রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় • জলপাইগুড়ি |
বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক না-হলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর দ্রুত নেমে জলপাইগুড়ি জেলায় জলকষ্ট দেখা দিতে পারে। এ আশঙ্কা করছেন রাজ্য জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতর কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার সংরক্ষণ জরুরি। ওই দফতরের বাস্তুকার কল্যাণ সরকার বলেছেন, “জেলার উত্তরে পাহাড়ি অঞ্চল এবং সমতলে সারা বছরের বদলে একটা নির্দ্দিষ্ট সময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য জলস্তরের তেমন তারতম্য ঘটছে না। কিন্তু বৃষ্টিপাত কম হলে উদ্বেগজনক সমস্যার সৃষ্টি হবে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাবে। সর্বত্র জলকষ্ট বাড়বে।”
গত ৪ বছরে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জলপাইগুড়ি জেলা জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের কর্তারা দেখেছেন, অক্টোবর মাসে বর্ষা বিদায় নেওয়ার পরে ছয় মাসে বৃষ্টি প্রায় হচ্ছে না বললে চলে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ১ মিমি এবং মার্চে ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ২০১০ সালে নভেম্বর মাসে ২ মিমি বৃষ্টির পরে মার্চ মাস পর্যন্ত শুখা কেটেছে। ২০১১-র নভেম্বরে ৬.২৫ মিমি, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। মার্চে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩.২৫ মিমি। ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৩-র ১০ এপ্রিল পর্যন্ত শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন ৯ মিমি এবং মার্চে এক দিন ৭.৫ মিমি বৃষ্টি হয়।
জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা যায়, জলপাইগুড়ির ১৩ ব্লকের মধ্যে নাগরাকাটা, মাদারিহাট, মালবাজার, কালচিনি, মেটেলি ব্লকে বর্ষার আগে জলস্তর নেমে যাচ্ছে। নাগরাকাটায় জলস্তর থাকে ৯.১০ মিটার, মাদারিহাটে ৪.৯০ মিটার, মালবাজারে ৫.৯০ মিটার, কালচিনি এলাকায় ৪.৩৫ মিটার ও মেটেলিতে ৬.২৫ মিটার। বাকি আটটি ব্লকে জলস্তর গড়ে ৩ থেকে ৩.৫-এর মধ্যে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেলে ওই আটটি ব্লকেও জলকষ্ট বাড়বে।
কেন জলস্তর নামছে?
জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান, ভূগর্ভস্থ জলের অপচয় রোধ করার জন্য রাজ্য সরকার ২০০৫ সালে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল গ্রাউন্ড ওয়াটার রিসোর্সেস কন্ট্রোল অ্যান্ড রেগুলেশন অ্যাক্ট’ চালু করে। ওই আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি জেলায় ভূগর্ভস্থ জলের বেশি ব্যবহার হয় চা বাগানগুলিতে। ৪০ শতাংশ চা বাগান আইন মেনে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছে। বাকি ৬০ শতাংশ চা বাগান বেআইনিভাবে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করে বলে অভিযোগ। দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে আইন তৈরির পরে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের জন্য জেলায় ১৩০০ আবেদনপত্র জমা পড়েছে। ১২০০ জনকে এর অনুমতি দেওয়া হয়। ব্যক্তি বা সংস্থা অনুমতি না নিয়ে জল তুললে জরিমানা হবে। প্রথম বারের জন্য ৫ হাজার। ফের ঘটলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে।
কিন্তু আইন থাকলেও জানেন না সাধারণ মানুষ। আইন সম্পর্কে সচেতন করতে জেলায় সচেতনতা শিবিরও করা হয়নি। সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি রাজ্য জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত ডিরেক্টর সুরজিৎ দাস। তিনি বলেন, “এ কথা স্বীকার করতে বাধা নেই জেলায় ওই আইন নিয়ে সচেতনতা শিবির করা হয়নি। শিবিরের পরিকল্পনা হয়েছে। জেলা স্তর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় শিবির করা হবে।” |