বিশ্ব বাজারের হাত ধরে ভারতে টানা পড়ছে
সোনা-রুপোর দাম। সোমবার দেশ জুড়ে লগ্নিকারীদের বিক্রির চাপে তাদের দর নেমেছে প্রায় আড়াই বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। এ দিকে সোনা আমদানির খরচ সামলাতে উদ্বিগ্ন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এ দিনই আমদানি কমাতে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
কলকাতার বাজারে এ দিন প্রতি ১০ গ্রাম গয়নার সোনার দাম গত শনিবারের থেকে ৩২০ টাকা কমে হয় ২৫,১০০ টাকা। ২৪ ক্যারাট পাকা সোনা ৩৪০ টাকা কমে ২৬,৪৫৫ টাকা। অন্য দিকে, প্রতি কিলোগ্রাম রুপোর বাট এবং খুচরো রুপোর দাম ১ হাজার টাকা করে কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪২,৬০০ এবং ৪২,৭০০ টাকা। মুম্বইয়ে গয়নার সোনা ২২০ টাকা কমে হয়েছে ২৫,৯০০ টাকা। দিল্লিতে ৩৩০ টাকা কমে ২৬,১৭০ টাকা। মুম্বইয়ে রুপো কেজিতে পড়েছে ৮৩০ টাকা, দিল্লিতে ১৫৩০ টাকা।
বিশ্ব বাজারে সোনা-রুপোর দাম গত ৮ দিন ধরে নাগাড়ে পড়ছে। এই ক’দিনে সোনা পড়েছে ১.৫%, রুপো ৮.৬%। আন্তর্জাতিক বাজারের উপর ভিত্তি করেই ভারতে এই ধাতু দু’টির দাম ওঠা-নামা করে। লন্ডনের বাজারে আউন্স পিছু সোনা সোমবার ঠেকেছে ১৩৩৮.৮৫ ডলারে আর রুপো ২০.৩৩ ডলারে। ২০০৯-এর মার্চের পরে এক ধাক্কায় দাম এতটা পড়তে দেখা যায়নি।
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ভারতে সোনা আমদানির উপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর জেরে বাজারে সোনার চাহিদা কমবে বলেই মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। এ দিনও চিদম্বরম বলেন, “প্রয়োজনে সোনা আমদানিতে আরও বিধিনিষেধ বসবে। তবে ভারতবাসীর প্রতি আমার আর্জি, আবেগের বশে সোনা কেনা কমান।”
কিন্তু কেন কমছে সোনার দাম? বিশেষজ্ঞদের মতে, শেয়ার বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠায় বহু লগ্নিকারী সোনার বদলে বিনিয়োগ করছেন শেয়ারে। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাছরাজ বামালুয়ার মতে, “গত ১২ বছর ধরে টানা বেড়েছে সোনা ও রুপোর দাম। দাম পড়তে পারে আন্দাজ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় মাপের লগ্নিকারী এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকেই সোনা বিক্রি করে বাজার থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। তার জেরেই বিশ্ব বাজারে পড়তে থাকে এর দাম।”
আন্তর্জাতিক বাজারের হাত ধরে ভারতেও সোনার দাম কমতে থাকায় এপ্রিলে চাহিদা এখানে দ্রুত বাড়ে। ফলে বাড়ে আমদানিও। ২০১২-র এপ্রিল মাসে যেখানে ভারতে সোনা আমদানি হয়েছিল ৭০ টন সেখানে ২০১৩-র এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮ টন।
তবে এই মুহূর্তে দেশে সোনার চাহিদা খানিকটা কমতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বামালুয়া। তাঁর দাবি, “১২ বছর ধরে দাম বাড়তে থাকায় অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সোনা কিনতে পারেননি। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে দাম কিছু পড়ার পর তাঁরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সোনা কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলেই চাহিদা বেড়ে যায়। আর তার জেরে এখন পুঁজিতে টান পড়েছে। তা ছাড়া অনেকেই ভাবছেন, দর আরও পড়তে পারে। তাই এখন আর কেনার দরকার নেই।” সোনার বাজার সূত্রের খবর, চাহিদা কমতে থাকায় এপ্রিলে আমদানি করা সোনার অনেকটাই বিক্রি হয়নি। ভারতে সোনার দাম কমার এটাও অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে।
দাম কি আরও পড়বে? এর জবাব অবশ্য এই মুহূর্তে কেউই দিতে পারছেন না। স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি এবং গয়না ব্যবসায়ী বাবলু দে বলেন, “বাজার চূড়ান্ত অনিশ্চিত। অন্তত আরও দিন সাতেক না-গেলে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
ডলারে টাকাও পড়েছে ২৩ পয়সা। দিনের শেষে ১ ডলার ছিল ৫৫.১১ টাকা, যা গত পাঁচ মাসে সবচেয়ে নীচে।
|