|
|
|
|
নগদ টাকার জোগান কম, বাজারে মন্দা
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় • নবদ্বীপ |
জামাইষষ্ঠীর পর্ব মিটলেই ব্যবসা-বাণিজ্যের বাজারে একটা মন্দাপর্ব আসে। গোটা বর্ষাকাল ঝিমিয়ে থাকে বাজার। ব্যবসায়ী মহলে বচ্ছরকার এই মন্দাকে ‘জ্যৈষ্ঠ মন্দা’ বা ‘আম মন্দা’ বলে ডাকা হয়। তার জন্য প্রস্তুতিও থাকে।
কিন্তু এ বছর বৈশাখ থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ বিয়ের ভরা মরসুম। সঙ্গে জামাইষষ্ঠী। সব মিলিয়ে বাংলার নতুন বছরের প্রথম বাণিজ্যিক মরসুমের দিকে তাকিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেখানেই আবাসন থেকে পর্যটন, বস্ত্র, পোশাক থেকে মুদিখানা। হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে কাঁচা সব্জির বাজার। প্রসাধন সামগ্রী থেকে ভোগ্যপণ্যপ্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য কমেছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহাও বলেন, “বাজার ধাক্কা খাওয়ার প্রধান কারণ, কিছু লগ্নি সংস্থাগুলির বিপর্যয়ের জের।” তিনি জানান, মানুষ নগদ টাকা জমা রাখেন একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে। কেউ বাড়ি তৈরি করেন, কেউ ছেলেমেয়েদের বিয়ে বা পড়াশোনার জন্য টাকা জমান। এ বার সেই টাকা যখন খোয়া যায়, তখন শুধু যে সেই উদ্দেশ্যটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই নয়, মানুষ অত্যন্ত সাবধানী হয়ে পড়ে। যেটুকু না হলে নয়, তার বাইরে সে একটা টাকাও ব্যয় করতে চায় না। বাজারে তার প্রভাব দারুণ ভাবে পড়ে। তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। খাওয়া-দাওয়া থেকে বিলাসদ্রব্য কেনাবেচা--সবেতেই মানুষ এখন অত্যন্ত হিসেবি। এর ফলে কেনাবেচা কমছে হু হু করে।” |
উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা |
• বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার আমানতকারীরা ধাক্কা খাওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারে।
• পঞ্চাশ শতাংশ ব্যবসা কমেছে, জানাচ্ছে শহরের পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন।
• মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ভিড় কমছে।
• পাইকারি বাজারে আসছেন না গ্রামের ছোট ব্যবসায়ীরা। |
|
নবদ্বীপ রেডিমেড গার্মেন্টস এজেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মোহন রায়ও বলছেন, “গত এক মাসে আমাদের ব্যবসা অন্তত ৫০ শতাংশ কমেছে। আমাদের ১৮০ জন সদস্য ব্যবসায়ী আছে। সদস্য নন এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যা আরও প্রায় ১৫০ জন। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ জুড়ে যে বিরাট কেনাবেচা, তার এমন দশা কেন হল, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।” নবদ্বীপের এই সব ব্যবসায়ীর বেশির ভাগেরই ছোট বড় কারখানা রয়েছে। যেখানে উৎপন্ন নানা দ্রব্য রাজ্যের সর্বত্র কেনাবেচা হয়। কার্যত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের মরসুমের লাভের টাকায় তাঁরা বর্ষাকাল জুড়ে পুজোর প্রস্তুতি সারেন।
প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র ব্যবসায়ী রাজেশ অগ্রবাল বলেন, “৫০ শতাংশ কেনাবেচা তো কমেছেই। বিয়ের মরসুমে নবদ্বীপের সংলগ্ন গ্রাম থেকে যে বিরাট সংখ্যক মধ্যবিত্ত ক্রেতারা আসতেন, এ বার তাঁরা নেই বললেই চলে। আবার এই সব গ্রামাঞ্চলের ছোট ছোট দোকানদার, যাঁরা আমাদের কাছ থেকে মাল কিনে ব্যবসা করেন, আসছেন না তাঁরাও।” রাজেশবাবুর কথায়, “গ্রাম বাংলায় ওই লগ্নি সংস্থাগুলির জমজমাট কারবার ছিল। এখন সেই সংস্থাগুলিই বিপাকে পড়ায় মানুষ রীতিমতো আশঙ্কিত।”
বাজারে নগদ অর্থের জোগান কমে যাওয়াতেই এই সমস্যা ঘটছে বলে মনে করেন নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা। তাঁর কথায়, “এক দিকে যেমন আমানতকারীরা সঞ্চয় খুইয়েছেন, তেমনই বিভিন্ন আর্থিক সংস্থায় কয়েক লক্ষ লোক এজেন্ট কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন, রাতারাতি সেই মানুষগুলো বেকার হয়ে গিয়েছেন। তার প্রভাব বাজারে আছড়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি কাটার সম্ভাবনা কম।”
নগদ টাকার প্রবাহ যে বাজারে অনেকটাই কমেছে, তা সমর্থন করেন নদিয়া জেলার বাস মালিক সমিতির অন্যতম কর্তা অসীম দত্তও। তাঁর কথায়, “ব্যবসায় প্রতিদিন যে নগদ টাকার লেনদেন হয়, তার ৩৫ শতাংশ কমেছে গত এক মাসে। খুব গরমে বা শীতে কিছুটা প্রভাব পড়ে চিরকালই। কিন্তু এ বারে যেটা ঘটেছে, তা আগে কখনও ঘটেনি। বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট, কর্মী, আমানতকারীরা ধাক্কা খাওয়ায় তার প্রভাবই ছড়িয়ে পড়ছে বাজারে। সবাই বসে গিয়েছে। সিমেন্ট, সারের মতো পণ্য আমদানির জন্য ট্রাকের চাহিদাও বেশ কম। সব মিলিয়ে ছবিটা ভাল না।” |
|
|
|
|
|