সরকার চায় না, তাই বানচাল হয়ে গেল ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। বাড়ানো গেল না পরিষেবা-খাতে আয়ও। এই অবস্থায় ‘কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’ (কেআইটি)-এর ফ্ল্যাটগুলির ক্ষেত্রে ভর্তুকির টাকা নিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। বছরে সাড়ে সাত কোটি টাকার ঘাটতি পূরণ হবে কী ভাবে তার উত্তর খুঁজতে বৈঠকে বসেছিলেন কেআইটি-কর্তারা। সমাধান মেলেনি।
প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক আগে বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে শুরু হয় কেআইটি-র ভাড়ার ফ্ল্যাট তৈরির কাজ। কলকাতার ২৬টি জায়গায় এই সব ফ্ল্যাটে নামমাত্র ভাড়ায় থাকে প্রায় আট হাজার পরিবার। এখন ভাড়া বাবদ ফি বছর আয় ৩৫ লক্ষ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদ্যুৎ মাসুল-বাবদ ব্যয় আট কোটি টাকা। বাম আমলে সরকারের তরফে এই ফ্ল্যাটগুলির ভাড়া বাড়াতে না-পেরে নামমাত্র মূল্যে আবাসিকদের বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে সাড়া মেলে যৎসামান্য। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ঠিক হয়, কয়েক দশক আগেকার এই ভাড়ার হার এ বার বাড়ানো হবে। মাস দুই আগে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। সংস্থার কর্তারা জানান, “মহাকরণের সিদ্ধান্তে ভাড়া বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হল।”
কতটা ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছিল? কেআইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুধীন নন্দীর জবাব, ফ্ল্যাট-পিছু মাসে ভাড়া ছিল মূলত ১৫ টাকা অথবা ২৫ টাকা। ভাড়াটে আইন মেনেই তা চার গুণ বাড়ানো হয়েছিল। এ ছাড়া, আলো-জল প্রভৃতির জন্য পরিষেবা-বাবদ ফ্ল্যাট-পিছু বছরে কমবেশি সাড়ে তিনশো টাকা ধার্য হয়েছিল।” তা হলে ভাড়া বৃদ্ধি হল না কেন? সুধীনবাবু বলেন, “এ ব্যাপারে আবাসিকদের একাংশের আপত্তিকে রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়েছে।”
এতকাল কেন ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রূপায়ণের চেষ্টা হয়নি? কেআইটি-র এক কর্তা বলেন, কয়েক হাজার আবাসিককে খুশি রাখতে বাম-ডান কোনও সরকারই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত কলকাতা পুরসভা তার আয়ের দুই শতাংশ আমাদের দিত। এ ছাড়া, ২০০৬ পর্যন্ত পুর-কর্তৃপক্ষ ফ্ল্যাট-বাড়ি কেনাবেচার রেজিস্ট্রেশন খাতে প্রাপ্ত টাকার দুই শতাংশ দিতেন। ফলে, ভাড়ার ফ্ল্যাটের আর্থিক ঘাটতি পূরণে আগে ততটা অসুবিধা হয়নি।
গত কয়েক বছরে এক দিকে এই আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে, অন্য দিকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভার টাকার জোগান।
কেআইটি সূত্রের খবর, সিংহিবাগান, ক্রিস্টোফার রোড এবং হরিনাথ দে রোডে কেআইটি আবাসনের পুরনো ফ্ল্যাটগুলির সিংহভাগ আবাসিকদের বিক্রি করা সম্ভব হয়েছিল। দর ধার্য হয়েছিল দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলের জন্য বর্গফুট-পিছু ৭২ টাকা, প্রথম ও চতুর্থ তলের জন্য বর্গফুট-পিছু ৬৬ টাকা। সিংহিবাগান আবাসিক সমিতির কর্তা সাম্যব্রত সিংহ বলেন, “আমাদের এখানে পাঁচটি ব্লকে ২০৪টি ফ্ল্যাট আছে। এর প্রায় ১৭৮টি আবাসিকেরা কিনে নিয়েছি।”
জমি বিক্রি-বাবদ কেআইটি-র একটি মোটা তহবিল ছিল। ভাড়ার ফ্ল্যাটের মতো বিভিন্ন খাতে টাকা ঢালার প্রয়োজনে সেই তহবিলও ভাঙতে ভাঙতে কমে গিয়েছে। ফলে, প্রশ্ন উঠেছে, ভাড়ার ফ্ল্যাটের আর্থিক বোঝার টাকা আসবে কোথা থেকে? কেআইটি-র কর্মী-সংখ্যা এখন প্রায় ৯০০। বেতন বাবদ বছরে লাগে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। কেআইটি-র ওএসডি লিয়াকত আলি বলেন, “আমাদের কিছু করার নেই। মহাকরণের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা উচিত নয়।” |