|
|
|
|
গরুর দুধ বাড়াতে ভরসা ঘাস, অভাব জোগানে
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
গো-খাদ্যের প্রয়োজনে ঘাস চাষ এ বার জরুরি হয়ে পড়েছে রাজ্যে। চাষিদের বক্তব্য, অর্থকরী ফসল ফলিয়ে ঘাসচাষের জন্য জমি পাওয়াই মুশকিল। যদিও গো-খাদ্য হিসাবে সবুজ ঘাসের কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করেন পশু বিশেষজ্ঞেরা। সে কথা বিলক্ষণ জানেন গো-পালকেরাও। ঘাসের অভাবে গরুর দুধের পরিমাণ কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। তারা খর্বকায় হচ্ছে। বন্ধ্যাত্ব-সহ নানা অসুখ-বিসুখও বাড়ছে।
যাঁরা গরু পালন করেন, তাঁদেরকে নিজের জমিতেই সুবিধা মতো ঘাষ চাষের পরামর্শ দেয় প্রাণিসম্পদ দফতর। চাষিদের সদিচ্ছার উপরেই এ ক্ষেত্রে ভরসা করতে হয় সরকারকে। যদিও সবুজ ঘাস চাষ কিংবা চারণ ভূমির উন্নয়ন নিয়ে সরকারি ভাবে কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ করা হয় না বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর থেকে ওই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা অবশ্য সরকারি নির্দেশিকায় বলা আছে।
কী সেই ব্যবস্থা?
প্রথমত, চারণ ভূমির উন্নয়ন, দ্বিতীয়ত, ঘাস চাষ। তৃতীয়ত, প্রচারের জন্য সবুজ গো-খাদ্য উৎপাদনের প্রদর্শনী ক্ষেত্র তৈরি করা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের হুগলি জেলার কয়েক জন ব্লক আধিকারিকের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে গ্রীষ্মকালে ‘গামা’ ঘাসের মিনিকিট এবং শীতকালীন ‘বারসিম’ ঘাসের মিনিকিট পাওয়া যেত। কিন্তু তা গত এক বছর ধরে মিলছে না। তা ছাড়া, ধান-আলু-সর্ষে ইত্যাদি অর্থকরী ফসলের জমিতে ঘাস চাষে চাষিদের উৎসাহিত করা কঠিন। অতীতে গো-পালকদের দেওয়া ঘাসের মিনিকিট অধিকাংশই নষ্ট হয়েছে। |
|
কমে আসছে গোখাদ্য।—নিজস্ব চিত্র। |
এ নিয়ে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের রাজ্য অধিকর্তা কমলাকান্ত সাহা বলেন, “গো-খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত জরুরি সবুজ ঘাস। কিন্তু তা নিয়ে রাজ্য সরকারের নিজস্ব কোনও প্রকল্প নেই। আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্প চালু আছে। তাতে ঘাসের বীজ দেওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে হাতে গোনা কয়েক জনকে বেছে নিতে হয়। সবুজ ঘাসের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে কৃষি দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে কিছু করা যায় কিনা, আমরা পরিকল্পনা করছি।”
গোঘাট ২ ব্লকের কুমারগজ্ঞের প্রধান শ্যামাপদ মুদি বলেন, “ঘাস চাষের মত জমি নেই। চারণ ভূমিগুলিও কৃষি জমি হয়ে গিয়েছে। সর্বোপরী, আমাদের কাছে গো-পালক বা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর থেকে কোনও প্রস্তাবও নেই।” আরামবাগ মহকুমার বেশ কিছু পঞ্চায়েত-সহ জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত প্রধানই জমির সমস্যার কথা বলেছেন।
গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে মোট উৎপাদন খরচের ৭০-৭৫ ভাগ হল খাদ্য খরচ। নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ গো পালনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। গরুকে নীরোগ এবং ভাল চেহারার করে তোলার জন্য দু’ধরনের খাদ্যের সমন্বয় জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। আঁশ জাতীয় এবং দানাদার। আঁশ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে পড়ে খড়-সবুজ ঘাস-গাছের পাতা ইত্যাদি। দানাদার খাদ্য হল, খোল, ভুশি, চালের কুঁড়ো, খুদ, লবণ ইত্যাদি। এ ছাড়াও, ভিটামিন খাওয়ানোরও পরামর্শ দেওয়া হয় গরুকে। উদ্ভিদজাত বিভিন্ন খোল, ফ্যান খাওয়ালেও দুধের পরিমাণ বাড়ে। আর খাওয়ানোর পরিমাণ গরুর ইচ্ছানুযায়ী নির্ধারণ করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ গো-পালকের এত সব সামর্থ্য থাকে না। গো-খাদ্য হিসাবে বারোমাসের ভরসা খড়।
কিন্তু খানাকুল-সহ আরামবাগ মহকুমার মতো বন্যাপ্রবণ এলাকার অনেক জায়গায় বর্ষায় আমন ধান চাষ না হওয়ায় খড়ও মেলে না। বন্যা ও পরবর্তী কিছু দিন পর্যন্ত গোখাদ্যের অভাব খুবই দেখা দেয় এই সব জায়গায়। সঙ্কটকালে গরু বিক্রি করে দেওয়ার প্রচুর নজিরও আছে। গোঘাটের চাতরা গ্রামের এক গো-পালক তথা দুধ ব্যবসায়ী শান্তি ঘোষের অভিযোগ, বাজার থেকে কেনা খাবার জুটিয়ে একাধিক গরু প্রতিপালন সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া, দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবুজ ঘাসের কোনও বিকল্প নেই বলেই তাঁর অভিজ্ঞতা। কিন্তু সবুজ ঘাসের অভাব মেটাতে সরকারি উদ্যোগহীনতায় তাঁর মতো বহু গো-পালকই হতাশ। সরকারের কাছে ঠিক কী প্রত্যাশা তাঁদের? গো-পালকদের মতে, বিনা খরচে নিয়মিত সকলকে ঘাসের বীজ দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে মূল ধারার চাষের পাশাপাশি কী ভাবে ঘাসের চাষ করা যায়, তা নিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হোক। এখনও কোথাও কোথাও খাস জমি পড়ে আছে। তা চারণ ভূমিতে পরিণত করা হোক।
গোঘাট-২ ব্লক প্রাণিসম্পদ বিকাশ আধিকারিক শুভেন্দু হালদার বলেন, “সবুজ ঘাস পাওয়া নিয়ে চাষিদের ব্যাপক দাবি আছে ঠিকই, কিন্তু সবুজ ঘাস চাষ করার মতো জমি মিলছে না। আমরা প্রচার চালাচ্ছি, চাষিরা যাতে আলু-সহ অন্য চাষের জমির গায়ে ফাঁকা জায়গায় ঘাস চাষ করেন। সরকারি বীজের উপরে ভরসা না রেখে কৃষি খামার থেকে ঘাসের বীজ সংগ্রহ করেন।
খানিকটা আশার আলো দেখিয়েছেন হুগলি জেলার প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের জেলা উপঅধিকর্তা সোমনাথ মাইতি। তিনি জানান, “সবুজ ঘাসের বিকল্প না হলেও কিছুটা পরিপূরক ‘এ্যাজোলা’ নামে একটি প্রকল্প খুব শীঘ্রই আসছে। এটি হল এক ধরনের এককোষী উদ্ভিদ। যা কোনও জলা বা পুকুরে চাষ করা যাবে।” |
|
|
|
|
|