জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি, কোনও শহরেই নির্যাতিতা, অসহায় মহিলাদের জন্য কোন সরকারি হোম এখনও তৈরি না-হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে নানা মহলে। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে নানা সময়ে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি বেসরকারি হোমে সোমা পাল কুণ্ডু নামে এক স্বামী পরিত্যক্তা তরুণীর উপরে অত্যাচারের অভিযোগ সামনে আসায় ওই ক্ষোভ আরও বেড়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা স্বীকার করেছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য তথা শিলিগুড়ির আইনজীবী জ্যোত্স্না অগ্রবাল। তিনি বলেন, “শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, দুটি শহরই উত্তরবঙ্গের প্রেক্ষাপটে অবস্থানগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাম আমলে বহুবার আমরা যে কোনও এক জায়গায় সরকারি হোম তৈরির জন্য অনুরোধ করেছি। লাভ হয়নি। এ বার সেই কাজ করার চেষ্টা করছি। জেলাশাসকদের কাছে সব জানিয়ে জমির জন্য বলা হয়েছে। নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের সঙ্গে কথা হয়েছে। দেখা যাক কত তাড়াতাড়ি কী করা যায়!”
প্রসঙ্গত, স্বামী পরিত্যক্তা তরুণী সোমাকে প্রায় ৫ মাস আগে প্রধাননগরের ওই হোমে রাখা হয়। সে জন্য ফি মাসে ৫২০০ টাকা দিতে হতো বাড়ির লোকজনকে। অথচ ওই হোমে মহিলা আবাসিক ও কর্মী থাকার কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। হোমের পুরুষ আবাসিকরা সোমার উপরে নানা ভাবে অত্যাচার করে বলে অভিযোগ। মারধর করে সোমার দাঁত ভেঙে গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া বলেও প্রধাননগর থানার পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। ওই ঘটনায় পুলিশ প্রথমে ঢিলেমি শুরু করলে দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্রমোহন খবর পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে হোমের দুজন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার দুজনকে আদালতে হাজির করানো হলে তাদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলাশাসক বলেন, “অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। জেলার সব কটি বেসরকারি হোমের পরিকাঠামো ও কাজকর্ম নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছি।”
পুরসভা ও প্রশাসন সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির কয়েকটি এলাকায় একাধিক বেসরকারি হোম রয়েছে। ওই সব হোমের একাংশের কাজকর্ম নিয়ে নানা সময়ে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের কাছেও বেশ কিছু অভিযোগ গিয়েছে। বাস্তবে কোনও হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এখনও তদন্তই হয়নি বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, ওই হোমগুলির ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে তা অবশ্য পুরসভার কাছে স্পষ্ট নয়। যেমন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “এমন বেসরকারি হোমের বিষয়টি জানা নেই। বিশদে খোঁজ নেব।” একই ভাবে জলপাইগুড়ি পুরসভাও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছে। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “হোম চালানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়না ঠিকই, তবে পুরসভাকে বিবরণ জানাতে হয়। সেটিও অনেক ক্ষেত্রে হয় না, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।” জলপাইগুড়ি জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক দেবদাস বিশ্বাস বলেন, “জলপাইগুড়ি শহরে মহিলাদের চারটি হোম রয়েছে। সেগুলির নথিপত্র খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। এর বাইরে কোনও হোম থাকার অভিযোগ এলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |