মাওবাদী আতঙ্কে পর্যটক নেই, উন্নয়ন থমকে নেতারহাটে
রাগে গজগজ করছিলেন জিপের চালক। নিজের মনে বিড়বিড়িয়ে বললেন, “বকওয়াস”—বাংলায়, মিথ্যে কথা।
তাঁর রাগের কারণ, নেতারহাটের বাস স্ট্যাণ্ডের সামনে লাইট পোস্টে লোহার চাকতিতে ইংরেজিতে লেখা একটি বাক্য—‘স্মাইল, দ্যাট ইউ আর অ্যাট নেতারহাট’। তর্জমা করলে তা দাঁড়ায়, ‘হাসুন। আপনি নেতারহাট এসেছেন।’
এখানেই আপত্তি ডালটনগঞ্জের জিপ চালক কুতুবুদ্দিনের। তাঁর কথায়,“ কে হাসবে! সকলেই আতঙ্কে রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাই হোক বা পর্যটক। ব্যবসা মার খাচ্ছে। বন বাংলোয় আগে রাত কাটাতে আসতেন পর্যটকরা। সারা রাত থাকার জন্য আলাদা ভাড়া পেতাম। এখন সূর্যাস্ত হওয়ার আগে এখান থেকে চলে যাওয়াই অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে।”
ফাঁকা শুনশান নেতারহাট বাস স্ট্যান্ডের চেহারাটা দেখলে তাঁর কথার অনেকটাই সত্যি বলে মনে হয়।
ঝাড়খণ্ডের অন্যতম ওই পর্যটন-কেন্দ্র অবস্থিত লাতেহারে। জেলাটি এ রাজ্যে ‘মাওবাদী দূর্গ’ বলেই পরিচিত। পরপর কয়েকটি মাও-নাশকতার ঘটনায় মিলেছে তারই প্রতিফলন।
আতঙ্কের ‘ছবি’ স্পষ্ট হল নেতারহাট পৌঁছনোর পরই। ঘড়িতে সকাল ১০টা। রাস্তায় কিন্তু দেখা মিলল না একজন পর্যটকেরও। জঙ্গলে অভিযান চালাতে তখনই বাস-বোঝাই সিআরপি জওয়ানরা পৌঁছলেন সেখানে। সবার হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র।
ফাঁকাই পড়ে রয়েছে এক সময়ের ব্যস্ত বাস স্ট্যান্ড। —নিজস্ব চিত্র
রাস্তার পাশে দুটি দোকান খোলা। এক দোকানদারের কথায়, “নেতারহাটের ব্যস্ততম এলাকা ছিল বাস স্ট্যাণ্ডটা। জঙ্গিদের ভয় তো আছেইযে কোনও সময় জওয়ানদের জেরার মুখেও পড়তে হয়। কথা বলতেই ভয় করে আজকাল। কে যে কার সঙ্গে রয়েছে বোঝা যায় না।”
অবিশ্বাস ছড়িয়েছে সব দিকেই। একে অন্যকে বিশ্বাস করতে ভয় পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। ভাঙন ধরেছে মাওবাদী সংগঠনেও।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, নেতারহাটে এখন বিক্ষুব্ধ মাও জঙ্গিদের প্রভাবই বেশি। জঙ্গলই তাদের যাতায়াতের ‘করিডর’। জঙ্গিদের হুঁশিয়ারিতে সন্ধ্যার পর জঙ্গলের কিছু জায়গায় যেতে ভয় পান এলাকার মানুষও। অন্ধকার নামলে ওই এলাকার রাস্তায় ঢুকতে হলে গাড়িতে জোরে গান বাজানো ‘বাধ্যতামূলক’। সেটা জঙ্গিদেরই অলিখিত ‘নির্দেশ’। পুলিশ জিপ, ট্রাকের সঙ্গে সাধারণ মানুষের গাড়ির তফাৎ বোঝাতেই তা মানতে হয় বাসিন্দাদের। না হলে যে কোনও সময় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ বা স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়ার ভয় থাকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, নেতারহাটের গ্রামে বা জঙ্গলে কাজ করতে গেলে জঙ্গিদের ‘নজরানা’ দিতেই হবে। সরকারি, বেসরকারি—কোনও সংস্থারই ছাড় নেই। টাকা দিতে অস্বীকার করলে রেহাই নেই।
জঙ্গিদের ‘জুলুমবাজি’তে কার্যত থমকে গিয়েছে নেতারহাট এবং তার সংলগ্ন এলাকার উন্নয়নের কাজ।
এক সময় শীত পড়লেই সেখানকার নীল পাহাড়, সবুজ জঙ্গলে ভিড় জমাতেন পর্যটকরা। পুরনো সেই সব সোনালি দিনের স্মৃতি নিয়েই আপাতত দিন কাটাচ্ছে নেতারহাট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.