|
|
|
|
দাম আর চোরাকারবার বাড়ার আশঙ্কা |
সোনা আমদানিতে
রাশ টানছে ব্যাঙ্ক
প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী • কলকাতা |
|
|
সিদ্ধান্ত আগেই ঘোষণা করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ বার সোনা আমদানির উপর রাশ টানতে শুরু করল বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। নতুন করে আর আমদানির বরাত না-নেওয়ার কথা ডিলারদের জানিয়ে দিয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। গয়না ব্যবসায়ীদের মতে, বাকি ব্যাঙ্কগুলিরও ওই একই পথে হাঁটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তাই অক্ষয় তৃতীয়ার মুখে তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। আশঙ্কা, এ ভাবে আমদানিতে রাশ টানলে বাজারে সোনার জোগান কমবে। ফলে পুরোদস্তুর সম্ভাবনা রয়েছে দাম বাড়ার। বাড়তে পারে চোরা পথে আমদানিও। যার কোনওটিই ব্যবসার পক্ষে ভাল হবে না স্পষ্ট জানাচ্ছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ হল মার্কিং সেন্টারের সভাপতি এবং রাজ্যে সোনার অন্যতম ডিলার হর্ষদ আজমেরা জানান, “এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের কাছে সোনা আমদানির বরাত দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বাতিল করে দিয়েছে। জানিয়েছে, নতুন করে আর বরাত নেওয়া হবে না। এখন সব ব্যাঙ্কই একই পথে হাঁটবে। তাই দিন দশেক পর থেকেই বাজারে সোনার জোগান কমার সমূহ সম্ভাবনা।”
ভারতে বছরে সোনা আমদানি হয় প্রায় ৯০০ টন। শুধু ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই হয় প্রায় ৮০%। এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক-সহ ১৮টি ব্যাঙ্ক এই কাজ করে। এ ছাড়াও সোনা আমদানি করে মিনারেল অ্যান্ড মেটাল ট্রেডিং কর্পোরেশন, স্টেট ট্রেডিং কর্পোরেশনের মতো পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা।
কিন্তু দেশ থেকে ডলার বেরিয়ে যাওয়ার তুলনায় এখানে তা আসার ঘাটতি (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট) কমাতে এই আমদানির উপর লাগাম টানার কথা গত ঋণনীতিতেই ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সে দিন এ প্রসঙ্গে শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও বলেন, ব্যাঙ্কগুলিকে সোনার আমদানিতে রাশ টানতে বলা হবে। আমদানি করতে হবে শুধু সেই সোনাই, যা রফতানির গয়না গড়ার কাজে ব্যবহৃত হবে। এ নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি নির্দেশিকা জারি করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এত দিন ডিলারদের কাছ থেকে বরাত নিয়ে সোনা আমদানি করত ব্যাঙ্কগুলি। প্রতি ‘লটে’ অন্তত ১০০ কেজি সোনা আমদানি করত তারা। যাতে পরিবহণ-সহ বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে মুনাফার মুখ দেখা সম্ভব হয়। কিন্তু তেমনই আমদানির জন্য আগাম দাম মেটাতে হত না ব্যাঙ্কগুলিকে। শুধু ব্যাঙ্ক গ্যারান্টিতেই কাজ হত। এর পর ব্যাঙ্ক থেকে সোনা তোলার সময় দাম মেটাতেন ডিলাররা। সেই টাকায় বিদেশি বিক্রেতাকে দাম মেটাত ব্যাঙ্কও। এই ব্যবসায় ডিলারদের কাছ থেকে ব্যাঙ্কের প্রাপ্তি ছিল ০.১% কমিশন।
কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি এ ভাবে আমদানি বন্ধ করলে দেশে সোনার জোগান কমতে বাধ্য বলে মনে করছেন গয়না ব্যবসায়ীরা। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাছরাজ বামালুয়া বলেন, “এ বার নগদ টাকা ব্যাঙ্কে জমা রেখে ডিলার বা গয়না ব্যবসায়ীদের সোনা আমদানি করতে হবে। কিন্তু অন্তত ১০০ কেজি সোনা আমদানি করা সাধারণ গয়না ব্যবসায়ীদের সাধ্য নয়। ফলে সব থেকে বেশি মার খাবেন তাঁরাই।” তাঁর আরও আশঙ্কা, “শুল্ক বাড়ায় এমনিতেই চোরা পথে আমদানি বেড়েছে। এখন আরও বাড়বে।”
এমনিতে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে সোনার দর ওঠে-নামে। কিন্তু ব্যাঙ্ক আমদানি করলে, স্রেফ জোগানে ঘাটতির কারণে এমনিতেই দেশে সোনার দাম চড়বে বলে আশঙ্কা করছেন জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের সহ-সভাপতি পঙ্কজ পারেখ। তাঁর কথায়, “এ ভাবে চললে, দাম বাড়তে বাধ্য।” স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে-ও বলছেন, “কেন্দ্র সিদ্ধান্ত না-বদলালে, বিশ্ব বাজারের ইন্ধন ছাড়াই সোনার দর চড়তে পারে ভারতে।” তবে তাঁর বিশ্বাস, এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিপুল সংখ্যক মানুষের কথা বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলাবে কেন্দ্র। |
|
|
|
|
|