পুলিশি হেফাজতেই ধরা পড়েছে পেটের অসুখ। চিকিৎসা করানো হয়েছে। হাসপাতালে তিন দিন, দু’রাতের বিল ৩২ হাজার টাকা।
কে দেবে টাকা? তাই নিয়েই টানাপোড়েন সারদা মামলায় অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের সঙ্গে পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরের। দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা জানিয়েছেন, সরকারি হেফাজতে থাকার সময় চিকিৎসার খরচ পুলিশ-প্রশাসনেরই। তাঁর মক্কেলের পরিবারের ওই বিল মেটানোর দায় নেই। আইন অনুযায়ী, পুলিশ হেফাজতে কেউ অসুস্থ হলে তার পরিবার নিজের খরচে চিকিৎসা করানোর জন্য আদালতের কাছে আবেদন করতে পারে। দেবযানীর ক্ষেত্রে তাঁর পরিবার এমন কোনও আবেদন করেনি। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দিয়েছে, বিল মেটাবে না তারাও। দু’পক্ষেরই বক্তব্য, পুলিশ কেন দেবযানীকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালো, তা
তাদের জানা নেই। তাই এর দায় নিতে হবে পুলিশকেই।
পুলিশ কি বিল মেটাবে? বিধাননগরের পুলিশ কর্তারা মুখ খোলেননি। পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতেই নিউটাউন থানার লক-আপে অসুস্থ হয়ে পড়েন দেবযানী। রাতে তাঁকে বিধাননগর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসকরা জানান, দু’ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেবযানীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। পুলিশ জানিয়েছে, রাতে সুস্থ হননি দেবযানী। তাই শনিবার সকালে তাঁকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন দেবযানী। এই ক’দিনে তাঁর চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের দাবি। |
সল্টলেকের আদালতের বাইরে দেবযানী। —নিজস্ব চিত্র |
কিন্তু প্রশ্ন হল, শহরে এতগুলি সরকারি হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও দেবযানীকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হল কেন। পুলিশের একাংশের মধ্যেও এ নিয়ে ধন্দ আছে। এক তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, “পুলিশ হাজতে সুদীপ্ত সেন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দেবযানীর ক্ষেত্রে আলাদা ব্যবস্থা হল কেন, বুঝতে পারছি না।” পেটের অসুখের চিকিৎসায় দেবযানীকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া যেত বলে ওই কর্তার মত।
একই প্রশ্ন স্বাস্থ্য দফতরেরও। রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য উষ্মা গোপন না করেই বলেন, “দেবযানীকে কেন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হল, তার উত্তর কি আমাকে দিতে হবে? পুলিশকে জিজ্ঞাসা করুন, কেন তারা সরকারি হাসপাতালের পরিবর্তে বেসরকারি জায়গায় গেল!”
বিধাননগরের পুলিশ-কর্তাদের যুক্তি, দেবযানীর শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল না। একই সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তার দিকটিও মাথায় রাখতে হয়েছে। তাই সল্টলেকের ওই বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়েছে। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় দেবযানীকে। সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁকে নিয়ে বিধাননগর আদালতে পৌঁছয় পুলিশ। কেমন আছেন জানতে চাওয়া হলে দেবযানী বলেন, “ভাল আছি।” যদিও এজলাসের ভিতরেও তাঁকে বেশ অসুস্থই দেখিয়েছে। শুনানি চলাকালীন এজলাসের এক পাশে অভিযুক্তদের জন্য নির্ধারিত বেঞ্চে বসেছিলেন সবুজ-কালো সালোয়ার কামিজ পরা দেবযানী। মাঝেমধ্যে জল চেয়ে খেয়েছেন।
এ দিন আদালতে তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা জানান, হাসপাতাল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করা যায় কি না, আদালত সেটা খতিয়ে দেখতে বলেছিল। তা হলে কেন ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করা হল না, প্রশ্ন তোলেন অনির্বাণ। সরকারি আইনজীবী সাবির আলি জানান, হাসপাতাল থেকে সুস্থ থাকার সার্টিফিকেট পাওয়া গিয়েছে। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দেবযানীর জন্য জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী। পরে সেটি প্রত্যাহার করে নেন। এ দিন মোট তিনটি মামলা উঠেছিল দেবযানীর বিরুদ্ধে। সে সব ক’টিতেই জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।
এজলাস থেকে বেরিয়ে পুলিশ-কর্মীদের একটি পাখা জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলেন দেবযানী। কিন্তু পুলিশ সেই ব্যবস্থা করেনি। দেবযানীকে প্রথমে দমদম সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জেলারের ঘরেই দেবযানীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন জেলের চিকিৎসক। তার পর বিশেষ হাসপাতাল ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু পরে কারা-কর্তারা স্থির করেন, নিরাপত্তার কারণে দেবযানীকে আলিপুর মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়াই সমীচীন। রাত ন’টার সময় তাঁকে আলিপুরে আনা হয়। সেখানে একটি আলাদা সেলে রাখা হয়েছে তাঁকে। আজ, মঙ্গলবার দেবযানীকে বারুইপুর আদালতে হাজির করানো হবে। |