কোনও অনুষ্ঠানকে অহেতুক দীর্ঘায়িত করার স্বাভাবিক বাঙালি প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এল রাজ্য সরকারের বঙ্গসম্মান প্রদানের আসর। মোট ২৯ জনের হাতে পুরস্কার (এক জন অনুপস্থিত), তার আগে বক্তৃতা এবং শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হল মাত্র দেড় ঘণ্টায়। গোড়া থেকে এটাই চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর তত্ত্বাবধানেই সোমবার বিকেল পাঁচটায় শুরু হয়ে সাড়ে ছ’টায় শেষ হয়ে যায় অনুষ্ঠান। |
প্রবীণ অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের হাতে বঙ্গবিভূষণ সম্মান তুলে দিচ্ছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।
পাশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার, সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে। ছবি: সুদীপ আচার্য |
এক দিকে রাজ্যপালের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ভূয়সী প্রশংসা, অন্য দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে তাঁর নিজের সরকারকে আরও কাজ করার সময় দেওয়ার আর্জি বঙ্গসম্মান পুরস্কারের আসরে মিলেমিশে ছিল এই রাজনৈতিক আলেখ্য। মমতা ক্ষমতায় আসার পরে এই নিয়ে তৃতীয় বার বঙ্গবিভূষণ ও বঙ্গভূষণ পুরস্কার দেওয়া হল সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের অধিকারীদের। মোট ৩০ জন পুরস্কার পেলেন এ বার। বঙ্গবিভূষণ সম্মান পেলেন ২৪ জন আর বঙ্গভূষণে ভূষিতের সংখ্যা ৬। মঞ্চে মোট ২৮ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হল। আর এক জনের বদলে তাঁর পরিবারের সদস্যের হাতে দেওয়া হল সম্মান-স্মারক। বঙ্গবিভূষণ এবং বঙ্গভূষণের সম্মানমূল্য যথাক্রমে ১ লক্ষ এবং ৫০ হাজার টাকা। |
বঙ্গসম্মান প্রাপকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল। সোমবার, সায়েন্স সিটিতে। —নিজস্ব চিত্র |
এ বছরের পুরস্কার-প্রাপকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা বাংলার সর্বোচ্চ সম্মান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই প্রতিভারা বাংলা তথা ভারতকে গর্বিত করেছেন।” পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে বসন্তকুমার বিড়লা এবং লিয়েন্ডার পেজ ছাড়া বাকিরা এ দিন উপস্থিত ছিলেন। লিয়েন্ডারের পুরস্কারটি তুলে দেওয়া হয় তাঁর মায়ের হাতে। |
বঙ্গবিভূষণ। মুখ্যমন্ত্রীর থেকে পুরস্কার নেওয়ার পর সৌরভ। ছবি: সুদীপ আচার্য |
বিশিষ্টদের হাতে এ দিনের অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। অনুষ্ঠানে একাধিক বার সরকারের প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনবদ্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার যে পুরস্কার চালু করেছেন, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের ধন্যবাদ প্রাপ্য।” ক্ষমতায় থাকার এই দু’বছরে সরকার কতটা জনতামুখী কাজ করতে চাইছে, কতটা কাজ থেকে শিখছে এবং কতটা নম্র থাকার চেষ্টা করছে তা বোঝাতে এ দিন পুরস্কারের মঞ্চকে ব্যবহার করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “গণতন্ত্রের হাত ধরে বাংলায় পরিবর্তনের সরকার জন্ম নিয়েছিল। এই মা-মাটি যেন এই সরকারকে আরও কাজের সুযোগ দেয়। মানুষ যত কাজ করে, তত শেখে। কাজ শুরু হয়েছে, শেষ হয়নি।”
|