাথায় সেই ১২২, পূর্বপল্লি-র ঠিকানায় উচ্ছেদের নোটিস পাঠায় বিশ্বভারতী। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতীর কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য ওই বাড়িটি লিজে পেয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি তথা রবীন্দ্রভবনের দীর্ঘদিনের কিউরেটর প্রয়াত শোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়। নিঃসন্তান শোভনবাবু স্ত্রী পূর্ণিমাকে (কবিপত্নী মৃণালিনীদেবীর ভাইঝি) নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন। জয়ন্তী পূর্ণিমাদেবীরই অবিবাহিত বোন। তাঁর মৃত্যুর পরে বিশ্বভারতী দরজায় নোটিস টাঙিয়ে দিয়ে বাড়িটি দখল করেছে। প্রয়াত শোভনবাবুর ভাইপো মিতেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় ও ভাইঝি ঊর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায়-এর অভিযোগ, “বিশ্বভারতীর সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ এখনও পূর্ণ হয়নি। মাসিমার মৃত্যুর দু’ দিনের মাথায় বিশ্বভারতীর এই আচরণ অত্যন্ত অসংবেদনশীল।”
বিশ্বভারতীর অবশ্য দাবি, বিশ্বভারতীর লিজে দেওয়া বহু বাড়ি-জমি উত্তরাধিকারীরা বেআইনি ভাবে বিক্রি করেছেন। ফলে বহু সম্পত্তিই বেদখল হয়েছে। বিশ্বভারতীর সম্মতি ছাড়াই বাড়ির চেহারাও পাল্টে ফেলা হয়েছে। তাই পূর্বপল্লি লিজ প্লট ৩০, ৩১, ৩২, ৩৬, ৫২, ৬৭, ১৩০, ৩১১-সহ বহু বাড়িতে নোটিস পাঠিয়েছে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর এই তৎপরতা নিয়ে আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি বলছি না যে, এখন যা হচ্ছে সব খারাপ হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে আরও মানবিক হওয়া দরকার।” |