কুনকি ‘কাকু’-কে টা-টা করে মায়ের কাছেই ফিরল সে
কাশ কালো করে এসেছে। হাওয়ায় বৃষ্টির গন্ধ। সোঁদা-শ্যামলা পরিবেশে এমন বুক সমান উঁচু পুরন্ডি ঘাসের জঙ্গল, ওরা আমগ্ন, হারিয়ে গিয়েছিল প্রায়।
‘মা, ও মা!’
সাড়া মেলেনি। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাসি-পিসি তুতো ভাইয়েরা এমনকী দলের সমবয়সী যারা, তারাও এমন ঘাস-মগ্ন হয়ে পড়েছে যে তার কথা শোনার সময়ই নেই। কিন্তু তার তো ছোট্ট পেট ভরতে কতক্ষণ। তাই খানিক ঘাস খেয়েই সে মেতে উঠেছিল পাখপাখালি, বাঁদর, কাঠবেড়ালিদের নিয়ে। হঠাৎই নজরে পড়ে, খানিক দূরে তার দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে বিরাট এক ‘কাকু’। নাই বা হল দলের, কিন্তু তার দিকে যখন তাকিয়ে রয়েছে তখন ও নিশ্চয় একটু খেলবে। —‘ও কাকু খেলবে?’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই ছুটেছিল অচেনা কাকুর দিকে।
রবিবার বিকেলে সে খেলার মাঠ ছিল, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের পশ্চিম রেঞ্জের ঘন ঘাসের জঙ্গল, তোর্সা ৩ নম্বর কম্পার্টমেন্ট।
অঙ্কণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
লোকালয় ঘেঁষা সেই জঙ্গলে ঐরাবতেরা নেমেছে শুনে এসে হাজির হয়েছিলেন বনকর্মীরা। সঙ্গে এনেছিলেন বড়সড় চেহারার মাকনা কুনকি নীলকান্তকে। কে জানত, জাতভাইয়ের সঙ্গে এমন ভাব জমিয়ে বসবে মাস দুয়েকের ওই দুষ্টু হস্তি-ছানা! বুনোদের ছেড়ে বনকর্মীরা ফেরার পথ ধরলে সেই ছোট্ট খেলুড়েও জঙ্গলে না ফিরে ধরেছিল ‘কাকুর’ সঙ্গ। জঙ্গলে এ বার ঘাসের বড় আকাল। পুরন্ডির মতো এমন প্রিয় খাবার পেয়ে গিয়ে হাতিরা তাই খাবারেই ডুবে গিয়েছিল। খেয়ালই করেনি কনিষ্ঠটি কখন দল-ছুট হওয়ার চেষ্টা করছে।
এ দিকে বনকর্মীরা তো ভয়ে কাঁটা। কে জানে বাবা ‘ছেলেধরা’ ভেবে বিশ-পঁচিশটা হাতির দলটি যদি আক্রমণ করে বসে। কিঞ্চিৎ অস্বস্তিতে পড়ে যায় পোড় খাওয়া কুনকি নীলকান্ত। বেজার মুখে সে বাচ্চাটিকে বার কয়েক হটানোর চেষ্টা করে ঠিকই কিন্তু ভবি ভোলার নয়। কখনও নীলকান্তের পেটের তলায় ঢুকে কখনও বা পায়ের ফাঁক দিয়ে ছুটে, গড়াগড়ি খেয়ে কাকুকে জেরবার করে ছাড়ে সে।
কিন্তু নীলকান্তকে মা বলে ভুল করেনি তো? ঘটনাটি শুনে বেশ মজা পান হস্তি বিশেষজ্ঞ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী। তিনি বলেন, “না বাপু, বুনো শাবকের এমনতর ভ্রান্তির কথা আগে কখনও শুনিনি। কোনটি মাকনা আর কোনটি মাদি সে তো শাবক টের পাবেই।” অনেকক্ষণ দুষ্টুমির পরে আচমকাই তার মায়ের নজরে পড়ে ব্যাপারটা। হুঙ্কার ছেড়ে ধমক লাগিয়ে সে যেন বলে, ‘উঁঃ, কী হচ্ছে কী!’
নীলকান্তের দিকে এগিয়ে এসে শাবকের ঈষৎ কান মুলে দেয় সে। তারপর পিঠে শুঁড় বুলিয়ে যেন বলে, ‘ঢের দুষ্টুমি হয়েছে। কাকুকে আর বিরক্ত কোরো না। চলো।’
যাবার আগে এক বার শুধু পিছু ফিরে তাকায় নীলকান্তের দিকে।
—‘কাকু টা-টা!’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.